ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি অব্যাহত রাখার ‘শাস্তি’ হিসেবে ট্রাম্প এ সিদ্ধান্ত নিলেন।
বুধবার রাতে দেওয়া এই ঘোষণার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় পণ্যের আমদানি শুল্ক দাঁড়াল ৫০ শতাংশে- যা চীনের তুলনায় ২০ শতাংশ এবং পাকিস্তানের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, শুধু ভারত নয়, রাশিয়া থেকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে তেল কিনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধ অর্থায়নকারী অন্য দেশগুলোর বিরুদ্ধেও একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বুধবার স্বাক্ষরিত এক নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প লিখেছেন, আমি মনে করি ভারতের সরকার সরাসরি বা পরোক্ষভাবে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করছে… তাই আমদানি করা ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা প্রয়োজন।
এই সিদ্ধান্ত আসে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে তার ক্ষুব্ধ মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পর। এক মার্কিন গণমাধ্যমকে ট্রাম্প বলেন, ভারত ভালো বাণিজ্যিক অংশীদার নয়… আমরা আগে ২৫ শতাংশ শুল্কে সমঝোতা করেছিলাম, কিন্তু আমি মনে করি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো উচিত, কারণ তারা রাশিয়ার তেল কিনছে।
ট্রাম্পের এই মন্তব্য ও সিদ্ধান্ত বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে এবং বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উল্টোদিকে, ট্রাম্প পাকিস্তানের জন্য বড় শুল্ক ছাড় ঘোষণা করেছেন ইসলামাবাদের আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১৯ শতাংশে নামানো হয়েছে এবং নতুন একটি বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার মধ্যে পাকিস্তানের তেলসম্পদ উন্নয়নের পরিকল্পনাও রয়েছে।
গত ৩০ জুলাই ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, রাশিয়া থেকে তেল ও সামরিক সরঞ্জাম কেনা অব্যাহত রাখার কারণে ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এটি ছিল তাঁর এপ্রিল মাসে ঘোষিত ‘পারস্পরিক শুল্ক’ নীতির অংশ, যা আলোচনার সুযোগ দিতে সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছিল।
তিনি ভারতের ‘অত্যন্ত কঠোর ও বিরক্তিকর অ-মৌলিক বাণিজ্য বাধা’ নিয়েও সমালোচনা করেন। তার ভাষায়, ভারত আমাদের বন্ধু হলেও তাদের শুল্ক খুবই বেশি, বিশ্বের সর্বোচ্চের মধ্যে একটি। আর তাদের অ-মৌলিক বাণিজ্য বাধা সবচেয়ে কঠোর ও বিরক্তিকর।
এদিকে, ভারত সরকার ট্রাম্পের সমালোচনার জবাবে বলেছে, অনেক পশ্চিমা দেশ, যুক্তরাষ্ট্রসহ এখনো রাশিয়া থেকে পণ্য আমদানি করছে। ভারতের দাবি, রাশিয়া থেকে তেল কেনা বৈশ্বিক বাজার পরিস্থিতি দ্বারা বাধ্যতামূলক, অথচ যারা সমালোচনা করছে তারা অপ্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করছে। উদাহরণ হিসেবে ভারত জানায়, ২০২৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়া থেকে ৬৭.৫ বিলিয়ন ইউরোর তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করেছে।