বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সোমবার (১৭ নভেম্বর) রায় ঘোষণা করবে দেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্টার অফিস জানিয়েছে, সোমবার সকাল ১১টায় এ রায় উপলক্ষে আদালত বসবে।
শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার রায় সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। অন্য দুই আসামি হলেন প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও প্রাক্তন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলগত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বেলা ১২টা ৯ মিনিটে রায় ঘোষণার এই দিন নির্ধারণ করেন। চিফ প্রসিকিউটর মহম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদ-সহ অন্যরা আছেন ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে। বিচারপতি মহম্মদ শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মহম্মদ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী রয়েছেন ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হিসেবে। এই মামলার পক্ষে বিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হওয়ার পরেই রায়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
তিন অভিযুক্তের মধ্যে পুলিশের প্রাক্তন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছেন। শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। হাসিনার বিরুদ্ধে এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ৫৪ জন সাক্ষী।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে গণ-অভ্যুত্থানের সময় অশান্ত হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ। মৃত্যু হয় বহু মানুষের। ক্ষমতাচ্যুত হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মামলা দায়ের করা হয় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে।
মামলার পর ২০২৪ সালের ১৭ অক্টোবর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম বিচার কাজ অনুষ্ঠিত হয়। ট্রাইব্যুনাল সেই দিনেই মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। প্রথমে এই মামলায় শেখ হাসিনাই ছিলেন একমাত্র আসামি, পরে বাকিদের নাম জড়ায়।
শেখ হাসিনার এই মামলায় ৮৪ জনকে সাক্ষী করা হলেও ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন ৫৪ জন। আমির হোসেন তাঁদের সবাইকেই জেরা করেছেন। মামলায় তাঁদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনেছে প্রসিকিউশন। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ১২ মে রিপোর্ট জমা দেয়। মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার অভিযোগ রয়েছে। যার মধ্যে তথ্যসূত্র রয়েছে ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, বাজেয়াপ্ত তালিকা ও দালিলিক প্রমাণা ৪ হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ রয়েছে ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার।
আওয়ামী লীগের শাটডাউন
শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার প্রতিবাদে এবং এই আদালতের কার্যক্রম বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে রবিবার থেকে শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি, যা চলবে সোমবার পর্যন্ত।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বেআইনি আদালতে অবৈধ বিচারের নামে নাটকের রায়ের বিরুদ্ধে তাদের এই কর্মসূচি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দলটির সমর্থকরা এর সপক্ষে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছেন। তারা মানুষকে অবৈধ অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
সেনা মোতায়েন চেয়ে চিঠি
শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আশেপাশের এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক সেনা সদস্য মোতায়েন চেয়ে সেনা সদরে চিঠি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।
রবিবার সুপ্রিম কোর্টের জনসংযোগ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালে সেনা মোতায়েন চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের অফিস থেকে সেনা সদর দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এর আগে এই মামলায় রায়ের তারিখ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবারও সেনা মোতায়েন করতে চিঠি দেওয়া হয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে। সে অনুযায়ী সেনাও মোতায়েন করা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট ও ট্রাইব্যুনালে।
বিজিবি মোতায়েন
ঢাকাসহ চার জেলায় সার্বিক নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। ঢাকা ছাড়াও গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও মাদারীপুরে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক দায়িত্ব পালন করছে বাহিনীটি।
রবিবার দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম এ তথ্য জানান। শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে মাঠে রয়েছে বিজিবির টহল দল। প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।’




