নিষিদ্ধ সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম-স্বাধীন (ULFA-I) দাবি করেছে, ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী মিয়ানমারে তাদের মোবাইল ক্যাম্পগুলোতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় উলফা-আইয়ের তিন ঊর্ধ্বতন নেতা নিহত হয়েছেন বলে তাদের দাবি। তবে ভারতীয় সেনাবাহিনী এমন কোনো অভিযানের কথা অস্বীকার করেছে।
উলফা-আইয়ের দাবি ও হতাহতের বিবরণ: উলফা-আইয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রবিবার ভোর ২টা থেকে ৪টার মধ্যে এই হামলা চালানো হয়। তাদের দাবি, প্রায় ১৫০টিরও বেশি ইসরায়েলি ও ফরাসি নির্মিত ড্রোন এতে ব্যবহার করা হয়েছে। হামলায় নিহত তিন নেতা হলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল নয়ন আসাম, ব্রিগেডিয়ার গণেশ আসাম এবং কর্নেল প্রদীপ আসাম। উলফা-আই আরও দাবি করেছে, নয়ন আসামের শেষকৃত্য চলার সময় দ্বিতীয় দফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় গণেশ আসাম ও প্রদীপ আসাম নিহত হন। হামলায় আরও ১৯ জন আহত হয়েছেন বলেও জানানো হয়েছে।
হামলার স্থান ও অন্যান্য গোষ্ঠী: উলফা-আইয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, নাগাল্যান্ডের লংওয়া থেকে অরুণাচল প্রদেশের পাংসাও পাসের মধ্যবর্তী ভারত-মিয়ানমার সীমান্তের কাছে এই হামলাগুলো চালানো হয়েছে। তারা আরও দাবি করেছে, মণিপুরের বিপ্লবী পিপলস ফ্রন্ট (আরপিএফ)-এর কিছু ক্যাম্পও এই হামলার শিকার হয়েছে।
ভারতের সেনাবাহিনীর অস্বীকার ও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য: ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এই অভিযোগ স্পষ্টভাবে অস্বীকার করা হয়েছে। গুয়াহাটির প্রতিরক্ষা মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহেন্দ্র রাওয়াত সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে এমন কোনো অভিযানের তথ্য নেই।” আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাও এই বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বলে নিশ্চিত করেছেন এবং জানিয়েছেন যে আসাম পুলিশ এই ঘটনায় জড়িত নয় বা আসামের মাটি থেকে কোনো হামলা চালানো হয়নি।
নিরাপত্তা সূত্রের বিশ্লেষণ ও মিয়ানমারের অস্থিরতা: নিরাপত্তা সূত্রের কিছু কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, উলফা-আই ক্যাম্পে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তবে তারা মনে করছেন, এটি মিয়ানমারের চলমান গৃহযুদ্ধের কারণেই হয়ে থাকতে পারে। মিয়ানমারে সামরিক জান্তা ও বিভিন্ন জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাতের ফলে অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং সীমান্ত এলাকায় নিয়ন্ত্রণ ভেঙে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে, উলফা-আই সহ বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ক্যাম্পে হামলা মিয়ানমারের নিজস্ব সশস্ত্র গোষ্ঠী বা এমনকি মিয়ানমার সেনাবাহিনীও ঘটাতে পারে, ভারতীয় বাহিনীর দ্বারা নয়।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও ভারতের উদ্বেগ: ১৯৮০-এর দশক থেকেই উত্তর-পূর্ব ভারতের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান এড়াতে মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকাকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই মিয়ানমারের ভূমি ব্যবহার করে উত্তর-পূর্ব ভারতে হামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে।
পরেশ বড়ুয়ার হুঁশিয়ারি: উলফা-আইয়ের প্রধান পরেশ বড়ুয়া দাবি করেছেন, এই হামলার “উপযুক্ত জবাব” দেওয়া হবে। তবে ভারতের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক নিশ্চিতকরণ বা অস্বীকার ছাড়া বিষয়টি এখনও ধোঁয়াশায় রয়েছে।
সূত্রঃ এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টুডে