আপনার কি মনে হয়, মানব সমাজ পুরুষতান্ত্রিক? যারা বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানের উপর নূন্যতম জ্ঞানও রাখেন, তারা এ বক্তব্যে সমর্থন করবে না। হাইপারগ্যামাস থিওরি বলছে, মানব সমাজ নারীতান্ত্রিক। উদাহরণস্বরূপ- একজন নারী যদি ফেসবুকে পোস্ট করে, আমি একাকীত্ববোধ করছি, আমার সঙ্গ প্রয়োজন, তাকে হাজার হাজার পুরুষ মেসেজ করবে। কিন্তু একজন পুরুষ যদি ফেসবুকে পোস্ট করে, আমি খুব একাকীত্ববোধ করছি, তাকে কি কোনো নারী মেসেজ করে? এ প্রশ্নের উত্তর আপনারা সবাই জানেন। গবেষণায় দেখা গেছে, একজন পুরুষকে যদি ১০০ সুন্দরী নারী প্রপোজ করে, সে আক্ষরিকার্থে তাদের কাউকেই ফিরিয়ে দিতে চায় না। কিন্তু একজন নারী ১০০ জন পুরুষের মধ্যে সবচেয়ে যোগ্যতম পুরুষকে নির্বাচন করে।
নারীর কাছে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করার জন্য পুরুষে পুরুষে তীব্র প্রতিযোগিতা ও সংঘর্ষ তৈরি হয়, যা আমাদের আধুনিক সিভিলাইজেশনের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করে। আমরা আজকের পৃথিবীতে সভ্যতা, প্রযুক্তি, শীল্প অথবা যুদ্ধ যা কিছুই দেখছি সবকিছু নারীর চয়েজ। পুরুষ সারাজীবন নারীর কাছে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে চায়, যেন নারী নিজেই পুরুষের যোগ্যতার প্রধান বিচারক।
ডেটিং অ্যাপের পরিসংখ্যান বলে, ৮০% নারী মাত্র ২০% পুরুষকে আকর্ষণীয় মনে করে। কিন্তু ৮০% পুরুষ প্রায় ৮০% নারীকে সঙ্গী হিসেবে গ্রহণযোগ্য মনে করে। এটি সরাসরি হাইপারগ্যামির প্রমাণ।
কিন্তু নারীর এই অপরিসীম ক্ষমতার পেছনে মূল শক্তি লুকিয়ে আছে তার ডিম্বাশয়ে। একজন পুরুষ একবার মাস্টারবেট করলে ৩০০ মিলিয়ন শুক্রাণু রিলিজ হয় আর একজন নারী সারাজীবনে মাত্র ২-৩ লাখ ডিম নিয়ে টিকে থাকে। নারীর গর্ভাশয়ে ডিমের পরিমাণ লিমিটেড হওয়ায় যৌনতার নির্বাচনের প্রধান বিচারক নারী। সে কার জিন গ্রহণ অথবা ত্যাগ করবে, এটা একান্তই তার নির্বাচন। সেক্সচুয়াল সিলেকশন থিওরি বলছে, নারী হলো পুরুষের সুপ্রিম পাওয়ার। পুরুষতন্ত্র যতই শক্তিশালী দেখাক, তার মূল এনার্জি এসেছে নারীর “Sexual selection” থেকে। পুরুষকে বাঁচতে হয়, লড়াই করতে হয়, প্রযুক্তি বানাতে হয়—কেন? যাতে নারী তাকে mate হিসেবে বেছে নেয়। তাই পুরুষতন্ত্রের যুদ্ধ, রাজনীতি ও সম্পদ দখল নারীর মস্তিষ্কের ডোপামিন নিঃস্বরণের উদ্দেশ্যে একপ্রকার বিজ্ঞাপন বা প্রদর্শনী।
নারী প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকেই বহুগামী। পুরুষ কখনো তার সন্তানের ব্যাপারে নিশ্চিত ছিল না, সে জানত না তার প্রেমিকার গর্ভে কার সন্তান। এজন্যই পুরুষতন্ত্র বিয়ে, সতীত্ব ও শালীনতার মতো কনসেপ্টগুলো তৈরি করেছে। কিন্তু এই পুরো কনস্ট্রাকশন এসেছে নারীর প্রজনন ক্ষমতা থেকে—অর্থাৎ, পুরুষতন্ত্র নারীর গর্ভাশয়কে কন্ট্রোল করার এক কৃত্রিম উপায়। তাই পুরুষতন্ত্র প্রকৃতির নয়; এটি নারীর প্রজনন ক্ষমতা অথবা রিপ্রডাক্টিভ ক্ষমতার প্রতি পুরুষের ভয়ের ফল।
নারী একদিকে “Long-term provider” (পুরুষ-১) বেছে নেয়, অন্যদিকে “Secretly superior genes” (পুরুষ-২) থেকে সন্তান নিতে চায়। এই “Double mating strategy” পুরুষতন্ত্রকে ভেঙে দেয়, কারণ পুরুষ যতই কন্ট্রোল করুক, নারীর জেনেটিক ফিল্টারকে ফাঁকি দিতে পারে না।

২০২০ সালে বিজ্ঞানীরা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণ করেছেন, নারীর গর্ভাশয়ে একসাথে ১০ জন পুরুষের শুক্রাণু রাখার পর, সে তাদের মধ্য থেকে সুপারিয়র পুরুষের শুক্রাণুর কাছে কেমিক্যাল সিগন্যাল পাঠায়, নারীর গর্ভাশয় তার প্রেমিকের শুক্রাণু চিনতে পারে না। একজন নারী ১০০ জন পুরুষের মধ্যে ফিল্টার করে ১ জন পুরুষকে নির্বাচন করার পরও, তার গর্ভাশয় পুনরায় সে পুরুষটিকে ফিল্টার করে ছাটাই করে দিতে পারে।
কখনো কি প্রশ্ন করেছেন, নারীর অর্গ্যাজম কেন হয়? মানলাম যে, পুরুষ শুক্রাণু রিলিজ করলে সন্তান জন্ম হয় কিন্তু নারীর অর্গ্যাজমের উপযোগিতা কোথায়? প্রকৃতি কেন নারীকে অর্গ্যাজমের মতো অপ্রয়োজনীয় একটি বৈশিষ্ট্য দিয়েছে? আসলে নারী অর্গ্যাজম তৈরি করলে পুরুষ মনে করে, সে আলফা পুরুষ, অসাধারণ ও সফল। নারীর অর্গ্যাজম পুরুষের মস্তিষ্কের ডোপামিন নিঃস্বরণ করে, তার ইগো বুস্ট করে। সে নিজেকে অন্য পুরুষ থেকে সেরা ভাবতে শেখে। আর পুরুষটি নারীর কাছ থেকে অর্গ্যাজম পাওয়ার জন্য আসক্ত হয়ে যায়, সে একটি গৃহপালিত প্রাণীর মতো আচরণ করে। একজন নারী যদি পুরুষকে অর্গ্যাজম দিতে অস্বীকার করে, পুরুষটি ডাউন ফিল করে, তার ইগো হার্ট হয় এবং সে ভেবে নেয় যে যৌনতার প্রতিযোগিতায় সে একজন পরাজিত পুরুষ। এটি পুরুষটির জীবনের আত্মবিশ্বাস ও অণুপ্রেরণা কমিয়ে দেয়, আর নারী পুরুষের এ দুর্বলতাকে ব্যবহার করে তার উপর এক অন্তহীন মনস্তাত্বিক নির্যাতন চালিয়ে যায়, এ নীরব মানসিক নির্যাতন ও অপমান সমাজের কাছে পুরুষ প্রকাশ করে না, কারণ সে অন্য পুরুষের কাছে ছোট হয়ে যাবে ও যৌনতার প্রতিযোগিতায় তার স্কোর হ্রাস পাবে। নারীর অর্গ্যাজম পুরুষের মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণের একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক কৌশল।
একজন পতিতা প্রতিদিন ২০-৩০ জন পুরুষের সাথে সেক্স করতে পারে। নারীর সেক্স ডিউরেশন পুরুষের চেয়ে বিপজ্জনক মাত্রায় বেশি। শুধু তাই নয়, একজন নারী মাল্টিপল অর্গ্যাজম তৈরি করতে পারে। এখান থেকে প্রমাণ হয়, ম্যাটিং মার্কেটে নারীর ভ্যালু পুরুষের চেয়ে বেশি। নারী তার সেক্স ডিউরেশন ও মাল্টিপল অর্গ্যাজম দিয়ে প্রতিনিয়ত পুরুষের ক্ষমতা ও সহনশীলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। সে সেক্সের সময় পুরুষের পেইন ও স্ট্রেস রেসপন্স সিস্টেমকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। পৃথিবীর প্রায় ৭০% পুরুষ তার পেনিস সাইজ ও পারফর্ম্যান্স নিয়ে আতঙ্কিত। তারা নারীর কাছ থেকে তার পেনিস ও পারফর্ম্যান্সের ভ্যালিডেশন পেতে চায়। যে নারী পুরুষের পেনিসের প্রশংসা করে, পুরুষ তার দাস হয়ে যায়। তারপরও কি আপনি বলবেন, মানব সমাজ পুরুষতান্ত্রিক?
একজন পুরুষের সম্পর্ক বিচ্ছেদ হলে সে খুব সহজে নতুন সঙ্গী পায় না, কিন্তু একজন নারী জাস্ট শব্দ করলেই শত শত পুরুষ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে যায়! এজন্য নারীর চেয়ে পুরুষের বিচ্ছেদের যন্ত্রণা তুলনামূলক বেশি। তারপরও কি আপনি বলবেন, মানব সমাজ পুরুষতান্ত্রিক? পুরুষ নতুন নতুন সঙ্গীর প্রতি দ্রুত আকৃষ্ট হলেও, তার পারফর্ম্যান্স খুবই খারাপ। নারী মাল্টিপল অর্গ্যাজম এবং দীর্ঘস্থায়ী ম্যাটিং ক্যাপাসিটি রাখে—অর্থাৎ বিবর্তনীয়ভাবে নারী সুপেরিয়র সেক্সচুয়াল ডিজাইন নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। এখান থেকে প্রমাণ হয়: “পুরুষতন্ত্র” নারীর যৌন সহনশীলতার প্রতি পুরুষের হীনমন্যতার প্রতিরক্ষামূলক কাঠামো। ধর্মে নারীর পবিত্রতা, হিজাব, ভার্জিনিটির মূল্যায়ন—এসবকে আমরা পুরুষতন্ত্র ভাবি। কিন্তু এর গভীরে আছে নারীর প্রজনন ক্ষমতাকে কন্ট্রোল করার ভয়। তাই ধর্ম পুরুষ বানালেও, এর “Entire architecture” নারীর গর্ভাশয়ের চারপাশে গড়ে উঠেছে।
নারী নিজেই সৌন্দর্যের প্রতিযোগিতায় অন্য নারীকে নিচে নামানোর চেষ্টা করে। পুরুষ কখনো কোনো নারীকে ডাউন করার চেষ্টা করেনি, নারী নিজেই নারীকে ডাউন করার চেষ্টা করেছে। নারী তার চেয়ে বেশি সুন্দরী বা আকর্ষণীয় নারীকে সামাজিকভাবে হেয় করতে, চরিত্রহীন প্রমাণ করতে, বা “স্লাট-শেমিং” করতে পিছপা হয় না। পুরুষ একে অপরকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করলেও, তাদের লড়াই সরাসরি ক্ষমতা, সম্পদ বা শক্তির। কিন্তু নারীর লড়াই মূলত সৌন্দর্য, যৌনতা ও সামাজিক স্ট্যাটাস ঘিরে। আধুনিক সোশ্যাল মিডিয়া নারী-নারী প্রতিযোগিতার সবচেয়ে বড় প্রমাণ: অন্য নারীকে ট্রোল করা, দেহ নিয়ে ব্যঙ্গ করা, বা হিংসাত্মক কমেন্ট করা।
তাহলে মূল ছবিটা এখন আমাদের কাছে পরিষ্কার—মানব সমাজ পুরুষতান্ত্রিক নয়, বরং গভীরভাবে নারীতান্ত্রিক। পুরুষ কেবলমাত্র বাহ্যিক কাঠামোতে শক্তিশালী মনে হয়, কিন্তু এর মূল চালিকা শক্তি হলো নারী। পুরুষ সারাজীবন লড়ছে, প্রতিযোগিতা করছে, শিল্প-সংস্কৃতি তৈরি করছে, যুদ্ধ করছে—সবকিছুই নারী তাকে নির্বাচিত করবে কি না সেই অদৃশ্য পরীক্ষার জন্য। নারী তার womb, অর্গ্যাজম, সৌন্দর্য ও হাইপারগ্যামির মাধ্যমে পুরুষকে গৃহপালিত প্রাণীর মতো বশীভূত করেছে। বিয়ে, সতীত্ব, শুদ্ধতা, ধর্মীয় বিধান—এসব কনসেপ্টের ভিতরেও আছে নারীর reproductive ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে পুরুষের ভয় ও অনিশ্চয়তা। আসলে মানব সমাজে কোনো পুরুষই নেই, জন্মের প্রথম ছয় সপ্তাহে প্রতিটি মানুষ ফেনোটাইপিক্যালি নারী, জন্মের ছয় সপ্তাহ পর Y ক্রোমোজমের SRY জিন সক্রিয় না হলে, প্রতিটি মানুষ তার ডিফল্ট মুডে নারী হয়ে জন্মায়।
রেফারেন্স:
1. Mate Preferences and Their Behavioral Manifestations
2. The Evolutionary Origin of Female Orgasm
3. Natural and Sexual Selection in a Monogamous Historical Human Population
4. Beauty and the Beast: Mechanisms of Sexual Selection in Humans
5. Sexual Selection and Physical Attractiveness
6. Female Orgasm Remains an Evolutionary Mystery
7. Sexual Selection by Male Choice in Monogamous and Polygynous Human Populations
8. Sex Differences in Human Mate Preferences Vary Across Sex Ratios
9. Female Orgasm and the Homology Concept in Evolutionary Biology
10. Cultural Sexual Selection in Monogamous Human Populations




