বিসিএস প্রশ্নপত্রে অসংখ্য ভুল, পাকিস্তানের নাকি বাংলাদেশের সরকারি পরীক্ষা বোঝার উপায় নেই

‘৪৯তম বিসিএস (বিশেষ) ২০২৫-এর এমসিকিউ টাইপ লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ১০ অক্টোবর। সরকারি কর্ম কমিশনের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা বিসিএস। বিসিএসের প্রশ্নপত্র দেখার পর মনে হয়েছে, যাঁরা বিসিএসে বাছাই করা দায়িত্ব নিয়েছেন, তাঁরা আসলে কারা?’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া একটি পোস্টে এমন প্রশ্ন তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. নাদিম মাহমুদ।

ওই পোস্টে তিনি লেখেন, ‘যে পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের সঠিক বানান পড়তে হয়, জানতে হয়, সেই পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানকে লিখেছে ‘গনঅভুধানের’, গণমাধ্যমকে লিখেছে ‘গনমাধ্যম’, জন্মহার শূন্যের কোটায় লিখছে ‘শুনে কোটায়’, উচ্চারণকে ওরা লিখেছে ‘উচ্চারন, পরিমাণকে লিখেছে ‘পরিমানে’, পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রী’, প্রধানমন্ত্রীকে ‘প্রধান মন্ত্রী’, কারণকে লিখছে কারন, দক্ষিণ সুদানকে ‘দক্ষিন সুদান’ পারমাণবিক বোমাকে লিখেছে ‘পারমানবিক’।’

‘এমসিকউ টাইপ লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নের বানানের এই হাল নিয়ে কথা বলা ছাড়া প্রশ্নকর্তাদের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাবে। আমি নিশ্চিত নই, এসব প্রশ্নকর্তার কেউ পাকিস্তানের নাগরিক কি না, তবে যেভাবে এখানে ‘পাকিস্তানের প্রেম’ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, তাতে বলাই বাহুল্য যে বিসিএসে পাকিস্তানের উপস্থিতি দেখার মতো ছিল। যেমন এবার পাকিস্তানকে ঘিরে প্রশ্নপত্রে ছিল, সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার পাকিস্তানের কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত? পাকিস্তানের ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে ছিলেন? ছিল ইন্দাস ওয়াটার ট্রিটি নিয়ে প্রশ্ন।’

‘যে দেশ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকে তাদের পাঠ্যবইগুলোয় ‘ভারতের ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখে, মুক্তিযোদ্ধাদের বলে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’, সেই দেশের ইসহাক দারের রাজনৈতিক দলের পরিচয় জানতে হবে আমাদের শিক্ষার্থীদের, যারা কয়েক দিন পর দেশটা পরিচালনার দায়িত্ব নেবে। নিজের দেশের তিস্তা, ফারাক্কা পানি সমস্যা না জানিয়ে ওদের দেশের পানি সমস্যা নিয়ে আমাদের জানতে হবে।’

‘২৬ মার্চের ‘স্বাধীনতা ও জাতীয়’ দিবসটিকে প্রশ্নপত্রে ‘স্বাধীনতাকে’ উড়িয়ে দিয়ে লেখা হয়েছে কোনটি জাতীয় দিবস। নিজ দেশের মুক্তিযুদ্ধের পরিচয় তুলে না ধরে, আমাদের গেরিলাদের পরিচয় না জানতে চেয়ে, ওরা প্রশ্ন করেছে, তুরস্কের কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) (Kurdistan Workers Party) নামক একটি নিষিদ্ধ সংগঠনকে নিয়ে, যে সংগঠন তুরস্ক, আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কিছু দেশে ‘সন্ত্রাসবাদী’ হিসেবে পরিচিত, তাঁদের বিষয়ে জানতে হবে আমাদের ছেলেমেয়েদের!’

‘কী অদ্ভুত প্রশ্নপত্র, যেখানে সিঙ্গাপুরের মুসলিম রাষ্ট্রপতির পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে অথচ আধুনিক সিঙ্গাপুরের রূপকার লি কুয়ান ইউ বিষয়ে জানাশোনা অধিক কাজের।’

‘আয়নাঘর কিংবা সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাববিষয়ক ‘অপ্রতিষ্ঠিত’ বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলে এই সরকারের গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে।’

‘পাবলিক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা যদি এইভাবে প্রশ্নকর্তাদের দ্বারা মূল্যায়িত হন, তাহলে বলতে দ্বিধা নেই ‘বর্তমান কর্মকমিশনের কর্তারা’ আসলে এই পরীক্ষাকে গুরুত্বহীন মনে করছেন। সেটা না হলে কীভাবে একটি প্রশ্নপত্রে এভাবে ভুল বানানের ছড়াছড়ি হয়? কীভাবে অসাড় ও গুরুত্বহীন প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের জানতে হয়?’

Tags :

News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025