সচিবালয় ও প্রেসক্লাব এলাকা ছেড়েছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকরা। তবে তারা সরকারকে এক মাসের আল্টিমেটাম দিয়েছেন। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি শুরু করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
বুধবার শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরারের সঙ্গে বৈঠক শেষে ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট’-এর সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজীজী এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
তিনি জানান, তাদের দাবি যৌক্তিক এবং তা আদায়ে ৩০ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দাবি মানা না হলে সর্বাত্মক আন্দোলনে যাবেন তারা।
এর আগে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সার্বজনীন বদলি নিয়ে ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে আয়োজিত সভায় এই কমিটি গঠন করা হয়। শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। দুপুর দেড়টার আগে শুরু হওয়া সভা শেষ হয় পৌনে ৩টায়।
সভায় কমিটির সভাপতি করা হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. মিজানুর রহমানকে এবং সদস্য সচিব করা হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব (মাধ্যমিক-২) সাইয়েদ এ জেড মোরশেদ আলীকে। এছাড়াও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে সদস্য রাখা হয়েছে।
দিনভর আন্দোলন ও আলোচনা
বুধবার সকাল ১০টা থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শিক্ষকরা ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট’-এর ব্যানারে এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়।
দুপুর নাগাদ সমাবেশ শেষে শিক্ষকরা সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করলে কদম ফোয়ারার কাছে পুলিশ বাধা দেয়। দুপুর ২ টা নাগাদ শিক্ষকরা প্রেসক্লাবে সামনে থেকে একটি অংশ বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৫ নম্বর গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা ব্যারিকেড দিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশের মুখ বন্ধ করে রাখে।
শিক্ষকরা এসময় শ্লোগানে শ্লোগানে তাদের দাবি দেশের সকল বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবি জানান।
আন্দোলনকারী শিক্ষকরা জানান, জাতীয়করণের দাবিতে তারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন। এর আগে ৪৪ দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেও কোনো সমাধান আসেনি। ২০১৮ সালে সরকার ৫ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ও ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতা দিলেও জাতীয়করণের মূল দাবিটি উপেক্ষিত থেকে গেছে বলে তারা অভিযোগ করেন।
লক্ষ্মীপুর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক আমিরুল ইসলাম বলেন, “আমরা ৪৪ দিন অবস্থান কর্মসূচি করেও দাবি আদায় করতে পারিনি।” রাজশাহী থেকে আসা শিক্ষক কালাম হোসেনের দাবি, “দেশকে সুশিক্ষিত ও সুরক্ষিত রাখতে হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণ জরুরি, না হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সারাজীবন অবহেলিত হবে।”
সমাবেশে বিএনপি, জামায়াত ও বামপন্থি কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারাও সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন।