আগামী শুক্রবার পর্যন্ত বাংলাদেশে ভারি বৃষ্টিপাতের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এই বর্ষণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড়ধসের আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া টানা বর্ষণে পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৪ জেলায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বা বর্ষাও সারা দেশে সক্রিয়। এরই মধ্যে মঙ্গলবার দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে একটি লঘুচাপও সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। দুইয়ে মিলে আজ দেশে বৃষ্টিপাত অনেকটা বেড়েছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগামীকাল বুধবার থেকে দেশে বৃষ্টিপাত আরো বাড়তে পারে। এমন পরিস্থতিতে দেশের সব বিভাগের জন্য মঙ্গলবার আবার ভারি বর্ষণের সতর্কবার্তা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আগামী শুক্রবারের মধ্যে দেশের পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৪ জেলায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকলে এসব জেলায় স্বল্পমেয়াদি বন্যার ঝুঁকি রয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী ৭২ ঘণ্টায় (শুক্রবার পর্যন্ত) পূর্বাঞ্চলের ফেনী জেলার মুহুরী নদী সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট জেলার সারিগোয়াইন, সুনামগঞ্জ জেলার যাদুকাটা ও নেত্রকোনা জেলার সোমেশ্বরী নদীর পানিও বিপৎসীমার কাছাকাছি বা সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে। এ সময় এসব জেলার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে।
এ বিষয়ে পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, চার জেলায় কয়েকটি নদ-নদীর বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হতে পারে। এতে এসব জেলার নদ-নদী সংলগ্ন কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। এর পরও ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে এসব জেলায় নদ-নদীর পানি বিপত্সীমা অতিক্রম করে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত
ভারি বর্ষণের কারণে পাহাড়ধস ও জলাবদ্ধতার সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার কারণে শুক্রবার দুপুর ২টা পর্যন্ত দেশের সব বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারি (৮৯ মিলিমিটার বা বেশি) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। ভারি বর্ষণজনিত কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও কোথাও অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে।
এক সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বজ্রমেঘ তৈরি হচ্ছে এবং বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিসহ দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং কক্সবাজারকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে থাকা মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
বৃষ্টি চলতে পারে মাসজুড়ে
দেশে মূলত বর্ষার বৃষ্টিপাত হয় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার দেশের সব অঞ্চলেই সক্রিয় হয়েছে। অর্থাৎ এর প্রভাবে দেশে বর্ষার বৃষ্টিপাতও বাড়বে। মঙ্গলবার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও সংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপও সৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, একটি মৌসুমি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে দেশে বৃষ্টি বাড়তে পারে। এটি ক্রমশ উত্তর-পশ্চিম দিকে সরে বৃহস্পতিবারের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে অনেকটা দূরে চলে যেতে পারে। তবে মৌসুমি বায়ু বা বর্ষা সারা দেশে সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। এর প্রভাবেও সারা দেশেই বৃষ্টি বাড়বে।