ইউনূস কেন সরে যেতে চান?

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকারের দশম মাসে এসে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পর উল্লাসের মধ্যে রাজনীতিতে হঠাৎ করে অনেক ‘প্রশ্ন’, ‘কিন্তু’ আর ‘যদি’র ছড়াছড়ি। বলা হচ্ছে, সরকার প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস সরে যাওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিন্তু এই প্রশ্ন কেন- সেই বিষয়টি সরকার বা অন্য কোনো পক্ষ থেকে খোলাসা করা হচ্ছে না।

প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দুই শীর্ষ নেতাকে যে কথা বলেছেন, তা বিবিসি বাংলার কাছে তুলে ধরেছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সেই বক্তব্যের সার কথা হচ্ছে, তিনি কাজ করতে পারছেন না। যেভাবে একের পর এক আন্দোলন হচ্ছে, তাকে ‘জিম্মি’ করা হচ্ছে।

প্রশ্ন হলো- গত সাড়ে ৯ মাসে প্রধান উপদেষ্টা বা সরকার আসলে কী কী কাজ করতে পারেননি।

ঠিক কোন কাজে বাধা পেয়েছেন এই প্রশ্ন শুনে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, “আমি এই প্রশ্নের কোনো জবাব দেবো না।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মামুন আল মোস্তফা একই প্রশ্নে বলেন, “আমি তো এখন পর্যন্ত সরকার করতে চেয়েছে কিন্তু বাধার কারণে পারেনি, এমন কিছু দেখিনি। কেবল মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহায়তা পাঠাতে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মানবিক করিডোর গঠন আর চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশি ব্যবস্থাপনায় দেওয়ার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনা ছাড়া আর কোনো ক্ষেত্রে সরকারের বিরোধিতা চোখে পড়েনি।”

তবে মানবিক করিডোর নিয়ে সরকারের পিছু হটার বিষয়টি স্পষ্ট। চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশি ব্যবস্থাপনায় দেওয়ার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা এবং পরে তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জোরাল যুক্তি রেখেছেন। তাদের দাবি, এই উদ্যোগ বন্দর ব্যবস্থাপনাকে আরও কার্যকর করবে, এর প্রতিক্রিয়ায় বাড়বে রপ্তানি, সুযোগ তৈরি হবে কর্মসংস্থানের।

এ নিয়ে পাল্টা যেসব বক্তব্য আসছে সেটি হলো- অন্তর্বর্তী সরকারের এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার আছে কি না। তার জবাবও প্রেস সচিব দিয়েছেন। বলেছেন, ‘তাদের সব ম্যান্ডেট আছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মাহবুবুর রহমান অবশ্য বলেছেন, “করিডোর ও বন্দর ব্যবস্থাপনা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কিছু নেই। সরকারের উচিত বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়গুলো দৃশ্যমান করা। কিন্তু এগুলো না করে তারা অপ্রয়োজনীয় কাজগুলোতে মনোযোগ দেওয়াতে সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিরোধ তৈরি হয়েছে।”

বাংলা একাডেমির সভাপতি আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, “এনারা নির্বাচন করার চেষ্টা করতে পারে। অন্য কিছু করতে গেলে সেটা দেশের জন্য কল্যাণকর হবে না। সরকারের বিদেশিদের কাছে চট্টগ্রাম বন্দর দেওয়া একেবারই অনুচিত হবে।”

সরকার কী কী করেছে আর করতে চেয়েছে

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আরোহণের ৯ মাসে উচ্চ আদালত থেকে শুরু করে বিচারিক আদালত, জন প্রশাসন, পুলিশ- সব জায়গায় ব্যাপক রদবদল করেছে। সরকার ক্ষমতায় আরোহণের আগেই সংসদ ভেঙে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর সরকার প্রথমে সিটি করপোরেশন, পরে উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভা ভেঙে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ করেছে।

বর্তমান সরকার সংস্কারের কথা বলছে। এজন্য ১১টি কমিশন গঠন হয়েছে, এর মধ্যে ৬টি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, বাকি ৫টি কমিশনের কাজ চলমান। যে ছয়টি কমিশন প্রতিবেদন দিয়েছে, তার মধ্যে কেবল নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের পর গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি হেফাজতে ইসলামের তরফে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। আন্দোলন, প্রয়োজনে ‘যুদ্ধের’ হুমকি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকার পাল্টা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি, এই কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করতেই হবে, এমন কোনো মনোভাবও দেখানো হয়নি।

সরকারের আরেকটি সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক বেশি আলোচনা হচ্ছে, সেটি হলো বঙ্গোপসাগরের দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতে বছরে ৯ মাসের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে নানা পক্ষ থেকে সরকারের সমালোচনা করা হলেও সরকারকে খুব বেশি বাধার মুখে পড়তে হয়েছে, এমন নয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের বড় সিদ্ধান্তগুলোর একটি ছিল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা। সরকারকে সমর্থন করা এনসিপির ডাকে তিন দিন কর্মসূচি পালনের মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরে দলটির নিবন্ধনও স্থগিত হয়েছে।

দাবির বহর লম্বা

এই সাড়ে নয় মাসে দাবির বহর ছিল লম্বা। পরীক্ষা ছাড়া পাস, ব্যাটারির রিকশা অবাধে চলতে দেওয়ার সুযোগ দান, ঢাকার তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপান্তর, প্রাথমিক শিক্ষার জাতীয়করণ, নিয়োগ বাতিলের প্রতিবাদকারী শিক্ষকদের অবস্থান, পোশাক শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ, ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের পর চাকরিচ্যুত জওয়ানদের পুনর্নিয়োগ, সশস্ত্রবাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্যদের আবার নিয়োগের দাবিসহ অসংখ্য আন্দোলন হয়েছে ঢাকার সড়ক আটকে।

এসব দাবির মধ্যে কেবল সশস্ত্রবাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্যদের পুনর্নিয়োগের দাবির বিষয়ে সেনা সদর থেকে প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে। এখানে সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। বাকি বিষয়গুলোর মধ্যে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, পোশাক শ্রমিকদের বকেয়া দাবি পরিশোধ বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়।

সরকার চাপে আছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর বিলুপ্তির আদেশ দিয়ে। সংস্থাটি বিলুপ্ত করে দুটি আলাদা শাখা করতে চায়। কিন্তু এনবিআরের কর্মীরা কলম বিরতির পর এবার অসহযোগের ডাক দিয়েছেন। এতে সরকারি কোষাগারে অর্থের টান আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর কারণ, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে এনবিআর এমনিতেই লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে আছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় অবশ্য বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, এনবিআর যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে। গত ১২ মে যে অধ্যাদেশ জারি হয়েছিল, সেটি সংশোধন হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মাহবুবুর রহমান বলেছেন, “সরকার যেভাবে কাজ করছে, তাতে জনগণের মনে হয়েছে এই সরকার দীর্ঘদিন থাকবে। সে জন্যই এত দাবি দাওয়া।”

তিনি বলেন, “সরকারের বলা উচিত ছিল, আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আমরা এভাবে দাবি-দাওয়া পূরণ করতে পারি না। দাবি-দাওয়া পূরণ করলেও নির্বাচিত সরকার করবে।”

বাংলা একাডেমির সভাপতি আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, “ইউনূস সরকার তো নির্বাচন করার মধ্যে তাদের জায়গা সীমাবদ্ধ রাখেনি। কমিশন গঠন করা হয়েছে বিশেষজ্ঞ দিয়ে, যারা কীভাবে দেশ গঠন করবে, এগুলো নিয়ে প্রস্তাব দিচ্ছে। এগুলো তো অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয় নয়।… জাতি গঠন, রাষ্ট্র গঠন এটা ইউনূস সাহেবদের দায়িত্ব না।”

ইশরাক নিয়ে ঝামেলা কেন?

বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানোর দাবিতে দিনের পর দিন সড়কে অবস্থানের কারণে তীব্র যানজটে ভুগছে মানুষ।

এখানে সরকারের আইনি বাধ্যবাধকতাও আছে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর ইশরাক মামলা করেছিলেন নির্বাচন বাতিল ও পুনর্নির্বাচনের দাবিতে। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি আর্জি পাল্টে তাকে মেয়র করার আবেদন করেন। গত ২৭ মার্চ নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দেয়। ফলে শপথ পড়ানোর আইনি বাধ্যবাধকতা ছিল।

ট্রাইব্যুনালের এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন মামুনুর রশিদ নামে সিটি করপোরেশনের এক বাসিন্দা। সেই আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়েছে বৃহস্পতিবার।

ইশরাক প্রশ্ন তুলেছেন, আদালত তার পক্ষে রায় দিয়েছে, তাকে কেন শপথ পড়ানো হবে না? আদালতের রায় পেয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেন শপথ নিয়েছেন গত ৩ নভেম্বর।

রাজপথে আছে বিএনপি সমর্থক ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলও। তারা তাদের দলের দুই জন নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য ও জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যায় দায়ীদের গ্রেপ্তারের দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছে। এই দাবিতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা ঘেরাওয়ের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। তবে ইশরাক বা ছাত্রদল বা অন্য কোনো সংগঠন রাজপথের কোনো কর্মসূচি করিডোর বা চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে দেয়নি।

ডিসেম্বরে নির্বাচন দাবিই কি তবে প্রধান বিষয়?

বিএনপি চাপ দিচ্ছে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে। কিন্তু সরকার যে এতে রাজি নয়, এমনটি বলার সুযোগ কিন্তু নেই। এর কারণ হলো, প্রধান উপদেষ্টা বহুবার বলেছেন, তারা ডিসেম্বর থেকে পরের বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন দিতে চান।

তার অবস্থান হলো, দলগুলো সীমিত পরিসরে সংস্কার চাইলে ভোট হবে ডিসেম্বরের মধ্যে আর বড় পরিসরে হলে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে।

প্রধান উপদেষ্টা ২০২৪ সালের ২৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছিলেন, “কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন।”

সেই ভাষণে তিনি এমনও বলেছিলেন, “আমরা ক্রমাগতভাবে সবাইকে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে যাব যাতে হঠাৎ করে এই প্রশ্ন উত্থাপিত না হয় আমরা কখন যাব। তারা যখন বলবে আমরা চলে যাব। আমরা সংস্কারের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনকেও সংস্কার করব। কমিশনকে যে কোনো সময় আদর্শ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রাখব।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মাহবুবুর রহমান মনে করেন, ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবিই সরকারের ওপর চাপের একটি কারণ।

তিনি বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিয়ে দেওয়ার কথা সরকারের। বরং নিজের থেকে বলা দরকার যে, ‘আমি তাড়াতাড়ি নির্বাচন দিয়ে চলে যাব।’ কিন্তু সরকার উল্টো কাজ করছে যেটি উচিত না।”

পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “আমরা বলেছি জুনের মধ্যে (২০২৬ সালের জুন) নির্বাচন হবে। এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির কোনোই সুযোগ নাই।”

হঠাৎ পদত্যাগ প্রসঙ্গ

বৃহস্পতিবার সকালে সামাজিক মাধ্যমে আলোচিত বিভিন্ন আইডি থেকে ‘নিশ্চিত’ তথ্য বলে ছড়ানো হয় যে, প্রধান উপদেষ্টা সরে যেতে চাইছেন।

পরে সন্ধ্যায় গণঅভ্যুত্থানের নেতাদের দল এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে ইউনূসের সঙ্গে এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে এই গুঞ্জন যে সত্য, তা প্রমাণ হয়।

দুই নেতা সেই বৈঠকে গিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টাকে পদত্যাগ না করার অনুরোধ করতে। শুরুতে সংবাদ মাধ্যমকে দুই পক্ষ থেকেই নাম প্রকাশ না করে বক্তব্য দেওয়া হয়। পরে বিবিসি বাংলায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলামই নিজেই বলেন সব কিছু।

এরপর জানা যায়, উপদেষ্টা পরিষদের নির্ধারিত বৈঠক শেষে উপদেষ্টারা নিজেরাও এ নিয়ে দীর্ঘ কথা বলেছেন। সেই বৈঠকের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যমে নানা কিছু এসেছে। কিন্তু কোন বিষয়ে সরকার কাজ করতে পারছে না, সেই বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য আসেনি।

প্রধান উপদেষ্টা ‘হতাশ নন’, দাবি রিজওয়ানার

প্রধান উপদেষ্টা কেন হতাশ হয়ে পড়লেন- এই প্রশ্নে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা চৌধুরী দেশকাল নিউজ ডটকমকে বলেন, “উনি কি বলেছেন উনি হতাশ? হতাশার কথা পত্রিকা বলেছে।”

প্রধান উপদেষ্টা আসলে কী বলেছেন?- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “উনি বলেছেন যে আমার কতগুলো বড় কাজের দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে। এই কাজগুলো করতে গেলে একটা নিরুপদ্রব পরিবেশ লাগবে, সহযোগিতা লাগবে।

“উনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছেন যে আমাকে যদি সারাক্ষণ দাবি-দাওয়ার মধ্যে ডুবিয়ে রাখা হয় তাহলে আমি যে পরিকল্পনায় কাজ করে আসছি, এটা আমি বাস্তবায়ন করব কেমন করে?”

রিজওয়ানার ভাষ্য, কথায় কথায় অবরোধ, কথায় কথায় ঘেরাও। সবাই ঘেরাও দেয়। দল নিষিদ্ধের ঘেরাও থেকে শুরু করে ইউনিভার্সিটির দাবি দাওয়া, এনবিআর সবকিছুই। তাহলে কাজ করবেন কীভাবে।

হতাশা স্বীকার অন্য উপদেষ্টার

রিজওয়ানা স্বীকার না করলেও অন্য একজন উপদেষ্টা স্বীকার করেছেন প্রধান উপদেষ্টা হতাশ। তবে তিনি নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন।

ঠিক কেন হতাশ-এই প্রশ্নে এই উপদেষ্টা বলেন, “উনাকে দিয়ে যদি একটা ভালো নির্বাচন করতে না দেওয়া হয়, সেই পরিবেশ সৃষ্টি না হয়! উনার ধারণা ছিল যে সব দলের সমর্থন সরকারের শক্তি। কিন্তু এখন যেভাবে পরিস্থিতি আগাচ্ছে…”

ইউনূস ঠিক কী বলেছেন, সেই প্রশ্নে এই উপদেষ্টা বলেন, “তিনি বলেছেন, ‘একটা ভালো নির্বাচন যদি দিতে না পারি, তাহলে আমার থেকে লাভ কী?’।”

সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার কারণ কী?

উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনার বরাত দিয়ে দৈনিক প্রথম আলোতে লেখা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এখন নির্বাচন দিলে যদি কেউ ব্যালট বাক্স ছিনতাই করতে আসে, পুলিশ বাধা দিতে পারবে কি না, সেই প্রশ্ন তিনি তুলেছেন।

সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা এই প্রসঙ্গে বলেন, “সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তারা তো সরকারের বৈধ আদেশ শুনতে বাধ্য। অতএব তারা পারবে না কেন? যদি এখন খারাপ থাকে, কয় মাস পরে ভালো হয়ে যাবে তার নিশ্চয়তা কী?”

পুলিশ কেন পূর্ণ ক্ষমতায় কাজ করতে পারছে না- এ নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, সে প্রসঙ্গে সাবেক আইজিপি পুলিশ সংস্কার কমিশনের কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। বলেন, “এই কমিশন তো কোনো কাজকর্ম করে না।”

নির্দেশনা ঠিক থাকলে আর কঠোর হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ দমন কঠিন কোনো কাজ না বলেও মনে করেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক। বলেন, “এটা নরম কথার কাজ না এখানে ভয় থাকতে হবে।”

Tags :

Staff Reporter

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

 People’s Agenda

Quick Links

Copyrights are reserved by NE News © 2025, Jun 16