নেপথ্য গুরুর পাকা মাথা থেকে আসা তিনটি ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ করতে গিয়েছিল কিংসপার্টি।
এক- কয়েকদিন আগে থেকে আর্মি-পুলিশ দিয়ে ধরপাকড়ে পুরুষশূন্য করে বীরদর্পে সফল সমাবেশ করে বলা হতো ‘আওয়ামী ঘাঁটি চূর্ণ করে গোপালগঞ্জ জয় করেছি’।
দুই- সাধাারণ মানুষের প্রতিবাদ প্রতিহত করে বিশাল লোকসমাবেশ করতে পারলে ‘মার্চ টু টুঙ্গিপাড়া’ করা হতো।
তিন- সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ-প্রতিরোধ না করলে এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে পারলে বলা হতো ‘খোদ হাসিনার গোপালগঞ্জের মানুষও আমাদের বরণ করেছে’।
এর কোনোটি সফল হয়নি। কয়েকদিন আগে থেকে উসকানি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর মাজার ভাঙার আতঙ্ক ছড়িয়ে সভায় দাঁড়িয়ে চরম উসকানি দেয়া হয়েছিল “মুজিববাদ,মুজিববাদ; মুর্দাবাদ মুর্দাবাদ। মুজিববাদের মাটিতে দাঁড়িয়ে আমরা ঘোষণা করছি; ঐ মুজিববাদের আস্তানা জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও; ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও!” বলে।
ফলাফল জনগণের ফুঁসে ওঠা, হামলা করা এবং নিজেদের রক্তঘামের অন্নে লালিত-পালিত ‘পাকিস্তানি ভাবাদর্শের’ সেনাদের গুলিতে অকাতরে প্রাণ দেওয়া। সরকারি মতে নিহত ৪ জন। বেসরকারি এবং স্থানীয়দের মতে কমপক্ষে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
কোনও কোনও ক্রিমিনাল মস্তিষ্ক বলছে ‘সেনাবাহিনী গুলি চালানোর আদেশ দেয়নি, দিয়েছে কন্ট্রোলরুমে বসা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।’ এই ন্যাকা ন্যাকা ব্যাখ্যাকারদের জানা দরকার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবঃ ফিল্ড মার্শাল হলেও তিনি সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিতে পারেন না। তার দৌড় পুলিশ পর্যন্ত। ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার হাতে সেনাবাহিনীই নির্দেশ দিয়েছে এবং পয়েন্ট ব্লাঙ্ক-রেঞ্জ ফ্যাটাল কিলিং করেছে।
স্থানীয়দের কারও কারও মতে নিহতের সংখ্যা একশ’র ওপরে আজ দুপুর পর্যন্ত। বাড়ি থেকে ধরে এনে গুলি করা হচ্ছে। লাশগুলো ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন কিংবা গুম করা হচ্ছে। এখন শুধু গোপালগঞ্জ শহর নয়, কার্ফিউয়ের মেয়াদ বাড়িয়ে গোটা জেলা চষে বেড়াচ্ছে আড়াই হাজারের মত আর্মি ও দুই হাজারের মত পুলিশ। শ’পাঁচেক মানুষ এখনও নিখোঁজ। নদীতে সশস্ত্র বোট নিয়ে টহল দিচ্ছে আর্মি-নৌপুলিশ।
সামগ্রিক চিত্রটা একটি অক্যুপাইড জোনে কাইনেটিক অপারেশনের মত। ছোট্ট একটা জেলার উপর এমন বর্বরতা চলছে আর রাজধানীতে বসে রাজনীতিবিদরা সেমিনার করছে।
দেশের একটি জেলায় এত বড় রক্তক্ষয়ী ঘটনার পর সবচেয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন বিবৃতি দিয়েছে সিপিবি-বাসদ নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক জোট। বিশাল বিবৃতির কোথাও এতগুলো মানুষকে কারা হত্যা করল সে সম্পর্কে একটি শব্দও নেই!

গোপাালগঞ্জে এই মুহূর্তে যা চলছে তার স্ফূলিঙ্গ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশ্বের দেশে দেশে যেখানেই সশস্ত্র বাহিনী একতরফাভাবে এরকম অপারেশন চালিয়েছে, সেখানেই পাবলিক রেজিস্টেন্স গড়ে উঠেছে। দেশের দণ্ডমুণ্ডের কর্তাব্যক্তিরা হয়ত এখনও আইসবার্গের নিচের অংশটা দেখতে পাচ্ছেন না। তারা যে ‘আওয়ামী সর্বশেষ ঘাঁটি’ নির্মূল করতে গিয়ে দেশের মানুষকেই প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলছেন তা টের পাচ্ছেন না। নিউটনের ‘থার্ড-ল’ না ঘটা পর্যন্ত টের পাবেনও না।
মনজুরুল হক
১৯ জুলাই ২০২৫