ভুয়া হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পাচ্ছেন শেখ হাসিনাসহ ৪২ জন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উত্তাল সময়কে কাজে লাগিয়ে নিজের ভাইকে ‘নিহত’ দেখিয়ে মামলা করেছিলেন মোস্তফা কামাল ওরফে ‘মোস্ত ডাকাত’। তবে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে ভিন্ন চিত্র। যাকে হত্যা দেখিয়ে মামলা করা হয়েছিল, সেই সোলায়মান সেলিম ওরফে দুলাল এখনও জীবিত। ফলে এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪২ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ডিবির ওয়ারী বিভাগের এসআই ইনামুল ইসলাম চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, বাদী ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলা করেছেন। এজন্য তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধির ২১১ ধারায় মামলা করতে আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে।

ওয়ারী জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার মল্লিক আহসান উদ্দিন জানান, তদন্তে মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রমাণ মিলেছে। আদালতের নির্দেশ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যাকে ‘হত্যা’ দেখানো হয়েছিল, তিনি কোথায়?

মামলার আবেদনে সেলিমকে ‘দুলাল’ নামে পরিচয় দিয়ে বলা হয়েছিল, তিনি ঠিকানা পরিবহনের হেলপার এবং ৩ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে গুলিতে নিহত হয়েছেন। আদালত জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশকে মামলা নেওয়ার নির্দেশও দেয়।

তবে ডিবির তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে, সেলিম জীবিত আছেন এবং বর্তমানে স্ত্রী–সন্তানকে নিয়ে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার বেলতলী বাজারে বসবাস করছেন।

নিজের জীবন সংশয়ে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাকে খুন দেখিয়ে মামলা করেছে যেন পরে সত্যিকারের হত্যাটা সহজ হয়। জমি দখলের জন্য আমার জীবনকে টার্গেট করা হয়েছে।

জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ

চার ভাই–দুই বোনের এই পরিবারে মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে আগে থেকেই হত্যা ও ডাকাতিসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এলাকায় তিনি ‘মোস্ত ডাকাত’ নামে পরিচিত এবং ১০ বছর ধরে পলাতক। সেলিমের সঙ্গে তার জমি–সংক্রান্ত বিরোধও বহুদিন ধরে চলছে।

ডিবির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেলিমকে হত্যা করা হয়েছে বলে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে পরবর্তীতে তাকে সত্যিকারে খুন করে লাশ গুম ও সম্পত্তি দখলের পরিকল্পনা করেছিল মোস্তফা। পাশাপাশি মামলার আসামিদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের লক্ষ্যও থাকতে পারে।

শেখ হাসিনাসহ ৪২ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ৪২ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। গ্রেপ্তার দেখানো মোহাম্মদ উল্লাহ পাটোয়ারী ও মিরাজ খানকেও অব্যাহতির তালিকায় রাখা হয়েছে।

মিরাজ খানের আইনজীবী বলেন, রাজনীতির সঙ্গে ছেলেটার কোনো সম্পর্ক নেই। একটি অস্তিত্বহীন হত্যার মামলায় তাকে ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। তার রাষ্ট্রের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করা উচিত।

অব্যাহতি প্রতিবেদনের শুনানি ২১ ডিসেম্বর

৩০ নভেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই মহিন উদ্দিন জানান, আগামী ২১ ডিসেম্বর এ প্রতিবেদনের ওপর পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

Tags :

News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025