তারেক রহমানকে নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির এই নেতা বলেন, “তার বক্তব্যে প্রতীয়মান হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ কেউ সুকৌশলে তারেক রহমানের দেশে নিরাপদ প্রত্যাবর্তনকে অনিরাপদ করে তুলতে চায়।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২০০৮ সাল থেকেই যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে ঘোষিত সব সাজা ও মামলা বাতিল হয়ে গেলেও তিনি দেশে ফেরেননি। তিনি কেন ফিরছেন না বা ফিরতে পারছেন না, এই প্রশ্ন এখন জোরেশোরেই উঠেছে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর নেতারা প্রকাশ্যেই এখন এই প্রশ্ন তুলছেন।
রিজভী বলেন, “ড. খলিলুর রহমানের অজানা থাকলেও দেশবাসীর অজানা নয় যে, তারেক রহমানকে কী কারণে কোন পরিস্থিতিতে লন্ডন যেতে হয়েছে। সেখানে থেকে তারেক রহমানকে ‘বিশ্বের নিষ্ঠুরতম’ একটি জগদ্দল ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিতে হয়েছে।”
খলিলুর কী বলেছিলেন
খলিলুর রহমান বিদেশে নাগরিক বলে অভিযোগ এনে গত ১৭ মে তাকে অপসারণের দাবি করেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ।
বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, তিনি কেবল বাংলাদেশের নাগরিক। অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব দেননি।
এক পর্যায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উদাহরণও টানেন খলিলুর। তিনি বলেন, “কেবলমাত্র আমেরিকায় থেকেছি বলে যদি আমাকে বলা হয় আপনি বিদেশি নাগরিক, তাহলে তো কালকে তারেক রহমান সাহেবকেও সে কথা বলতে হয়।”
‘মানবিক করিডোরের কুশীলব’
খলিলুরকে মিয়ানমারের জন্য মানবিক করিডোর ও চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার ‘ষড়যন্ত্রের কুশীলব’ হিসেবেও তুলে ধরেন রিজভী। প্রশ্ন তোলেন, “কী করে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা’ হিসেবে নিয়োগ পান?”
খলিলুর ‘ধরাকে সরা জ্ঞান’ করতে শুরু করেছেন বলে মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, “তিনি হয়ত দেশি-বিদেশি কারও স্বার্থ চরিতার্থ করার মিশনে যুক্ত বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
“মানবিক করিডোর বা চ্যানেলের নামে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। তিনি (খলিলুর) বাংলাদেশকে অস্থির করার পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু আমরা তা হতে দেবো না “
রাষ্ট্র নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, “ড. খলিলকে অবিলম্বে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে দেশে-বিদেশে তার অবস্থান সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য দেশের জনগণের সামনে হাজির করতে হবে।”
আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকে আন্দোলন-সংগ্রামে দেশে-বিদেশে কোথাও খলিলুরের উপস্থিতি বা জোরালো বক্তব্য ছিল না বলে মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, “তার কাছে দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত কিনা এসব নিয়ে জনগণের জানার অধিকার রয়েছে।”
শেখ হাসিনাকে জনগণ প্রতিহত করেছে বলে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, “আমরা আর নতুন করে কোনো ‘প্রভুত্ববাদের’ অধীনতার নাগপাশে বন্দি হতে চাই না।’
‘উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন’
রিজভী বলেন, “ফ্যাসিবাদবিরোধী দীর্ঘ দেড় দশকের আন্দোলন সংগ্রামের সময় ড. খলিলের নাম কেউ কখনও শুনেনি। সুসময়ে হঠাৎ করেই তিনি উড়ে এসে জুড়ে বসে উপদেষ্টা হয়েছেন।”
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বক্তব্যে দেশের মানুষ বিস্মিত-হতবাক, উদ্বিগ্ন এবং ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদের প্রতিভূ হাসিনা যেভাবে গণতন্ত্রকে ‘কফিন পরিয়ে’ তথাকথিত উন্নয়নের ইন্দ্রজাল সৃষ্টির জন্য জিয়া পরিবারকে নিয়ে কুৎসা রটাতেন, উপদেষ্টার এই মন্তব্য যেন তারই পুনরাবৃত্তি।
“ড. খলিল তার নিজের পক্ষে ওঠা প্রশ্নের জবাব না দিয়ে পলাতক স্বৈরাচারের মতো তারেক রহমানের বিপক্ষে প্রোপাগান্ডার পথ বেছে নিয়ে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করেছেন। জনগণ এসব মেনে নেবে না।”