লীগের ‘আত্মিয়’, বিএনপি-জামাতের ‘ঘনিষ্ঠ’, ইউনূসের ‘গ্যারান্টার’, ভারতের ‘নির্ভরযোগ্য’… আসলে জেনারেল ওয়াকার কাদের লোক?
এই প্রশ্নটি উঠলে নিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী অবস্থান থেকে সকলে একবাক্যে বলবেন- ‘তিনি দেশপ্রেমিক সেনাপ্রধান, তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষের লোক’। এর উত্তরে কাউন্টার উত্তর হলো- ‘যে কোনও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে শপথগ্রহণকারী। এটা কোনও এক্সট্রা অ্যাচিভমেন্ট নয়।
(ক) ৫ আগস্ট কার্ফিউ ব্রেক করে গণভাবন ঘিরে শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে উদ্যত মবকে প্রতিহত করতে আদেশ দেননি ওয়াকার। বরং এনএসএফ সরিয়ে নেন। এর আগে ৩ আগস্ট দরবার বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেন ‘সেনারা ছাত্রদের ওপর গুলি চালাবে না’। অর্থাৎ অভ্যুত্থানকারীদের পক্ষ নিলেন। ৪ঠা আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের প্রধান, সেনাপ্রধানও গণভবনে ছিলেন। তিনি শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, ‘কিছুই হবে না, আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো।‘ সেনাপ্রধান শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন- ‘আপনার সুরক্ষার দায়িত্ব আমার জিম্মায়।‘ সে সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেনাপ্রধানকে জিজ্ঞেস করেছিলেন- ‘আপনি কি সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিচ্ছেন?’ তিনি জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছিলেন।
(খ) সেই তিনিই কিছুক্ষণ পরে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদীর ফোন পেয়ে তাদের কথামত শেখ হাসিনাকে ৪৫ মিনিটের মধ্যে ‘তৈরি’ হতে বলেন। হেলিকপ্টার, ক্রুসহ সামরিক বিমানের ব্যবস্থা করে শেখ হাসিনাকে নিরাপদে ভারতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে দেন। অর্থাৎ তিনি শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন এবং ভারতের অনুরোধ মেনে তাদের গুডবুকে থাকলেন।
(গ) ৫ আগস্ট তিনি ঘোষণা দিয়ে জাতির দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে সবার আগে ডাকলেন জামাতকে, এবং তা ভাষণে বললেনও। এবার তিনি অভ্যুত্থানকারীদের সিংহভাগ ইসলামিস্টদের পক্ষ নিলেন।
(ঘ) ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসকে বিমানবন্দরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রিসিভ করলেন। প্রেসিডেন্টকে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের যাবতীয় ফর্মালিটিজ সম্পন্ন করলেন। ইউনূসকে ‘কনভিক্টেড’ বলেও ইউনূসের ব্যক্তিগত পছন্দের লোকজন নিয়ে গড়া সরকারকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে ইউনূসের পক্ষ নিলেন।
(ঙ) তার পর থেকে তিনি সরকারের সকল কাজের সমর্থন দিলেন। সুসম্পর্ক রাখলেন। ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার থাকার পরও তাঁর চোখের সামনে দেশে চলল অভূতপূর্ব মব ভায়োলেন্স। সারা দেশে লীগসহ ১৪ দলের নেতা-কর্মীদের হত্যা-জখম-গ্রেফতার-জেল-জুলুম চলল। ১৫ আগস্টের পর বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়ি ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ থেকে শুরু করে সারা দেশের মুক্তিযুদ্ধের, স্বাধীনতার, সেক্যুলারিজমের প্রতীক সকল ভাস্কর্য-ম্যুরাল-মূর্তি-অবকাঠামো ধ্বংস করায় কোনও বাঁধা দিলেন না। কোথাও কোথাও সেনা সদস্যরাও এসব ভাংচুরে সামিল হলেন। তবুও তিনি নির্বিকার। এসবের মাধ্যমে তিনি মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনাকে ধ্বংস করতে চাওয়া র্যাডিক্যাল ইসলামিস্টদের ‘নতুন বন্দোবস্ত’কে সমর্থন দিলেন।
(চ) দেশের সার্বিক অবস্থা যখন চরম নৈরাজ্যিক ও ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠেছে, তখন তিনি ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তাদের সামনে এক ভাষণে ‘আই হ্যাড এনাফ ইজ এনাফ’ বলে নিজের বিবেক জাগ্রত করার আশাবাদ শোনালেন। যাতে করে প্রতীয়মান হয় যে তিনি সরকারের এইসকল কর্মকাণ্ড সমর্থন করছেন না।
(ছ) এরই মধ্যে তাকে এবং প্রেসিডেন্টকে একাধিকবার সরিয়ে দেয়ার ইউনূস সরকারের উদ্যোগ দেখলেন। তার বিরুদ্ধে মিলিটারি ক্যু-এর আলামতও দেখলেন। তার মধ্যেই তিনি আমেরিকা-কানাডা সফর করে আসলেন। তারপর গেলেন রাশিয়ায়। মনে হলো তিনি ভারত-রাশিয়া অক্ষশক্তির ওপর নির্ভরশীল।
(জ) তিনি রাশিয়ায় থাকাকালিন ইউনূস খলিলুর রহমানকে ‘জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্ট’ নিয়োগ দিলেন। এই উপদেষ্টার প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট-ওয়াকারকে সরিয়ে দেওয়া। তার উপাদান হিসাবে এনসিপি’র লোকজন, এবি পার্টির নেতা তাঁকে বিশ্রীভাষায় কটুক্তি করল। আইএসআইপন্থী ফেলো লেফটেন্যান্ট জেনারেলকে দিয়ে তার বিরুদ্ধে ক্যু করানোর চেষ্টা হলো। আগাম গোয়েন্দা রিপোর্ট পেয়ে তিনি ক্ষমতা সংহত করলেন।
এর পরেই তিনি সেনা সদরে ‘দরবার’ ডেকে ১০টি পয়েন্ট উল্লেখ করে সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের তীব্র বিরোধীতা করলেন। বিশেষ করে রাখাইন করিডোর, সেন্ট মার্টিন, চট্টগ্রাম পোর্টের লিজ, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না করা নিয়ে আলটিমেটাম দিলেন- ‘ডিসেম্বরেই নির্বাচন হতে হবে’ বলে।
সবাই ধরে নিলেন ‘এত দিনে তাঁর ঘুম ভেঙেছে’! এবার তিনি যে কোনও সময় জরুরি আইন জারি করে ক্ষমতা হাতে নেবেন। বিস্ময়করভাবে সাধারণ মানুষও চায় যেন তিনি রাষ্ট্র ক্ষমতা হাতে তুলে দেশটাকে বাঁচান। কয়েকদিন ধরে যমুনা ও সেনা দপ্তরে ঘন ঘন মিটিং চলল। মনে হলো ইউনূস সরকার যে কোনও সময় পড়ে যাচ্ছে। ঠিক এই সময়ে ইউনূস পদত্যাগ নাটক করে গোটা পরিস্থিতি ফের নিজের দখলে নিয়ে নিলেন। সকল রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের এই নাটক বুঝেও দৃঢ় সমর্থন জানাল। জামাত, এনসিপি বাদে বিএনপিসহ অন্যান্য সকল দল বলল-‘ডিসেম্বরেই নির্বাচন হতে হবে’। সেটা যে পালিত হবে না তা বিএনপি ও অন্যান্য দলগুলো জানে। তার পরও জেনারেল ওয়াকারের ডিসেম্বরেই নির্বাচন দাবীকে কোনও দলই জোরাল সমর্থন দিল না। এই বাউটেও ইউনূস জয়ী হলেন।
তাহলে কি তিনি শেষ বিচারে ইউনূসের লোক? এই প্রশ্নের আগে দ্রুত দেখে আসা যাক ২২ মে পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ।
সেনাপ্রধানের তীব্র জ্বালাময়ী ভাষণের পরে যমুনাতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মুহাম্মদ ইউনূসের দফায় দফায় বৈঠক। ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক সেরেই জামাত নেতারা ছুঁটলেন সেনাপ্রধানের ডাকে সেখানে বৈঠক করতে (যা অভূতপূর্ব! যারা সেনাপ্রধানের রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়ার অধিকার নেই বলছিলেন তারা এবার চুপ)!
জামাতের বৈঠকের খবর প্রকাশ হলো না দুই দিনেও। ইউনূসের পদত্যাগ নাটক শেষ হলো সকল দলের সমর্থন পেয়ে ‘পদত্যাগ করছি না’ বলে। জেনারেল ওয়াকার ২২ মে আল্টিমেটাম দিয়ে মনে করলেন ‘ডোজটা কি কড়া হয়ে গেল!’ তাই ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে জামাতের সঙ্গে বৈঠক?
তিনি কিন্তু বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করলেন না! এর পর ওয়াকার আবারও সেনা কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন। এবার অন্য এক সেনা কর্তা প্রেস ব্রিফিংয়ে যা বললেন তার সঙ্গে ওয়াকারের ২২ মে’র বক্তব্যের মিল নেই। আইন করে আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত সচিব-কর্মকর্তাদের খেদিয়ে ছাত্রদের মধ্য থেকে কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে প্রশাসন চালানোর প্ল্যান। লীগ আমলের চাকরিতে যোগ দেওয়া সেনা কর্তাদের চাকরিচ্যুতির প্ল্যান। সচিবালয় বিক্ষুব্ধ, শিক্ষকরা মাঠে।
নজিরবিহীনভাবে প্রধান বিচারপতি সাক্ষাৎ করলেন ইউনূসের সঙ্গে। জামাতের নেতা এটিএম আজাহার বিশেষ আদালতে ফাঁসির দণ্ড মওকুফ পেয়ে জেল থেকে বেরিয়ে আসলেন। কার্যত জামাত আবারও নিশ্চিত করে দিল তারাই এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায়। এইরকম ডামাডোলের মধ্যেই মুহাম্মদ ইউনূস নিশ্চিন্তে চলে গেলেন জাপান সফরে। এরই মধ্যে বিভিন্নভাবে সরকার ও ওয়াকারকে ইসলামিস্টরা বুঝিয়ে দিল তারা সেনাবাহিনীকে মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত!
ওয়াকারের ‘মব চলতে দেওয়া হবে না’ ঘোষণার পরও সারা দেশে মব ভায়োলেন্স চলছে। এরই মধ্যে কয়েকজন জামিনপ্রাপ্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে সেনাপ্রধান বোঝালেন-তিনি মব চলতে দেবেন না, কিন্তু রাজশাহী, চট্টগ্রাম, ঢাকায় সদর্পে মব ভায়োলেন্স চলল, চলছে। ওয়াকার এসব ঠেকাতে পারছেন না। এর মধ্যে প্রণিধানযোগ্য মব ভায়োলেন্স হলো প্রাক্তন সিইসি কে এম নূরুল হুদার নামে মামলা দিয়ে গ্রেফতারের আগে স্বেচ্ছাসেবক দলের লোকজন জুতোপেটা করে, জুতোর মালা গলায় পরিয়ে দেওয়া হলো।
সর্বশেষ সরকারী মব হলো বিজয় সরণীতে সেনাবাহিনীর বানানো স্বাধীনতার ম্যুরালগুলো সেনাবাহিনীর সমর্থনে বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে ফেলা।
সম্ভাব্য কনক্লুশনঃ
মুহাম্মদ ইউনূস আমেরিকান ডিপস্টেটের মনোনীত ‘পাপেট’। ডিপস্টেট কি শুধুমাত্র একদল সুবিধাবাদী সিভিলিয়ানকে এনে বসিয়ে দিতে পারে সেনা সমর্থন ছাড়া? না, পারে না। সুতরাং ইউনূসকে বসানো, তাকে দিয়ে ডিপস্টেটের পারপার্স সার্ভ করার সকল প্ল্যানে ওয়াকারকেও তারা আমলের রেখেছে। ওয়াকার সামলাবেন ইন্ডিয়া, রাশিয়া, চীন, পাকিস্তান লবি, আর ইউনূস সামলাবেন পশ্চিমা বিশ্বের লবি। দুই গ্রুপের সঙ্গে দৃশ্যত বিবাদ থাকলেও দিন শেষে বৈরীতা নেই।
ইউনূস ভারতকে খুঁচিয়ে পাবলিক সেন্টিমেন্ট উসকে দিয়ে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের কার্ড খেলে নির্বাচন অনিশ্চিত করে ডিপস্টেটের অসমাপ্ত কাজগুলো করবেন মোটা টাকার বিনিময়ে। সেটাকে ‘কাভারআপ’ করবেন ওয়াকার ভারতকে আস্থায় রেখে, ভারতের সেনাপ্রধানের সঙ্গে সুসম্পর্ক ধরে রেখে।
নির্বাচন যত পেছাবে ততই জামাতের লাভ। তারা এখন যেভাবে নেপথ্যে থেকে পুরো সরকার চালাচ্ছে সেভাবেই চলবে। নির্বাচন যত পেছাবে ততই বিএনপি ধ্বংস হতে থাকবে। শুধু চাঁদাবাজী আর আঞ্চলিক ক্ষমতা দখলেই চুপ থাকতে হবে (আজহার খালাস পায় অথচ ইশরাকের মেয়র নিয়োগ আটকে যায়) ।
প্রশাসনের সকল সেক্টরে জামাতের লোকজন বসে গেছে। যতটুকু বাকি আছে তা সম্পন্ন হবে সরকারি চাকরিবিধির নতুন আইন জারি হলে।
জেনারেল ওয়াকার ভারতের লোক নন, লীগের লোক নন। বেগম খালেদার সঙ্গে বৈঠক, চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার সময় রাষ্ট্রীয় প্রোটোকল দেওয়া, সেনা প্রহরায় বিমান থেকে নামানোর ঘটনা থাকলেও তিনি বিএনপির লোকও নন। তাহলে তিনি কার লোক? কার্যত তিনি এবং ইউনূসের স্বার্থের মোটা দাগে পার্থক্য নেই। তিনি এবং ইউনূস দৃশ্যত মুখোমুখি অবস্থানে আছেন দেখালেও কার্যত দুজনের স্বার্থ এক এবং অভিন্ন। দুজনেই ডিপস্টেটের প্রিয়পাত্র।
ওয়াকার বহুবার বলেছেন-‘তাঁর কোনও রাজনৈতিক অভিলাষ নেই’। এই কথাটি বারে বারে প্রচার করার কারণ কি? রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই, ভ্যাকিউম বলেও কিছু নেই। দীর্ঘ ৩৯ বছরের সামরিক জীবনে তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদের পাশাপাশি নবম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং এবং সাভার এরিয়ার এরিয়া কমান্ডার। তিনি সেনাসদরে সামরিক সচিব এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও, তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনে প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার হিসেবে থাকাকালিনই তিনি রাজনীতির হাতি-ঘোড়া, উজির-নাজির সব্বাইকে দেখেছেন। তাতে করে অন্য কিছু কুকিং হতে পারে না?
উপসংহারঃ
হিউম্যান ফিলোসফির অন্যতম কাঙ্খিত লক্ষ্যটির নাম-ক্ষমতা। সেটা যদি রাষ্ট্রক্ষমতা হয় তাহলে এর সঙ্গে অন্য কোনোকিছুর তুলনা চলে না। গত ত্রিশ বছর ধরে মুহাম্মদ ইউনূসকে যারা জানেন তারা একমত হবেন যে তিনি ক্ষমতাপ্রত্যাশী। ‘পাকিস্তানের আদলে’ গড়ে ওঠা বাংলাদেশের সেনাবাহনীর শীর্ষ কর্তারা যে রাষ্ট্রক্ষমতা প্রত্যাশী সেটা এদেশে অনেকবার প্রমাণিত। ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনগুলোর তীব্র অসহযোগ আন্দোলন, বিএনপির অসহযোগিতা, ভারতের স্যাঙ্কশন, আমেরিকার চুপ থাকা, রাশিয়ার হুমকি, মিয়ানমারের হুমকি এবং ইইউ-এর সাহায্য না করার পরও ইউনূস সরকার টিকে আছে কার বলে? পুলিশ-আমলা-আদালত? মোটেও না। তিনি টিকে আছেন জেনারেল ওয়াকারের ‘দয়ায়’ কিংবা ‘প্রতিশ্রুতিবলে’। এক একবার তিনি বিবেকতাড়িত হয়ে দেশ রক্ষার জন্য ফুঁসে ওঠেন, আবার ‘ঘুমিয়ে’ পড়েন। অথচ রাজনীতি ‘অ’-‘আ’ পড়তে পারা মানুষও জানেন জেনারেল ওয়াকার সমর্থন তুলে নিলে মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার এক মুহূর্তও টিকবে না। অপমানিত, অবহেলিত ও ব্রাত্য হয়েও তিনি ধৈর্যের পারাকাষ্ঠা!
সুতরাং পূবাকাশ রাঙা দেখলেই ভোর হয়েছে ভাবার কারণ নেই। ভোর হতে আরও অনেক বাকি। ক্ষমতাচ্যুত দলটির নেতাকর্মীরা যদি মনে করেন ‘তিনি যেহেতু নেত্রীকে প্রাণে বাঁচিয়েছেন, সেই তিনিই একদিন নেত্রীকে এনে ক্ষমতায় বসিয়ে উপকারের প্রতিদান দেবেন’, তাহলে তারা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন।
মনজুরুল হক
২৮ জুন ২০২৫