৩৪ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। সিএনএনের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, তিনি শহরের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম ও প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র, পাশাপাশি সবচেয়ে কম বয়সী নির্বাচিত মেয়র হিসেবে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন।
শ্রমজীবী মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, বাড়িভাড়া স্থিতিশীল রাখা, গণপরিবহন বিনামূল্যে করা ও সর্বজনীন শিশু যত্ন নিশ্চিত করার মতো প্রতিশ্রুতিতে মামদানি দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
এই নির্বাচনে তিনি পরাজিত করেছেন সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো ও রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে। এর আগে ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতেও কুয়োমোকে হারিয়েছিলেন তিনি।
মামদানির এই জয়কে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রগতিশীল রাজনীতির বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মামদানিকে ‘কমিউনিস্ট’ আখ্যা দিয়ে হুমকি দিয়ে জানিয়েছেন, তিনি জিতলে নিউইয়র্ক সিটির ফেডারেল তহবিল বন্ধ করে দেবেন।
একই সঙ্গে ভার্জিনিয়া ও নিউ জার্সির গভর্নর নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের জয়ের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। আর ক্যালিফোর্নিয়ায় কংগ্রেসীয় আসনগুলো ডেমোক্র্যাটদের অনুকূলে পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব নিয়ে ভোট চলছে।
শৈশব ও পরিবার
জোহরান মামদানি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৯১ সালের ১৮ অক্টোবর, উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায়। তার মা প্রখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার, আর বাবা মাহমুদ মামদানি একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী, যিনি ভারতের মাটিতে জন্ম নিলেও উগান্ডার নাগরিক।
মাত্র পাঁচ বছর বয়সে পরিবারসহ দক্ষিণ আফ্রিকায় যান জোহরান, এরপর সাত বছর বয়সে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন নিউইয়র্কে। ছোটবেলা থেকেই তিনি বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও অভিবাসী জীবনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন, যা পরে তার রাজনৈতিক চিন্তাধারায় গভীর প্রভাব ফেলে।
রাজনীতিতে উত্থান
২০২০ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে তিনি নির্বাচিত হন নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য হিসেবে। এখান থেকেই শুরু হয় তার রাজনৈতিক উত্থান। সাধারণ মানুষের সমস্যা, বিশেষত ভাড়া, গণপরিবহন ও শিক্ষা নিয়ে সরাসরি কাজ করে তিনি দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
২০২৪ সালে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন—তখনো তিনি তুলনামূলক অপরিচিত মুখ। কিন্তু মাত্র এক বছরের মধ্যেই তিনি নিউইয়র্কের রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত প্রার্থী হয়ে ওঠেন।
প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও জনপ্রিয়তা
এই নির্বাচনে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া। প্রথমে বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিলেও জনসমর্থনের অভাবে সরে দাঁড়ান। যদিও মামদানি তরুণ ও তুলনামূলক অনভিজ্ঞ, তার প্রচারাভিযান ছিল জনমানুষের ইস্যুতে সরাসরি সংযুক্ত। তিনি বারবার বলেছেন, বিশ্ব বদলাতে বয়স বা অভিজ্ঞতা নয়, প্রয়োজন হয় ইচ্ছা আর সততা।
তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে ছিল— • স্থায়ী ভাড়ার সীমা নির্ধারণ • গণপরিবহন বিনামূল্যে করা • শিশু যত্নের সার্বজনীন সুযোগ • ধনীদের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করে সামাজিক কল্যাণে ব্যয় এই প্রতিশ্রুতিগুলো শহরের শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে দ্রুত সাড়া ফেলে দেয়।

নিউ ইয়র্কের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভুত সিটি মেয়র জোহরান মামদা
আন্তর্জাতিক ইস্যুতে অবস্থান
জোহরান মামদানি শুধু অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেই নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও সরব। তিনি গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার। তার দাবি, গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত নেতানিয়াহু নিউইয়র্কে এলে তাকে গ্রেপ্তার করা উচিত।
এমন অবস্থানের কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে তার সমালোচনা করেন এবং হুমকি দেন, মামদানি জিতলে নিউইয়র্কের ফেডারেল তহবিল বন্ধ করে দেবেন। কিন্তু এই বক্তব্য উল্টো মামদানির জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দেয়।
সূত্র: বিবিসি, সিএনএন




