ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে চান টিউলিপ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অনুরোধ জানিয়ে তাকে চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের এমপি এবং সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক। চিঠিতে টিউলিপ বলেছেন, তার বিরুদ্ধে কথিত দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে যে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হয়েছে, তা মীমাংসা করতে চান তিনি।

টিউলিপ সিদ্দিকের আরও একটি পরিচয়— তিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি। গত বছর ৫ আগস্ট শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন ঘটে, সে সময় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমারের নেতৃত্বধীন সরকারের নগর উন্নয়ন ও ট্রেজারি বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন টিউলিপ। ২০২৪ সালের নির্বাচনে জিতে মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েছিলেন তিনি।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতির অনুসন্ধানে নামে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন সংস্থা দুদক। প্রাথমিক অনুসন্ধানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে টিউলিপের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগের অনুসন্ধান এখনও চলছে।

এছাড়া শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠজনদের কাছ থেকে উপহার হিসেবে লন্ডনে একটি ফ্ল্যাট নিয়েছেন বলেও অভিযোগ ওঠে টিউলিপের বিরুদ্ধে। তার সম্পদ বিবরণীতেও কিংস ক্রস এলাকার ওই ফ্ল্যাটটির নাম রয়েছে। তবে টিউলিপ বলেছেন যে ফ্ল্যাটটি তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে পিতা-মাতার কাছ থেকে পেয়েছিলেন এবং এটির উৎস সম্পর্কে তিনি জানতেন না। যুক্তরাজ্যের দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা তার এই স্বীকারোক্তি মেনে নিয়েছে, কিন্তু এই নিয়ে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গণে যে সমালোচনা শুরু হয়েছিল, তার জেরে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হন টিউলিপ। বর্তমানে তিনি শুধুই একজন এমপি।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেওয়া চিঠিতে টিউলিপ লিখেছেন, “আমি যুক্তরাজ্যের একজন নাগরিক, লন্ডনে জন্মেছি এবং গত এক দশক ধরে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট এলাকার বাসিন্দাদের প্রতিনিধিত্ব করছি।”

“বাংলাদেশে আমার কোনো সম্পত্তি নেই এবং সেখানে কোনো সম্পত্তি বা বাণিজ্য করার কোনো আগ্রহ বা পরিকল্পনা আমার ছিলো না, এখনও নেই। আমি বাংলাদেশকে হৃদয় দিয়ে ভালবাসি, কিন্তু দেশটির আমার জন্মভূমি নয়। আমি যুক্তরাজ্যেই বড় হয়েছি, বেড়ে উঠেছি এবং নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করেছি।”

“আমি দুদকের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার করতে চেয়েছি। লন্ডনে আমার আইনজীবীরা এ ইস্যুতে দুদকের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে কিন্তু দুদক আমার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে চায়নি। তারা আমাকে তলব করে ঢাকার যে ঠিকানায় তারা চিঠি পাঠাচ্ছে, সেটিও সঠিক নয়।

“এই যে একটি অলীক অনুসন্ধান দুদক শুরু করেছে— তার প্রতিটি পদক্ষেপ মিডিয়ার সামনে প্রকাশ করা হচ্ছে এবং তা করা হচ্ছে আমার লিগ্যাল টিমের সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ না করেই।”

“আপনি যুক্তরাজ্য সফরে আসছেন। আমি আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আগ্রহী। আমার সঙ্গে আমার মায়ের বোন ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্ক নিয়ে যেসব ভুল ধারণা বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের বরাতে ছড়িয়ে পড়েছে, আমি আশাবাদী যে আপনার সঙ্গে আমার সাক্ষাতের পর সেসব দূর হবে।”

প্রসঙ্গত, রাজা চার্লসের আমন্ত্রণে আগামীকাল ৯ জুন চারদিনের এক সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে রাজা এবং প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমারের সঙ্গে তার সাক্ষাতের কথা রয়েছে।

Tags :

News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

 People’s Agenda

Quick Links

Copyrights are reserved by NE News © 2025, Jun 15