প্রাণঘাতী সংঘাতে জড়িয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী দুই দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া সংঘাতে ইতোমধ্যে বেসামরিক নাগরিকসহ অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারী অস্ত্র নিয়ে সংঘাতে জড়িয়েছে দুই দেশই। সংঘাত থামাতে ইতোমধ্যে দুই দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীন ও মালয়েশিয়া।
এক বিবৃতিতে থাই সেনাবাহিনী জানিয়েছে, কম্বোডিয়ার হামলায় বেসামরিক নাগরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
দেশটি জানিয়েছে, সিসাকেট প্রদেশের কাথারালাক জেলায় একটি গ্যাস স্টেশনে হামলায় ছয় জন নিহত হয়েছেন। সুরিন প্রদেশের কাপ চোয়েং জেলায় হামলায় আট বছরের এক শিশুসহ দুজন নিহত হয়েছেন। রাচাথানি ও বুরিরাম প্রদেশে একজন করে মোট দুই জন প্রাণ হারিয়েছেন।
হামলায় আবাসিক ভবন ও গবাদিপশুদের ক্ষতি হয়েছে বলেও জানিয়েছে থাইল্যান্ড। এই হামলাকে ‘সহিংস কার্যক্রম’ হিসেবে অভিহিত করেছে থাইল্যান্ড।
হামলার অভিযোগের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি কম্বোডিয়া।
এদিকে থাইল্যান্ডের ‘আগ্রাসন’ বন্ধে জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক আয়োজন করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেট।
তিনি অভিযোগ তুলেছেন, কোনো উসকানি ছাড়াই থাই সেনারা কম্বোডিয়ার ভেতরে হামলা চালিয়েছে। থাই হামলা প্রতিহত করতে আত্মরক্ষামূলক জবাব দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
কম্বোডিয়ায় কেউ হতাহত হয়েছেন কি না সে বিষয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালের দিকে থাইল্যান্ডের প্রাচীন মন্দিরের শহর প্রসাত তা মুয়েনের কাছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সেনাদের মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে।
বিবিসি জানিয়েছে, দুই দেশের সেনারাই একে অপরের বিরুদ্ধে প্রথমে গুলি ছোড়ার অভিযোগ তুলেছে।
সংঘাতের আগেই কম্বোডিয়ার সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত বন্ধ করে দেয় থাইল্যান্ড। দেশটি জানায়, ভূমি মাইনে একজন থাই সেনার পা হারানোর প্রতিবাদে তারা কম্বোডিয়া থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। একই সঙ্গে কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকে নিজেদের দেশ থেকে বহিষ্কারও করেছে থাইল্যান্ড।
জবাবে কম্বোডিয়া জানায়, থাইল্যান্ডে তাদের কূটনৈতিক কার্যক্রম সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া দেশটির রাজধানী ব্যাংককের দূতাবাস থেকে সব কর্মীকে প্রত্যাহারও করা হয়েছে।
থাই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১৬ জুলাই দায়িত্ব পালনে সময় থাইল্যান্ডের সীমানায় ভূমিমাইনে এক সেনা পা হারান। এই ঘটনাটি ঘটেছে, থাইল্যান্ডের উবন রাচাথানি ও কম্বোডিয়ার প্রেহ ভিহার প্রদেশের মধ্যবর্তী বিরোধপূর্ণ সীমান্তে।
থাইল্যান্ড অভিযোগ তুলেছে, তাদের সীমানায় এসে ভূমি মাইন বসিয়েছে কম্বোডিয়া। এ ঘটনায় একজন তিন সেনা আহত হওয়ার কথা জানিয়েছে দেশটি।
তবে কম্বোডিয়া এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দেশটি বলছে, কয়েক দশকের যুদ্ধের সময় থেকে এসব মাইন পোঁতা ছিল। থাই সেনারা হয়তো ভুলে তাদের সীমানার বাইরে এসে পড়েছিল।
চলতি বছরের মে মাসে ছোট একটি বিরোধপূর্ণ সীমান্তে থাই সেনাদের সঙ্গে সংঘাতে কম্বোডিয়ার এক সেনা নিহত হন। এরপর থেকেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। সর্বশেষ প্রাণঘাতী সংঘাতে জড়ালো দেশ দুটি।