সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনাপ্রবাহ ঘটে গেছে। রাশিয়া আফগানিস্তানে তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই ঘোষণার পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এক ঘণ্টার ফোনালাপ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার ব্যাপক হামলা শুরু হয়, যা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অন্যতম বৃহত্তম হামলা।
তালেবানকে রাশিয়ার স্বীকৃতি: একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক মোড়
বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই, রাশিয়া বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ উপেক্ষা করে তালেবান প্রশাসনকে স্বীকৃতি দেয়। ২০২১ সালে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর প্রত্যাহারের পর তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর এটিই প্রথম কোনো দেশের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। মস্কোর এই পদক্ষেপকে আফগানিস্তানের বর্তমান নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপ: ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে আলোচনা
তালেবানকে স্বীকৃতির ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই বৃহস্পতিবার রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দীর্ঘ ফোনালাপ হয়। প্রায় এক ঘণ্টার এই আলোচনায় ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় বলে ক্রেমলিন জানিয়েছে। ট্রাম্প দ্রুত যুদ্ধ শেষ করার কথা বললেও, পুতিন তার মূল লক্ষ্য থেকে সরে আসবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন। ক্রেমলিনের মতে, পুতিন বলেছেন যে রাশিয়া তার লক্ষ্য অর্জন করবে এবং বর্তমান পরিস্থিতির “মূল কারণ” দূর করবে।
ফোনালাপের পরই ইউক্রেনে রাশিয়ার নজিরবিহীন হামলা
এই ফোনালাপের পরপরই ইউক্রেনজুড়ে রাশিয়া নজিরবিহীনভাবে ব্যাপক বিমান হামলা শুরু করে। ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত রাশিয়া ৫৫০টিরও বেশি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে, যা যুদ্ধের অন্যতম বৃহত্তম সম্মিলিত হামলা। এর মধ্যে ছিল ৩৩০টিরও বেশি ইরানি-নির্মিত শাহেদ ড্রোন এবং বিভিন্ন ধরণের ক্ষেপণাস্ত্র। কিয়েভ ছিল এই হামলার প্রধান লক্ষ্য। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামলায় অন্তত ২৩ জন আহত হয়েছেন এবং আবাসিক ভবন ও রেল অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই হামলাকে “গণহত্যা ও সন্ত্রাস” আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, এটি প্রমাণ করে যে বড় আকারের চাপ ছাড়া রাশিয়া যুদ্ধ ও সন্ত্রাস বন্ধ করবে না। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রাশিয়ার উপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন।
রাশিয়ার তালেবানকে স্বীকৃতি, ট্রাম্প-পুতিনের ফোনালাপ এবং এরপর ইউক্রেনে তীব্র হামলা – এই ঘটনাপ্রবাহ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে এবং বিশ্বজুড়ে পর্যবেক্ষকদের গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।