ট্রাম্পের বেশিরভাগ শুল্ক অবৈধ : মার্কিন আদালতের রায়

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের অধিকাংশকে অবৈধ বলে রায় দিয়েছে দেশটির আপিল আদালত। শুক্রবার (২৯ আগস্ট) এই সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে প্রভাব বিস্তারে রিপাবলিকান নেতার প্রধানতম হাতিয়ার এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক মার্কিন ফেডারেল সার্কিট আপিল আদালতের ৭-৪ ভোটে দেওয়া এই রায়ে এপ্রিল মাসে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের অংশ হিসেবে আরোপিত পারস্পরিক শুল্ক এবং ফেব্রুয়ারিতে চীন, কানাডা, মেক্সিকোর ওপর আরোপিত আরেক দফা শুল্কের বৈধতা নিয়ে রায় দিয়েছে।

রায়ের পক্ষে মত দেওয়া সাত বিচারপতির ছয়জন ডেমোক্র্যাট আর একজন রিপাবলিকান আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত। আর রায়ের বিপক্ষে অবস্থানকারীদের মধ্যে দুজন ডেমোক্র্যাট ও দুজন রিপাবালিকান প্রশাসনের অধীনে নিয়োগ পেয়েছেন।

অবশ্য, অন্য আইনি কর্তৃপক্ষ আরোপিত শুল্ক, যেমন ট্রাম্পের স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক, এই রায়ের প্রভাব নেই।

হোয়াইট হাউজের দ্বিতীয় মেয়াদে শুল্ককে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির একটি মূল ভিত্তি বানিয়ে ফেলেছেন ট্রাম্প। ইচ্ছেমতো এই হাতিয়ার ব্যবহার করে তিনি বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর চাপ বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য চুক্তি পুনঃআলোচনায় বাধ্য করেছেন। এসব শুল্ক ট্রাম্প প্রশাসনকে কিছু বিষয়ে সহায়তা করলেও আর্থিক বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।

আদালতের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট উল্লেখ করে নিজ মালিকানানাধীন ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, এই শুল্কগুলো উঠে গেলে দেশ সম্পূর্ণ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।

তবে সর্বোচ্চ আদালতের সহায়তায় এই রায় উল্টে যাবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

১৯৭৭ সালের আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইনের (আইইইপিএ) দোহাই দিয়ে শুল্ক আরোপের পক্ষে সাফাই গাইছেন ট্রাম্প। ওই আইনের ধারা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের জরুরি অবস্থায় ‘অস্বাভাবিক ও বিশেষ‘ হুমকি মোকাবিলায় প্রেসিডেন্টের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে।

এপ্রিল মাসে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতিকে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন এবং বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চলা বাণিজ্য ঘাটতি মার্কিন উৎপাদনশীলতা ও সামরিক প্রস্তুতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

আইনটি ঐতিহাসিকভাবে শত্রু রাষ্ট্রের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ বা সম্পদ জব্দে ব্যবহৃত হয়েছে। অবশ্য ট্রাম্পই প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি আইইইপিএ ব্যবহার করে শুল্ক আরোপ করেছেন। তার দাবি, বাণিজ্য ঘাটতি, মার্কিন উৎপাদনশীলতার পতন এবং সীমান্তপথে মাদক পাচারের মতো সমস্যার কারণে এই পদক্ষেপ প্রয়োজনীয় ছিল।

ফেব্রুয়ারির শুল্ক আরোপের ব্যাখ্যায় ট্রাম্প দাবি করেন, চীন, কানাডা এবং মেক্সিকো অবৈধ ফেন্টানিল পাচার রোধে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তবে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

তবে আদালত বলেছে, আইন অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের হাতে জাতীয় জরুরি অবস্থায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার এখতিয়ার থাকলেও শুল্ক আরোপের ক্ষমতা স্পষ্টভাবে দেওয়া হয়নি।

আদালত আরও বলে, ওই আইন প্রণয়নের সময় প্রেসিডেন্টের হাতে শুল্ক আরোপের সীমাহীন ক্ষমতা সমর্পণ করার পরিকল্পনা কংগ্রেসের ছিল বলে তাদের কাছে প্রতীয়মান হয়নি।

ট্রাম্প প্রশাসনকে সর্বোচ্চ মার্কিন আদালতে আপিলের সুযোগ দিতে আগামী ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত শুল্ক বহাল রাখার অনুমোদন দিয়েছে আদালত।

Tags :

International News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025