সাংবাদিক, লেখক ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি শাহরিয়ার কবিরকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে ‘আইনি মানদণ্ড ভঙ্গ’ হওয়ার কথা বলেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল (ইউএনএইচআরসি)।
কাউন্সিলের ওয়ার্কিং গ্রুপ সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে তাকে মুক্তির পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শাহরিয়ার কবির এক বছরের বেশি সময় ধরে আটক আছেন, কিন্তু এখনও তার বিচারকাজ শুরু হয়নি।
নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তি–ইসিসিপিআরের উদ্ধৃতি তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, একজন আটক ব্যক্তির অর্থবহ ও নিয়মিত বিচারিক পর্যালোচনার অধিকার থাকতে হবে।
১১ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, তারা শাহরিয়ার কবিরের বিষয়ে জানতে চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে বার্তা পাঠিয়েছিল, যার জবাব দেওয়ার সময়সীমা ছিল ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে জবাব আসে ১৩ মে। নির্ধারিত সময়ে জবাব না আসায় তা আমলে না নিয়ে অন্যান্য প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করে ওয়ার্কিং গ্রুপ।
নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তি-ইসিসিপিআরের উদ্ধৃতি তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, একজন আটক ব্যক্তির অর্থবহ ও নিয়মিত বিচারিক পর্যালোচনার অধিকার থাকতে হবে।
টক শোতে কথা বলার ‘ভিত্তিহীন’ অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তুলে ধরে ইউএনএইচআরসি বলেছে, টক শোতে বক্তব্য দেওয়া আন্তর্জাতিক চুক্তির (আইসিসিপিআর) অধীনে মত প্রকাশের স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে, যতক্ষণ না তা অনুমোদিত সীমা লঙ্ঘন না করে।
অন্তর্বর্তী সরকার সেই সীমা লঙ্ঘন হওয়ার মতো কোনো প্রমাণ তুলে ধরেনি বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।
ইউএনএইচআরসি বলছে, শাহরিয়ার কবিরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো কীভাবে হত্যা বা হত্যাচেষ্টায় উসকানি হিসেবে কাজ করেছে, সরকার সে প্রমাণও হাজির করতে পারেনি।
কাউন্সিলের ওয়ার্কিং গ্রুপের পর্যবেক্ষণ বলছে, শাহরিয়ার কবির ‘চরমপন্থি মতাদর্শের’ বিরুদ্ধে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন, যার মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের সম্পর্ক বিষয়ক একটি তথ্যচিত্রও রয়েছে।
শাহরিয়ার কবিরের মুক্তির আহ্বান জানিয়ে ইউএনএইচআরসি অন্তর্বর্তী সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে, তারা যেন বিচারকাজে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিত করে। প্রয়োজনীয় ‘ক্ষতিপূরণ’ ও ‘পুনর্বাসনমূলক’ পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি এ লেখক ও গবেষকের অধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।
প্রসঙ্গত, জুলাই অভ্যুত্থানের পর ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকার বনানী এলাকা থেকে আটক করা হয় শাহরিয়ার কবিরকে। পরে জুলাই আন্দোলনের সময়কার একাধিক মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার দেখায়। সেই থেকে এই মানবাধিকারকর্মী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা কারাগারে রয়েছেন।




