সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ থেকে সাদাপাথর চুরির সঙ্গে জড়িত স্থানীয় ৪২ জনকে চিহ্নিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির নেতারা। এ ছাড়া তালিকায় রয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কয়েকজনের নাম।
কমিশনের এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান ও অনুসন্ধান চালিয়ে তাদের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে বলে জানিয়েছে দুদক। দুদক সূত্রে জানা গেছে, সাদাপাথর চুরির ঘটনায় খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের কর্তব্যে অবহেলার তথ্যও পাওয়া গেছে।
দুদকের অনুসন্ধান অনুযায়ী পাথর লুটে জড়িত রয়েছেন বিএনপির ২০ নেতাকর্মী। তারা হলেন- সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিন, সদস্য হাজি কামাল (পাথর ব্যবসায়ী), কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান লাল মিয়া (পাথর ব্যবসায়ী), কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন ওরফে দুদু (পাথর ব্যবসায়ী), সিলেট জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক রুবেল আহমেদ বাহার (পাথর ব্যবসায়ী), সহসাংগঠনিক সম্পাদক মুসতাকিন আহমদ ফরহাদ (পাথর ব্যবসায়ী), কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মো. দুলাল মিয়া ওরফে দুলা, যুগ্ম আহ্বায়ক রজন মিয়া, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুবদল নেতা জসিম উদ্দিন, সাজন মিয়া, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কর্মী জাকির হোসেন, সদস্য মোজাফর আলী, মানিক মিয়া, সিলেটি জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মকসুদ আহমদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ওরফে শাহপরান, কোষাধ্যক্ষ (বহিষ্কৃত) শাহ আলম ওরফে স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম এবং পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমজাদ বক্স।
আরও জড়িত আছেন জামায়াতের দুই নেতা। তারা হলেন- সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির মো. ফকরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন।
এনসিপির দুই নেতার নামও উঠে এসেছে তালিকায়। তারা হলেন- সিলেট জেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দিন ও মহানগর প্রধান সমন্বয়কারী আবু সাদেক মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম চৌধুরী।
পাথরকাণ্ডে জড়িত আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন- সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কর্মী বিলাল মিয়া (পাথর ব্যবসায়ী), শাহাবুদ্দিন (পাথর ব্যবসায়ী), গিয়াস উদ্দিন (পাথর ব্যবসায়ী), কোম্পানীগঞ্জ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুল ওদুদ আলফু, কর্মী মনির মিয়া, হাবিল মিয়া ও সাইদুর রহমান।
অনুসন্ধানে সাদাপাথর চুরির সঙ্গে আরও যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে তারা হলেন– কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জের আনর আলী, উসমান খাঁ, ইকবাল হোসেন আরিফ, দেলোয়ার হোসেন জীবন, আরজান মিয়া, মো. জাকির, আলী আকবর, আলী আব্বাস, মো. জুয়েল, আলমগীর আলম ও মুকাররিম আহমেদ।
দুদক মহাপরিচালক ও মুখপাত্র মো. আক্তার হোসেন বলেন, প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যাপক ক্ষতিসাধনের অভিযোগে দ্রুত কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করবে দুদক। এর ভিত্তিতে কমিশন পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেবে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ভোলাগঞ্জ থেকে ১০ লাখ ঘনফুট পাথর চুরি হয়েছে। এর মধ্যে অতিমূল্যবান সাদাপাথর উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ ঘনফুট। গত এক বছরে সাদাসহ অন্যান্য পাথর চুরি হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ ঘনফুট। সাদাপাথর চুরির ঘটনা ধরা পড়ে গত ১০ আগস্ট। এরপর দুদক ভোলাগঞ্জে অভিযান চালায় গত ১৩ আগস্ট।