বন্দরের তিন টার্মিনাল যাচ্ছে বিদেশিদের হাতে

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি, লালদিয়ার চর এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁও টার্মিনাল বিদেশি অপারেটরের হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে। তারা ২৫ থেকে ৩০ বছরের জন্য এসব টার্মিনাল পরিচালনা করবে।

রবিবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘সমুদ্রগামী জাহাজ শিল্পে বিনিয়োগ সম্ভাবনা’ বিষয়ক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সচিব এ তথ্য দেন।

রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে আয়োজিত সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সমুদ্রগামী জাহাজ শিল্প মালিকদের সংগঠনের সভাপতি আজম জে চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ ও পিআরআইর চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালা। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।

নৌ সচিব বলেন, তিন টার্মিনালের মধ্যে পানগাঁও ছেড়ে দিতে কিছুটা সময় নেওয়া হবে। নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) অক্টোবরের মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কিছুটা সময় নেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি অপারেটরদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে কৌশলগত ও ভৌগোলিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আমরা মনে করি, সেটি বড় কোনো বিষয় হবে না। শ্রীলঙ্কা, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বন্দরে বিদেশি অপারেটর কাজ করছে। সেখানে কোনো সমস্যা না হলে আমাদেরও হবে না।’

মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, বন্দরের মধ্যে কনটেইনার খুলে পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে। পৃথিবীর কোথাও যা নেই। চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩টি গেট আছে। স্ক্যানিং মেশিন আছে মাত্র ছয়টিতে। এর মধ্যে আবার তিন থেকে চারটি নষ্ট থাকে। এভাবে বন্দর চলতে পারে না। এ জন্য বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে।

ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পক্ষ থেকে বিদেশিদের হাতে বন্দর ছেড়ে দেওয়ার বিরোধিতা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, তারা আগে এমন নানা কথা বলেন। কিন্তু পরে পরিস্থিতি বুঝতে পারেন। বন্দর ব্যবহারে বাড়তি খরচ বিষয়ে আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সেবার মান বাড়ানো হলে দ্রুত সেবা পাবেন ব্যবসায়ীরা। এতে তাদের ক্ষতিপূরণ কমিয়ে আনলে বাড়তি খরচ দিতে সমস্যা হবে না।

সমুদ্রগামী জাহাজ মালিক সমিতির সভাপতি আজম জে চৌধুরী বলেন, জাহাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে একই দেশে দুই ধরনের পতাকার অস্তিত্ব রয়েছে। আইন অনুযায়ী, সরকারি টাকায় কেনা পণ্য শুধু দেশের পতাকাবাহী সরকারি জাহাজ বহন করতে পারবে। তিনি প্রশ্ন করেন, তাহলে দেশের বেসরকারি জাহাজ কোন দেশের পতাকা বহন করে।

মূল প্রবন্ধে ড. জায়দী সাত্তার বলেন, দেশে জাহাজভাঙা শিল্প ও ছোট জাহাজ নির্মাণ খাত বড় জাহাজ নির্মাণের ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে। জাহাজ রপ্তানির জন্য প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলারের কার্যাদেশ আছে। জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে দুই বিলিয়ন ডলারের শিল্পে পরিণত করা সম্ভব। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন উন্নয়নশীল দেশের উপযোগী শিল্পের দিকে যেতে হবে। জাহাজ নির্মাণ শিল্প সেই শিল্প, যা টেকসই শিল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলবে।

Tags :

News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025