উজানে ভারী বর্ষণ আর ভয়াবহ পাহাড়ি ঢলে বন্যার শঙ্কা, প্রস্তুতি কেমন?

সিলেটে ভারী বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে সীমান্তবর্তী অঞ্চল। ঢলের কারণে সড়কে উপচে পড়েছে পানি। একই সঙ্গে ভারী বর্ষণে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে।

এদিকে, কয়েক ঘণ্টার টানা ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার, শাহজালাল উপশহর, খাসদবীর, দরগাহ মহল্লা, দক্ষিণ সুরমা, শিবগঞ্জ, যতরপুর, মেজরটিলাসহ অসংখ্য এলাকার সড়কসমূহ। সিলেট নগরীর অধিকাংশ এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা।

অন্যদিকে, উজান অঞ্চল ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব খাসি পার্বত্য জেলায় প্রবল বৃষ্টিতে শুক্রবার দুইজনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড কে সাংমা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা করতে সব ডেপুটি কমিশনারদের সঙ্গে একটি জরুরি পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন। তিনি সমস্ত বিভাগকে উচ্চ সতর্কতায় থাকতে এবং ত্রাণ প্রচেষ্টার গতি বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে জলাবদ্ধতার কারনে মেঘালয় রাজ্যের সাথে আসামের যোগাযোগ বন্ধ হয়েগেছে বিভিন্ন পয়েন্টে।

শনিবার (৩১ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সিলেটে থেমে থেমে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট আবহাওয়া অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তা রৌদ্র তালুকদার। তিনি বলেন, ‘সিলেটে আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে নদ-নদীর পানি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদীর পানি কানিশাইল পয়েন্টে বিপৎসীমার মাত্র ৯ সেন্টিমিটার নিচে আর কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

এদিকে জকিগঞ্জ, বালাগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও বিশ্বনাথ উপজেলার অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ঘরের ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে। সাদা পাথর, জাফলংসহ সীমান্তবর্তী পর্যটনস্পট পানিতে তলিয়ে গেছে।

গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাঁধন কান্তি সরকার বলেন, ‘নদ-নদীর পানি বাড়লেও আপাতত বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির কোনো আশঙ্কা নেই। উপজেলার নিম্নাঞ্চলে প্লাবিত হয়ে স্বল্প মেয়াদে বন্যা হতে পারে। বন্যা পরিস্থিতির জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।’

জাফলং পর্যটনস্পটের ট্যুরিস্ট পুলিশের ওসি শাহাদাৎ হোসেন জানান, জাফলংয়ে প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে এবং নদীর পানি বাড়ছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যটকদের নিরাপত্তায় সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং পর্যটকদের ঝুঁকি এড়িয়ে নিরাপদে অবস্থান করার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার বলেন, ‘কোম্পানীগঞ্জে পাহাড়ি ঢলের কারণে ধলাই নদরে পানি বেড়েছে। এ জন্য উপজেলার ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি উদ্ধার তৎপরতার জন্য প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের সমন্বয়ে উদ্ধারকারী দলকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।’

ভারী বৃষ্টির কারণে সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে জরুরি যোগাযোগের জন্য কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে বলে এক অফিস আদেশে জানিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সচিব আশিক নূর।

অফিস আদেশে বলা হয়, সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় তলার ২০৫ নম্বর কক্ষে এ কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়। এ কক্ষের দায়িত্বে আছেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর। তাঁর মুঠোফোন নম্বর: ০১৭১১৯০৬৬৪৭। এ ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে থাকবেন প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ একলিম আবদীন।

সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ওয়ার্ড সচিবদের নিজেদের অধিক্ষেত্রে অবস্থান করে সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শনের পাশাপাশি জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুততম সময়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও অফিস আদেশে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছে। পাশাপাশি জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনা খাবারের মজুত রাখা হয়েছে।

Tags :

Rajib Ahmed

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

 People’s Agenda

Quick Links

Copyrights are reserved by NE News © 2025, Jun 15