ইজমিরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে দাবানলের ভয়াবহতা বাড়ছে, আগুন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ
তুরস্কে দাবানলের ভয়াবহ রূপ
তুরস্কের পশ্চিমাঞ্চলে ইজমির, সেফেরিহিসার, মেন্ডেরেসসহ বেশ কয়েকটি জেলায় ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। চলমান দাবানলের কারণে অন্তত ৫০,০০০ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তুরস্কের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দাবানলের বিস্তার এতটাই ভয়াবহ যে শতাধিক ঘরবাড়ি, বনভূমি ও কৃষি জমি পুড়ে গেছে।
এই দাবানল শুরু হয় জুন মাসের শেষ দিকে, যখন ইউরোপজুড়ে তীব্র তাপদাহ বিরাজ করছিল। স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, দাবানলের প্রধান উৎসস্থল ছিল ইজমির জেলার পাহাড়ি অঞ্চলগুলো। প্রবল বাতাস ও শুষ্ক আবহাওয়া দ্রুত আগুন ছড়িয়ে দেয় আশেপাশের গ্রাম ও বসতিতে।
মানবিক বিপর্যয় ও ক্ষয়ক্ষতি
ইতিমধ্যে বহু পরিবার তাদের বসতভিটা হারিয়েছে। আগুনে পুড়ে গেছে ফসল, গবাদিপশু এবং বনজ সম্পদ। আহত হয়েছেন অনেক মানুষ, যাদের বেশিরভাগই ধোঁয়ার কারণে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে জরুরি সেবা চালু করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি গত কয়েক বছরের মধ্যে তুরস্কে সবচেয়ে বড় দাবানলগুলোর একটি। ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ধারণ না হলেও, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে—কয়েক কোটি ডলারের সম্পদ ধ্বংস হয়েছে।
নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা ও চ্যালেঞ্জ
তুরস্কের ফায়ার সার্ভিস ও উদ্ধারকর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে দিনরাত কাজ করছেন। ইতিমধ্যে ১,০০০-এর বেশি ফায়ারফাইটার, ১০০+ অগ্নিনির্বাপক যান, ১৪টি হেলিকপ্টার ও ৪টি জলফেলার বিমান মোতায়েন করা হয়েছে। তবে প্রাকৃতিক বাধা যেমন শক্তিশালী বাতাস ও দুর্গম এলাকা, তাদের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করছে।
অনেক জায়গায় সড়কপথে প্রবেশ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কিছু এলাকায় শুধু হেলিকপ্টারের মাধ্যমেই পানি ফেলা সম্ভব হচ্ছে। তবে উচ্চতাপমাত্রার কারণে আকাশপথেও কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।


দাবানলে পুড়ে যাওয়া একটি গাড়ির ধ্বংসাবশেষ, যা অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতা তুলে ধরছে। ছবি: সংগৃহীত
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনকে এই দাবানলের একটি বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন গবেষকরা। গ্রীষ্মের শুরুতেই ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা এবং শুষ্কতা দাবানলের জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করেছে। এ অবস্থায় অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—তুরস্ক কি ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত?
তুরস্কে চলমান দাবানল শুধু একটি পরিবেশগত বিপর্যয় নয়, এটি একটি মানবিক সংকটও। এরকম পরিস্থিতি মোকাবেলায় শুধুমাত্র তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নয়, দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তুতি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি। অন্যথায়, প্রতিবছরই এ রকম দুর্যোগ হয়ে উঠতে পারে নতুন স্বাভাবিকতা।