সমুদ্রের পানি ও জলজ প্রাণীর জীবনে হুমকি হয়ে দাঁড়ানো প্লাস্টিক দূষণ মোকাবেলায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছেন জাপানের একদল বিজ্ঞানী। তারা এমন এক ধরনের প্লাস্টিক উদ্ভাবন করেছেন, যা সমুদ্রের লবণাক্ত পানিতে পড়ে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সম্পূর্ণভাবে গলে যায়।
টোকিওর উপকণ্ঠে ওয়াকো শহরে অবস্থিত ‘রিকেন সেন্টার ফর ইমার্জেন্ট ম্যাটার সায়েন্স’ এবং টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা জানান, তারা যে প্লাস্টিক তৈরি করেছেন তা শুধু দ্রুতই গলে যায় না, বরং এটি গলে যাওয়ার পর পরিবেশে কোনও ক্ষতিকর উপাদান রেখে যায় না।
পরীক্ষাগারে গবেষকরা দেখিয়েছেন, নোনা পানির পাত্রে একটি ছোট প্লাস্টিকের টুকরো কেবল এক ঘণ্টা নাড়াচাড়া করলেই সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা বর্তমানে প্লাস্টিক বর্জ্য সংকট সমাধানে নতুন নতুন উপায় খুঁজছেন। এরই মধ্যে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে এ ধরনের উদ্ভাবনের গুরুত্ব আরও বেশি করে আলোচনায় উঠে এসেছে।
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) বলছে, ২০৪০ সালের মধ্যে প্রতি বছর ২ কোটি ৩০ লাখ থেকে ৩ কোটি ৭০ লাখ মেট্রিক টন প্লাস্টিক সমুদ্রে পড়বে—যা বর্তমানের তুলনায় তিনগুণ বেশি।
“শিশুরা কোন পৃথিবীতে বাস করবে, তা তাদের হাতে নেই। তাই তাদের জন্য সর্বোত্তম পরিবেশ রেখে যাওয়াই আমাদের—বিজ্ঞানীদের—দায়িত্ব,” বলেছেন জাপানের পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দেওয়া প্রধান গবেষক তাকুজো আইদা।
তিনি বলেন, “নতুন প্লাস্টিক পেট্রোলিয়াম-ভিত্তিক প্লাস্টিকের মতোই শক্তিশালী। কিন্তু লবণের সংস্পর্শে এলে গলে যায় এবং প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এতে পরিবেশে ক্ষতিকর মাইক্রোপ্লাস্টিক জমার ঝুঁকি নেই।”
আইদা জানিয়েছেন, এই প্লাস্টিকটিতে কোনও বিষাক্ত উপাদান নেই, এটি দাহ্য নয়, এবং এটি গলে যাওয়ার সময় কার্বন ডাই-অক্সাইডও নিঃসরণ করে না। এমনকি মাটিতে ফেলে রাখলেও এটি গলে যায়।
মাটিতেও লবণ থাকায় ৫ সেন্টিমিটারের একটি প্লাস্টিক টুকরো মাটিতে রাখলে ১০ দিনের মধ্যে সেটি গলে যাবে বলেও জানান তিনি।
এখনই এটি বাজারে আনার কোনও পরিকল্পনা নেই- বলেছেন, গবেষক আইদা। তবে প্যাকেজিং শিল্পসহ বিভিন্ন খাত ইতোমধ্যেই এই প্লাস্টিকের বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে।
তিনি বলেন, এই প্লাস্টিকের পৃষ্ঠে বিশেষ আবরণ দিলেই এটি সাধারণ প্লাস্টিকের মতো ব্যবহার করা সম্ভব। সেই আবরণ কীভাবে সবচেয়ে কার্যকরভাবে দেওয়া যায়, তা নিয়ে এখন গবেষণা চলছে।