সিরিয়ার দামেস্কে ব্যাপক বিমান হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বুধবারের এই হামলার লক্ষ্য ছিল সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা দক্ষিণ সিরিয়ার দ্রুজ জনগোষ্ঠীর ওপর সিরীয় সরকারি বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ওই বাহিনীকে অঞ্চলটি থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার বিকেলে দামেস্ক শহরের ওপর দিয়ে যুদ্ধবিমানগুলো নিচু হয়ে উড়ে গিয়ে একের পর এক বিশাল বিস্ফোরণ ঘটায়। শহরের আকাশ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ঘন ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যায়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, তারা সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান ফটকে হামলা চালিয়েছে। এর ঠিক আগে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, বেদনাদায়ক আঘাত আসছে।
গত এক সপ্তাহে দক্ষিণ সিরিয়ার সুয়েইদা শহরের আশেপাশে সরকারপন্থি বাহিনীর সঙ্গে দ্রুজ সংখ্যালঘুদের ভয়াবহ সংঘর্ষে বহু মানুষ নিহত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েল বারবার বিমান হামলা চালায় এবং ঘোষণা করে, তারা দ্রুজ সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে এসব করছে।
বুধবার ইসরায়েলের এক বিমান হামলা দামেস্কে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের পাশেই আঘাত হানে বলে রয়টার্সের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন।
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলের এই হামলা সিরিয়ার নিরাপত্তা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে চালানো হয়েছে। তারা আরও বলেছে, প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে অপসারণের পর সিরিয়া এখন শান্তিতে ফিরে আসার এবং বিশ্বের সঙ্গে একীভূত হওয়ার একটি ঐতিহাসিক সুযোগ পেয়েছে।
দ্রুজরা আরব সংখ্যালঘু একটি সম্প্রদায়, যাদের ধর্মের উৎপত্তি ইসলাম থেকে হলেও এটি স্বতন্ত্র এক বিশ্বাসে পরিণত হয়েছে। তারা মূলত লেবানন, সিরিয়া, ইসরায়েল এবং ইসরায়েল-অধিকৃত গোলান মালভূমিতে বসবাস করে।
সিরিয়ায় এই সম্প্রদায়ের বেশিরভাগই দক্ষিণের সুয়েইদা প্রদেশে থাকেন। তবে দামেস্ক ও উত্তর সিরিয়াতেও কিছু দ্রুজ জনগোষ্ঠী রয়েছে। এই সম্প্রদায়ের নিজস্ব পরিচয় ও একাদশ শতকে উদ্ভূত একেশ্বরবাদী ধর্ম রয়েছে, যা পুনর্জন্ম, সত্যের সন্ধান ও ইসলামসহ অন্যান্য দর্শনের উপাদানকে ধারণ করে। তাদের ধর্মীয় অনুশীলন অনেকটাই গোপন রাখা হয়।
ইসরায়েলে দ্রুজদের একটি ছোট সম্প্রদায় রয়েছে এবং গোলান মালভূমিতেও কিছু দ্রুজ বসবাস করে, যা ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল সিরিয়ার কাছ থেকে দখল করে নেয়।
ইসরায়েল ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা সিরীয় সরকারি বাহিনীকে ধ্বংস করে দেবে যদি তারা দ্রুজ সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালাতে থাকে।
সোমবার সিরীয় সরকার সুয়েইদা অঞ্চলে তাদের বাহিনী পাঠায় দ্রুজ যোদ্ধা এবং বেদুইন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান সংঘর্ষ থামাতে। কিন্তু পরে সেই বাহিনী নিজেরাই দ্রুজ মিলিশিয়াদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
ইসরায়েলের দ্রুজ সম্প্রদায়ের লোকজন সিরিয়ার দ্রুজদের রক্ষার জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে।
একজন দ্রুজ আধ্যাত্মিক নেতা মঙ্গলবার বলেন, সরকার বাহিনী তাদের সম্প্রদায়ের ওপর বর্বর আক্রমণ চালাচ্ছে। অপরদিকে সিরীয় সরকার দাবি করেছে, সহিংসতার জন্য দায়ী মূলত অবৈধ সশস্ত্র গ্যাং।
বাশার আল-আসাদ ক্ষমতায় থাকার সময় ইসরায়েল সিরিয়ায় নিয়মিত বিমান হামলা চালাত। আসাদ সরকার পতনের পর ইসরায়েল নতুন ইসলামপন্থি কর্তৃপক্ষকে হুঁশিয়ার করে বলেছে যে, তারা যেন দক্ষিণ সিরিয়ায় তাদের বাহিনী না পাঠায়।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা দ্রুজদের রক্ষা করবে এবং ইতোমধ্যেই গোলান মালভূমির পাশের সিরীয় ভূখণ্ডে সেনা পাঠিয়েছে।