টিউলিপের বিচারপ্রক্রিয়ার সমালোচনায় ব্রিটিশ আইনজীবীরা

যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মিনিস্টার ও লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে চলমান মামলা ‘কৃত্রিম, সাজানো ও অন্যায্য’ বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটেনের কয়েকজন শীর্ষ আইনজীবী। আগামী বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণাকে সামনে রেখে তারা যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলামের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ মন্তব্য করেন।

টিউলিপ সিদ্দিক জানুয়ারিতে ব্রিটিশ সরকারের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তার বিরুদ্ধে দেওয়া মামলার রায় ও সাজা ঘোষিত হবে তার অনুপস্থিতিতেই, যেখানে প্রসিকিউশন সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চাইছে।

লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেটের লেবার এমপি সিদ্দিক বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি। গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাকে গত বছরের ছাত্রনেতৃত্বাধীন আন্দোলনে দমন–পীড়নের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয়।

কনজারভেটিভ সরকারের সাবেক বিচারমন্ত্রী রবার্ট বাকল্যান্ড কিসি এবং সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ডমিনিক গ্রিভসহ উচ্চপর্যায়ের আইনজীবীরা তাদের চিঠিতে অভিযোগ করেন, মামলার পুরো প্রক্রিয়ায় সিদ্দিক মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তাদের মতে, তিনি নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে জানতেই পারেননি এবং আইনজীবী নিয়োগের সুযোগও পাননি। তারা আরও দাবি করেন, সিদ্দিক যে আইনজীবীকে নিযুক্ত করেছিলেন, তাকে গৃহবন্দি করা হয় এবং তার মেয়েকে হুমকি দেওয়া হয়।

আইনজীবীরা লিখেছেন, ‘এ ধরনের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ কৃত্রিম এবং অন্যায্য, যা দিয়ে বিচার নয়, বরং সাজানো অভিযোগে কাউকে দোষী করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’

টিউলিপ সিদ্দিকসহ তার খালা, মা, ভাই ও বোনসহ আরও বহুজনকে গত আগস্টের শুরু থেকে ঢাকায় বিভিন্ন অভিযোগে বিচার করা হচ্ছে। সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তিনি শেখ হাসিনাকে প্রভাবিত করে ঢাকার একটি উপশহরে তার মায়ের জন্য জমি বরাদ্দ করিয়েছিলেন। তবে সিদ্দিক অভিযোগ অস্বীকার করে বরাবরই বলেছেন, তার বিরুদ্ধে মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

চিঠিতে আইনজীবীরা লেখেন, বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বারবার আইনের শাসন ও ন্যায়ের গুরুত্বের কথা বললেও বাস্তবে যে বিচারপ্রক্রিয়া চলছে, তা নিয়ে তাদের ‘গভীর উদ্বেগ’ রয়েছে। তারা বলেন, সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের নাগরিক এবং লন্ডনে সংসদ সদস্য হিসেবে অবস্থান করছেন, তাই তাকে ‘পলাতক’ বলা যায় না। প্রয়োজনে যথাযথ কারণ দেখিয়ে তাকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের আবেদন জানানো যেতেও পারে।

আইনজীবীদের অভিযোগ, সিদ্দিককে অভিযোগপত্র বা প্রমাণাদি দেখানো হয়নি এবং আইনজীবী নিয়োগেও বাধা দেওয়া হয়েছে। তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত দুর্নীতি দমন কমিশন ও অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিরা মিডিয়ায় সিদ্দিকের বিরুদ্ধে মন্তব্য করায় বিচারপ্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন আরও গভীর হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, ‘ক্ষমতাসীনদের এ ধরনের প্রকাশ্য মন্তব্য কোনভাবেই নিরপেক্ষ ও বাধাহীন বিচারপ্রক্রিয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সমগ্র পরিস্থিতি বিবেচনা করলে দেখা যায়, অনুপস্থিতিতে যে বিচার চলছে, তা ন্যায্য নয়; সিদ্দিক নিজেকে রক্ষা করার সুযোগ পাচ্ছেন না এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ন্যায়ের মানদণ্ড থেকেও প্রক্রিয়াটি অনেক দূরে। আমরা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাই—এ সমস্যা দ্রুত সমাধান করে ন্যায়সঙ্গত বিচার নিশ্চিত করা হোক।’

এর আগে গণমাধ্যমে অভিযোগ উঠেছিল, টিউলিপ সিদ্দিক তার খালার ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে সুবিধা নিয়েছেন। এরপর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস তদন্ত করে জানুয়ারিতে সিদ্দিককে নির্দোষ ঘোষণা করেন, যদিও তিনি মন্তব্য করেছিলেন—পারিবারিক সম্পর্ক ও দায়িত্বের কারণে সিদ্দিকের ‘সম্ভাব্য সুনামহানির ঝুঁকি’ সম্পর্কে আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল।

বাংলাদেশের অভিযোগকে কেন্দ্র করে সরকারে তার অবস্থান চাপের মুখে পড়ায় সিদ্দিক জানুয়ারিতেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের ইকোনমিক সেক্রেটারি ও সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। বাংলাদেশের হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা এই বিষয়ে মন্তব্য দেয়নি।

Tags :

International News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025