ঘুষের বিনিময়ে যুক্তরাজ্যে এসাইলাম: হোম অফিসের কর্মী কারাগারে

যুক্তরাজ্যের অভিবাসন প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি! অর্থের বিনিময়ে একজন বাংলাদেশি অভিবাসীর আশ্রয় আবেদন মনজুর করার দায়ে হোম অফিসের এক কর্মী ও সেই বাংলাদেশি নাগরিককে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা যুক্তরাজ্যের অভিবাসন ব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।

ঘুষের বিনিময়ে আশ্রয় মনজুর

হোম অফিসের ৩৯ বছর বয়সী কেসওয়ার্কার ইমরান মোল্লাকে মঙ্গলবার সাড়ে চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই ঘটনায় ২৩ বছর বয়সী বাংলাদেশি নাগরিক নুরুল আমিন বেগকে ১৮ মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

প্রেস্টন ক্রাউন কোর্টে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশি নাগরিক নুরুল আমিন বেগের আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যান হওয়ার একদিন পরই ইমরান মোল্লা তাকে ফোন করেন। মোল্লা অর্থের বিনিময়ে বেগকে যুক্তরাজ্যে থাকার অধিকার নিশ্চিত করার প্রস্তাব দেন।

এই প্রস্তাবের মাত্র ছয় দিনের মধ্যে, বেগ মোল্লার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১,৫০০ ব্রিটিশ পাউন্ড স্থানান্তর করেন। ম্যানচেস্টারে একটি এসাইলাম দলের অংশ হিসেবে কাজ করা মোল্লা, হোম অফিসের নীতি ভেঙে বেগের মামলাটি নিজের কাছে বরাদ্দ করেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে তার আশ্রয় আবেদন মনজুর করান। পরবর্তী কয়েক মাসে, বেগ তার সফল আশ্রয় আবেদনের বিনিময়ে মোল্লাকে মোট ৩,৫০০ পাউন্ড প্রদান করেন।

প্রতারণা ফাঁস ও বিচার

ইমরান মোল্লার এই অবৈধ কার্যকলাপের পর্দা ওঠে যখন তিনি একজন তুর্কি নাগরিকের উপর একই কৌশল প্রয়োগের চেষ্টা করেন। ২০২৪ সালের ৭ মার্চ, মোল্লা সেই তুর্কি নাগরিককে ফোন করে মিথ্যা পরিচয় দেন এবং জানান যে তার আশ্রয় আবেদন সম্ভবত প্রত্যাখ্যান হবে। তবে, ২,০০০ পাউন্ড দিলে তিনি সাহায্য করতে পারবেন বলে প্রস্তাব দেন।

সন্দেহভাজন তুর্কি নাগরিক তাৎক্ষণিকভাবে তার ইমিগ্রেশন সলিসিটরের সাথে যোগাযোগ করলে মোল্লার প্রতারণা ধরা পড়ে। এর ১২ দিন পর, ১৯ মার্চ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ইমরান মোল্লা যুক্তরাজ্যে অবৈধ অভিবাসনে সহায়তা, কম্পিউটার উপাদানে অননুমোদিত প্রবেশাধিকার এবং তিনটি ঘুষের অভিযোগে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন। নুরুল আমিন বেগও অবৈধ অভিবাসনে সহায়তা করার ষড়যন্ত্র এবং দুটি ঘুষের অভিযোগে দোষ স্বীকার করেন।

‘বিশ্বাসের অপব্যবহার’ এবং সি.পি.এস-এর বার্তা

সিপিএস নর্থ ওয়েস্টের সিনিয়র ক্রাউন প্রসিকিউটর ফ্রান্সেস কিলিন এই ঘটনাকে “বিশ্বাসের জঘন্য অপব্যবহার” বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, “ইমরান মোল্লা হোম অফিসের আশ্রয় দলে একটি অত্যন্ত বিশ্বস্ত অবস্থানে ছিলেন। তিনি সেই বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে অর্থের বিনিময়ে আশ্রয় আবেদনের ফলাফল পরিবর্তন করে নিজের পকেট ভরেন।”

কিলিন আরও যোগ করেন, “আমরা আশা করি এই মামলাটি একটি সুস্পষ্ট বার্তা দেবে – সিপিএস দুর্নীতি নির্মূল করতে আইন প্রয়োগকারী এবং অভিবাসন কর্তৃপক্ষের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

হোম অফিসের কঠোর প্রতিক্রিয়া

এই গুরুতর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হোম অফিসের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমরা আশ্রয় কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ মান আশা করি যাতে দাবিগুলি সঠিকভাবে বিবেচনা করা হয়, সিদ্ধান্তগুলো সঠিক হয় এবং যারা সত্যিই সুরক্ষা প্রয়োজন, তাদের সুরক্ষা দেওয়া হয়।”

তিনি আরও দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন, “যখনই অগ্রহণযোগ্য আচরণ পাওয়া যাবে, বিষয়টি সম্পূর্ণ তদন্ত করা হবে এবং যেখানে উপযুক্ত, সেখানে কঠোর বিচার প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।”

সূত্র: দা টেলিগ্রাফ 

Tags :

International News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

 People’s Agenda

Quick Links

Copyrights are reserved by NE News © 2025