আমাদের সরকার বিদেশি কেয়ার কর্মীদের ভিসা স্পনসর করবে: স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার জন সুইনি

অ্যাবারডিন, স্কটল্যান্ড: অক্টোবর ১৩, ২০২৫

স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার এবং স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির (এসএনপি) নেতা জন সুইনি যুক্তরাজ্য সরকারের কঠোর অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে এক যুগান্তকারী ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, স্কটিশ সরকার যুক্তরাজ্যে কর্মরত শত শত বিদেশি কেয়ার কর্মীর ভিসা স্পনসর করবে, যাতে তারা স্কটল্যান্ডের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সমাজসেবা খাতে কাজ চালিয়ে যেতে পারেন। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তিনি একদিকে মানবিকতার বার্তা দিলেন, অন্যদিকে ওয়েস্টমিনস্টারের প্রতি এক তীব্র রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন।

অ্যাবারডিনে অনুষ্ঠিত এসএনপি-র বার্ষিক সম্মেলনে জন সুইনি ঘোষণা করেন, “আমি আজ ঘোষণা করতে পারি যে স্কটিশ সরকার এই কর্মীদের স্পনসর করতে এগিয়ে আসছে। আমরা দক্ষ কর্মীদের স্পনসর করব যাতে তারা কাজ করতে পারে, কর দিতে পারে এবং স্কটল্যান্ডের কেয়ার হোমগুলি সচল রাখতে সহায়তা করতে পারে।”

তিনি জানান, এই কর্মীদের দ্রুত কাজে ফেরাতে স্কটিশ সরকার প্রায় ৫ লাখ পাউন্ড (£500,000) খরচ করবে। এই অর্থ কর্মীদের ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা দূর করতে এবং তাদের নতুন কর্মসংস্থানে সহায়তা করার জন্য ব্যবহার করা হবে।

একজন বৃদ্ধ মহিলাকে একজন কেয়ার ওয়ার্কার সাহায্য করছেন (সংগৃহীত ছবি)

ওয়েস্টমিনস্টারের নীতির তীব্র সমালোচনা

ফার্স্ট মিনিস্টার জন সুইনি যুক্তরাজ্য সরকারের সম্প্রতি গৃহীত ভিসা সীমিতকরণ নীতির তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি এই নীতিকে “গভীরভাবে ক্ষতিকর” বলে অভিহিত করে বলেন, এর ফলে হাজার হাজার কেয়ার কর্মী বৈধভাবে যুক্তরাজ্যে থাকা সত্ত্বেও কাজ হারিয়েছেন এবং মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

সুইনি বলেন, “হাজার হাজার কেয়ার কর্মী এখানে যুক্তরাজ্যে সম্পূর্ণ বৈধভাবে আছেন, কিন্তু কাজ হারিয়ে তারা কার্যত নিঃস্ব অবস্থায় পড়েছেন। অথচ আমাদের কেয়ার হোমগুলিতে কর্মীর জন্য হাহাকার চলছে।” উল্লেখ্য যে, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেক কর্মীদের কাজের সুযোগ দেওয়া যাচ্ছে না নতুন ইমিগ্রেশন নীতির কারনে। এই কর্মীরা কাজের সুযোগ পেলে দেশের সমাজ ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারতেন।

তিনি কঠোর ভাষায় মন্তব্য করেন, “স্কটল্যান্ডের প্রবীণ জনগণকে ওয়েস্টমিনস্টারের পক্ষপাতিত্বের মূল্য দিতে হবে না।” এর মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, স্কটিশ সরকার নিজেদের মানুষের প্রয়োজন মেটাতে ওয়েস্টমিনস্টারের ভ্রান্ত নীতির বিরুদ্ধে সরাসরি পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।

রাজনৈতিক বার্তা: স্বাধীনতার সপক্ষে নতুন যুক্তি

জন সুইনি তার বক্তৃতায় এই ঘটনাকে যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে স্কটল্যান্ডের সম্পর্ক নিয়ে বৃহত্তর বিতর্কের কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই ভিসা সংকট আবারও প্রমাণ করে যে যুক্তরাজ্যের অংশ হিসেবে স্কটল্যান্ড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং স্কটল্যান্ডের নিজস্ব চাহিদা উপেক্ষা করা হচ্ছে।

তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করেন, তিনি আগামী নির্বাচনে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা-কে প্রধান ইস্যু করবেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের অভিবাসন ও অন্যান্য নীতির কারণে স্কটল্যান্ডের নিজস্ব অর্থনীতি ও সমাজসেবা খাত যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তার একমাত্র সমাধান হল স্বাধীনতা।

স্বাধীন স্কটল্যান্ডের জন্য একটি আশাবাদী চিত্র তুলে ধরে সুইনি বলেন, দেশটির সাফল্যের ভিত্তি হবে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ:

১. স্বাধীনতা: নিজস্ব চাহিদা অনুযায়ী নীতি নির্ধারণের ক্ষমতা।
২. ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) পুনরায় যোগদান : একক বাজারে প্রবেশের সুবিধা এবং বৃহত্তর শ্রমশক্তি লাভ। ৩. কম খরচের নবায়নযোগ্য জ্বালানি: পরিবেশবান্ধব শক্তি থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জন এবং বিশ্বের দরবারে নেতৃত্ব দেওয়া।

ফার্স্ট মিনিস্টারের এই ঘোষণা একদিকে স্কটিশ সরকারের মানবিক মুখ তুলে ধরল, অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতি নিয়ে ওয়েস্টমিনস্টারকে এক কঠিন প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল। এই পদক্ষেপ স্কটল্যান্ডের রাজনীতিতে এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের গতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Tags :

International News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025