আওয়ামী লীগ সরকারের সময় টিএফআই-জেআইসি সেলে গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলার আসামি ১০ সেনা কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। বুধবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে তাঁদের ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। বাংলাদেশ জেলের একটি প্রিজন ভ্যানে তাদের আদালতে আনা হয়।
সেনা কর্মকর্তাদের হাজির করা উপলক্ষে সকাল থেকেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ঘিরে নিরাপত্তায় রয়েছেন পুলিশ, বিজিবি-র্যাব সদস্যরা। টিএফআই সেলে গুম করে রাখার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আসামি ১৭ জন। আসামিদের মধ্যে গ্রেপ্তার আছেন ১০ সেনা কর্মকর্তা।
তাঁরা হলেন- ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, মো. কামরুল হাসান, মো. মাহাবুব আলম এবং কে এম আজাদ; কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন ও আনোয়ার লতিফ খান (অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে); লে. কর্নেল মো. মশিউর রহমান, সাইফুল ইসলাম সুমন ও মো. সারওয়ার বিন কাশেম।
শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ এ মামলার সাত আসামি পলাতক। আজ এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি হবে।
এদিকে, গুমের দায়ে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজার বিধান রেখে ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ’-এর গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। সোমবার লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ থেকে এ গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
এ আইনে গুমের আদেশ বা অনুমতি দানকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা কমান্ডারদেরও সমান সাজার বিধান রাখা হয়েছে। এই আইনের অধীনে গুমের সঙ্গে জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা সেনা, নৌ, বিমান, পুলিশ, বিজিবিসহ সবার বিচার করা যাবে। অধ্যাদেশে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলা হয়েছে। এই অধ্যাদেশের অধীনে অপরাধ হবে জামিন ও আপস অযোগ্য। অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করার আগ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির অবস্থান ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে’ গোপন রাখা যাবে।
গত ৬ নভেম্বর এ অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ, যেখানে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং অভিযোগ গঠনের ১২০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারী বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য যদি কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার, আটক, অপহরণ বা স্বাধীনতা হরণ করার পর বিষয়টি অস্বীকার করেন অথবা ওই ব্যক্তির অবস্থান, অবস্থা বা পরিণতি গোপন রাখেন এবং এ কাজের ফলে যদি ওই ব্যক্তি আইনগত সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হন, তাহলে কাজটি গুম বা শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হবে। দায়ী ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।



