সেনা হেফাজতে মেজর সাদিক, চলছে তদন্ত

আওয়ামী লীগের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন সেনাবাহিনীর একজন মেজর- এমন একটি খবর শুনে ব্যবস্থা নিয়েছে সেনাসদর। সাদিক নামে একজন মেজরকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে তারা।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেস ‘এ’-তে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা।

তিনি বলেন, মেজর সাদিকের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। যদিও বিষয়টি তদন্তাধীন আছে, তারপরেও আমি বলব, যে এরকম একটা ঘটনার কথা জানার পরে সেনাবাহিনীর হেফাজতে আছেন এবং তদন্ত চলমান আছে।

তদন্তে তার দোষ প্রমাণিত হলে সেনাবাহিনীর প্রচলিত নিয়মে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথাও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। বলা হয়, যেহেতু বিষয়টি তদন্তাধীন আছে এর বেশি এই মূহূর্তে বলা আমার মনে হয় সমীচীন হবে না।

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে হামলার তথ্য ছিল বলে সরকারের তরফে যে বক্তব্য এসেছে, সে বিষয়েও প্রশ্ন রাখেন সংবাদকর্মীরা। একজন জানতে চান, যদি তথ্য থাকে তাহলে হামলা ঠেকানো গেল না কেন, আর প্রাণঘাতি অস্ত্র ব্যবহারের পরিস্থিতি ছিল কি না।

জবাবে সেনা কর্মকর্তা নাজিম বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল কোথায় সমাবেশ করবে এটা ক্লিয়ারেন্স দিতে হবে স্থানীয় প্রশাসন থেকে। আমাদের কাছে এসব বিষয়ে কোনো তথ্য ছিল না। গোপালগঞ্জে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি ছিল। শুধুমাত্র ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়নি ককটেলও নিক্ষেপ করা হয়েছে। যখন সেখানে জীবননাশের হুমকি ছিল তখন আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বল প্রয়োগ করে। এখানে প্রাণঘাতী কোনো অস্ত্রের ব্যবহার করা হয়নি।

আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, গোপালগঞ্জে কী হয়েছিল সেটা উদঘাটনের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। আমরা আশা করি এই তদন্ত কমিটি সত্য এবং সঠিক ঘটানো উন্মোচন করতে পারবে।

এনসিপি যখন ঝামেলায় পড়েছে তখন সেনাবাহিনী নিরাপত্তা দিয়েছে আবার এখন শোনা যাচ্ছে সেনাবাহিনী তাদের আর নিরাপত্তা দেবে না- এই প্রচার কতটা সত্য- প্রশ্ন রাখেন অন্য এক সংবাদকর্মী।

জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম বলেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক দলকে বিশেষভাবে কখনও সহায়তা করিনি। আমাদের দায়িত্বের মধ্যে কাউকে বিশেষভাবে দেখি না। গোপালগঞ্জে যেটা হয়েছে ওখানে ওই রাজনৈতিক দলের জীবননাশের হুমকি ছিল। তাদের জীবন বাঁচানোর জন্যই সেনাবাহিনী সহযোগিতা করেছে। এখানে জীবন বাঁচানোই মূল লক্ষ্য ছিল, অন্য কিছু না।

এনসিপির নেতাদের জীবননাশের হুমকি ছিল বলে সেনাবাহিনী নিরাপত্তা দিয়েছে। অন্য অনেকের এ এরকম পরিস্থিতিতেও সেনাবাহিনী সক্রিয় থাকে কি না, এই প্রশ্নে তিনি আবার বলেন, আমাদের বিশেষ কোনো দলের প্রতি আলাদা কোনো নজর নেই। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর কাছে সকলেই সমান। যেখানে জনদুর্ভোগ ও জীবননাশের হুমকি থাকে সেখানে আমরা কঠোর হই বা জনসাধারণকে সহযোগিতা করি। গোপালগঞ্জে যদি আমরা সঠিকভাবে আমাদের দায়িত্ব পালন না করতাম তাহলে সেখানে অনেক হতাহত বা জীবননাশের ঘটনা ঘটতে পারত।

পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ি বিভিন্ন জাতির সশস্ত্র সংঘাতেকে সেনাবাহিনী কীভাবে দেখছে- এমন প্রশ্ন করা হলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজি বলেন, চাঁদাবাজি ও মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য বিভিন্ন দুষ্কৃতকারীরা এইটা করে থাকে। আমরা আমাদের কার্যক্রম ও অভিযান জারি রেখেছি। ভবিষ্যতেও আমাদের কার্যক্রম চলমান থাকবে।

বান্দরবানের আর্মি ক্যাম্প গুটিয়ে নেওয়া, কুকিচিন, আরকানা আর্মি ও বান্দরবানে অস্ত্র কেনা-বেচা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে এবং ভালোভাবে দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের বর্তমান ক্যাম্পগুলোতে আমাদের আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে যদি আমাদের ক্যাম্পের প্রয়োজন হয় তাহলে আমরা অস্থায়ী অপারেটিং বেইস করে আমরা আমাদের আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

এক প্রশ্নের জবাবে মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম জানান, মাদক ও চাঁদাবাজির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৫ হাজার ৫৭৬ জনকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছেন তারা।

তিনি বলেন, চাঁদাবাজ বা অন্যান্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব আইনশৃঙ্খলা এজেন্সিগুলোর সর্বাজ্ঞে দায়িত্ব পালন করার কথা তারা যদি কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করে তাহলে আরও কমে আসবে বলে আশা করি। সাথে সাথে আমাদের যে আভিযানিক দায়িত্ব আছে আমরা সেটা সর্বদা পালন করছি।

সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি এক সঙ্গে কাজ করে, তাহলে চাঁদাবাজির মতো অপরাধ কমে আসবে বলেও বিশ্বাস করার কথা জানান তিনি।

Tags :

News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025