ট্রাম্প-নেতানিয়াহু বৈঠক আজ, গাজায় যুদ্ধবিরতির আশা

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আজ সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেছেন, এই বৈঠকের মাধ্যমে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিমুক্তির বিষয়ে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ‘এ সপ্তাহেই চুক্তি’ হতে পারে।

অন্যদিকে রবিবার সন্ধ্যায় কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনার শুরু হয়। আলোচনার লক্ষ্য যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা ও জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে সমঝোতা করা।

নেতানিয়াহুর সফর প্রসঙ্গে ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, একটি চুক্তির ‘ভালো সম্ভাবনা’ রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই অনেক জিম্মিকে মুক্ত করেছি। যারা এখনো গাজায় আটক রয়েছেন, তাদের মধ্যে অনেককে শিগগিরই মুক্ত করা হবে।’

এদিকে ওয়াশিংটনে রওনা হওয়ার আগে নেতানিয়াহু বলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক ‘নিশ্চিতভাবেই চুক্তিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে’।

দুই বছর ধরে চলমান গাজা যুদ্ধে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। নেতানিয়াহু বলেন, দোহায় পাঠানো প্রতিনিধিদের তিনি ‘স্পষ্ট নির্দেশনা’ দিয়েছেন, যাতে ‘সমঝোতার শর্তাবলীর মধ্যে থেকে চুক্তিতে পৌঁছনো যায়’।

এর আগে তিনি অভিযোগ করেন, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত যুদ্ধবিরতির খসড়া প্রস্তাবে হামাসের কিছু ‘অগ্রহণযোগ্য’ দাবি অন্তর্ভুক্ত ছিল।

জিম্মিমুক্তি চুক্তির খসড়া ও শর্ত

পরোক্ষ আলোচনার সঙ্গে জড়িত দুটি ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, প্রস্তাবে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে হামাস ১০ জীবিত জিম্মি ও কয়েকটি মরদেহ ফেরত দেবে, বিনিময়ে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেবে।

তবে হামাস চাইছে, ইসরায়েল যেন পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহার করে, আলোচনা চলাকালে হামলা না চালায় এবং জাতিসংঘের নেতৃত্বে ত্রাণ বিতরণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে।

ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট ইজাক হারজোগ নেতানিয়াহুর ওয়াশিংটন সফরকে ‘গুরুত্বপূর্ণ মিশন’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সব জিম্মিকে ঘরে ফিরিয়ে আনার জন্য এ সফর একটি বড় সুযোগ।’

হোয়াইট হাউসের তথ্য অনুযায়ী, নেতানিয়াহু সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তবে সেখানে সাংবাদিকরা থাকবেন না।

‘যথেষ্ট রক্তপাত’

গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় সোমবার ১২ জন নিহত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ওসামা আল-হানাউই বলেন, ‘প্রতিদিন যুবক, পরিবার ও শিশুদের হারাচ্ছি, এটি এখনই থামাতে হবে। আর রক্তপাত চাই না।’

গাজায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের ওপর ইসরায়েলি বিধি-নিষেধ ও অনেক এলাকায় প্রবেশে অসুবিধার কারণে সিভিল ডিফেন্স এজেন্সির দেওয়া তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি। যোগাযোগ করা হলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, নির্দিষ্ট স্থানের তথ্য ছাড়া তারা হামলা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজী নয়।

ত্রাণ বিতরণেও প্রাণহানি

মে মাসের শেষ দিকে ইসরায়েল আংশিকভাবে দুই মাসের অবরোধ শিথিল করলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব নেয়। তবে বিতরণকেন্দ্রের বাইরে রেশন নেওয়ার অপেক্ষায় থাকা শত শত মানুষ নিহত হওয়ার খবর মিলেছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ত্রাণের জন্য অপেক্ষারত পাঁচ শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে এ সংখ্যা ৭৫১ জন।

২০২৩ সালের হামলায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা ২৫১ জন ইসরায়েলি জিম্মি করে, যাদের মধ্যে ৪৯ জন এখনো গাজায় রয়েছে। এর মধ্যে ২৭ জনকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মৃত বলে দাবি করেছে।

২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলায় এক হাজার ২১৯ ইসরায়েলি নিহত হয়। তার পরই গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে তেল আবিব। হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৫৭ হাজার ৪১৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এ তথ্য জাতিসংঘও বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করছে)

মধ্যস্থতাকারীদের প্রচেষ্টায় এর আগে দুই দফা সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে কয়েকজন জিম্মিকে মুক্ত করা হয়েছিল। তবে হামাসের স্থায়ী যুদ্ধবিরতির শর্ত ইসরায়েল বারবার প্রত্যাখ্যান করায় সাম্প্রতিক চেষ্টাগুলো ব্যর্থ হয়েছে।

Tags :

International News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025