যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত নতুন ট্যাক্স ও ব্যয়ের বিল নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক।
মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) সামাজিক মাধ্যম এক্সে (আগে যার নাম ছিল টুইটার) একাধিক পোস্টে তিনি বলেন, “এটি একটি জঘন্য বিকৃতি। যারা এতে ভোট দিয়েছেন, তাদের লজ্জা করা উচিত।”
ইলন মাস্ক বলেন, বিলটিতে “অপচয়ী ও অপ্রয়োজনীয় খরচে ভরা” নানা প্রকল্প রাখা হয়েছে, যা বাজেট ঘাটতি ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছে দিতে পারে। এই বিল যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের অসহনীয় ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেবে।”
প্রায় চার মাস ‘ডজ’ নামে একটি বিশেষ টিমের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের খরচ কমানোর দায়িত্বে ছিলেন মাস্ক। কিন্তু ৩১ মে তিনি আকস্মিকভাবে সে দায়িত্ব ছাড়েন। যদিও ট্রাম্প বলেছিলেন, “সে (ইলন) সবসময় আমাদের পাশে থাকবে, সাহায্য করতে থাকবে।”
মাস্কের ভাষ্য, বিলটি তাদের দলের কাজের সঙ্গে ‘পুরোপুরি বিপরীত’।
এই বিলের আওতায় করছাড় বাড়ানোর পাশাপাশি প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি ও অবৈধ অভিবাসীদের দেশত্যাগে তহবিল বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ঋণ গ্রহণের সীমা বাড়িয়ে ৪ ট্রিলিয়ন ডলার করার কথাও বলা হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, “প্রেসিডেন্ট আগে থেকেই জানেন মাস্ক এই বিল সম্পর্কে কী ভাবেন।”
লেভিট বলেন, “এটি এক অসাধারণ বিল। প্রেসিডেন্ট এতে অনড়।”
মাস্কের মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন রিপাবলিকান স্পিকার মাইক জনসন। বিলটির পক্ষে সোচ্চার জনসন বলেন, “আমার বন্ধু ইলন এক্ষেত্রে ভুল করেছেন।”
তিনি জানান, বিলটি বৈদ্যুতিক গাড়ির করছাড় ধাপে ধাপে তুলে দেবে, যা মাস্কের টেসলার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
মাস্ক অভিযোগ করেন, তিনি চেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম তার স্টারলিংক স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পরিচালিত হোক। কিন্তু প্রযুক্তিগত সমস্যা এবং স্বার্থের সংঘাতের কারণে প্রস্তাবটি বাতিল করা হয়।
মাস্কের পোস্টে রাজনৈতিক হুঁশিয়ারিও ছিল স্পষ্ট। তিনি বলেন, “আগামী বছর নভেম্বরেই বিশ্বাসঘাতক রাজনীতিবিদদের বিদায় করতে হবে।” উল্লেখযোগ্যভাবে, গত নির্বাচনে ট্রাম্পের পক্ষে মাস্কই ২৫০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছিলেন।
বিলটি এখন সিনেটের আলোচনায় রয়েছে। সেখানে রিপাবলিকানদের মধ্যেই মতবিরোধ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
কেন্টাকির সিনেটর র্যান্ড পল বলেন, “এই বিলে ঋণ সীমা বাড়ানোর বিষয় থাকলে আমি সমর্থন করব না।”
পাল্টা ট্রাম্প বলেন, “র্যান্ডের ধারণা নেই, আর কেন্টাকির মানুষ তাকে সহ্য করতে পারে না।”
ডেমোক্র্যাটরা মাস্কের মন্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন। সিনেট সংখ্যালঘু দলের নেতা চাক শুমার বলেন, “যে মাস্ক নিজে এই প্রক্রিয়ার অংশ ছিলেন, ট্রাম্পের বন্ধু ছিলেন, তিনিই বলছেন বিলটি খারাপ। বুঝতেই পারছেন, কতটা খারাপ এই বিল।”
এমন বিরোধের মধ্যেই ৪ জুলাইয়ের মধ্যে বিলটি আইনে পরিণত করতে চান ট্রাম্প।
এদিকে ট্রাম্প ‘ডজ’ টিমের সুপারিশের ভিত্তিতে ৯ বিলিয়ন ডলারের ব্যয় কমানোর একটি পরিকল্পনা কংগ্রেসে উপস্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে ব্যয়-সংকোচনের পক্ষে থাকা আইনপ্রণেতাদের সন্তুষ্ট করা যায়।