শেখ হাসিনা ও কামালের মৃত্যুদণ্ড, দুঃখ পেয়েছি বলে হেসে দিলেন আইনজীবী

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তার বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগের দুটিতে মৃত্যুদণ্ড ও অপরটিতে আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় দেন ট্রাইব্যুনাল। এই মামলায় একটি অপরাধে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রাজসাক্ষী হওয়ায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ রায় দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন—বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

রায় ঘোষণার পরপরই আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় জমান সাংবাদিকরা। মৃত্যুদণ্ডের মতো কঠোর রায়ের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে রাস্ট্রপক্ষ দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত আসামী পক্ষের আইনজীবী মো. আমির হোসেন গম্ভীর স্বরে বলেন, “আমি এই রায়ে গভীরভাবে দুঃখ পেয়েছি। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে সর্বোচ্চ দণ্ড দেওয়া হলো।”

তবে, এই কথা বলার ঠিক পরপরই তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে মৃদু হেসে ওঠেন। উপস্থিত সাংবাদিকরা তাঁর এমন হাসির কারণ জানতে চাইলে তিনি আরও যোগ করেন, আমি দুঃখ পেয়েছি তাঁর (শেখ হাসিনার) জন্য, কিন্তু আইনের প্রতি আমার আস্থা আছে।

শেখ হাসিনাসহ এ মামলার তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলো হলো উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।

গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা এটিই প্রথম মামলা, যার রায় হয়েছে আজ। এই রায়ে মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান পলাতক। দুজনই এখন ভারতে অবস্থান করছেন। তবে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এই মামলার একমাত্র গ্রেপ্তারকৃত আসামি। তিনি এই মামলায় অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এই ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় প্রথম মামলা (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) হয়।

গত বছরের ১৭ই অক্টোবর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম বিচার কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। ওইসময় শেখ হাসিনাই মামলাটির একমাত্র আসামি ছিলেন। পরে এ বছরের মার্চে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সাবেক আইজিপিকে এ মামলায় আসামি করতে প্রসিকিউশনের করা আবেদন মঞ্জুর করে ট্রাইব্যুনাল।

গত ১০ জুলাই তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচ অভিযোগে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এই মামলায় আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী, আহত ব্যক্তি ও প্রতক্ষ্যদর্শী, আহতদের চিকিৎসা দানকারী চিকিৎসকসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এছাড়া শেখ হাসিনার কথোপকথনের অডিও, ভিডিও, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন, জব্দ করা গুলি ট্রাইব্যুনালে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।

সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গত ১২ অক্টোবর এ মামলার যুক্তি-তর্ক শুরু হয়। শেষ হয় ২৩ অক্টোবর। ওইদিন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার দাবি জানান চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম এবং অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

Tags :

News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025