ভ্লাদিমির পুতিনের ৪৮ ঘন্টা ভারত সফর শেষ হয়েছে। যে সফরের দিকে শ্যেন দৃষ্টি রেখেছিল বিশ্বের বাকি পরাশক্তিগুলো, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। কেননা চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ে রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনে নিয়মিত, অথচ যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ; রাশিয়া ভারতে তেল বিক্রি করা টাকা দিয়ে ইউক্রেনে হামলার অস্ত্রের যোগান দেয়!
পুতিনের ভারত সফর চলাকালিনই যুক্তরাষ্ট্রের দুজন বাণিজ্য প্রতিনিধি ভারত সফর চূড়ান্ত করেছে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যে পিছিয়ে থাকতে চায় না। সে কারণে ট্রেড ডিল হোক বা না হোক যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বন্ধু থাকতে আগ্রহী।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা নিয়ে পুতিন স্পষ্টভাবেই মার্কিন সমালোচনা করে বলেছেন-‘রাশিয়া ভারতে জ্বালানি সরবরাহ ‘নিরবচ্ছিন্ন’ রাখতে প্রস্তুত, কারণ দিল্লি ট্রাম্পের মস্কোর তেল কেনা বন্ধ করার জন্য চাপের মুখে আছে।‘
যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার তেল কেনার উপর ২৫% অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে, তাদের যুক্তি-এর ফলে ইউক্রেনে মস্কোর যুদ্ধে অর্থায়ন করা হচ্ছে। পুতিন শান্তির মধ্যস্থতা করার জন্য মার্কিন প্রচেষ্টার মধ্যেই আবারও সতর্ক করে দিয়েছেন যে ইউক্রেনকে ডনবাস অঞ্চল থেকে সরে যেতে হবে, অন্যথায় রাশিয়া এটি দখল করবে।
দিল্লিতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে বক্তৃতাকালে পুতিন প্রশ্ন তোলেন যে, যখন আমেরিকা নিজেই মস্কো থেকে পারমাণবিক জ্বালানি কেনে, তখন তেল কেনার জন্য ভারতকে কেন শাস্তি পেতে হবে?
পুতিন পুনর্ব্যক্ত করেছেন রাশিয়া তামিলনাড়ু রাজ্যের কুদানকুলামে ভারতের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। ছয়টি ইউনিটের মধ্যে দুটি ইতিমধ্যেই গ্রিডের সাথে সংযুক্ত এবং চারটি নির্মাণাধীন। পুতিন বলেন-‘একবার সম্পূর্ণভাবে চালু হলে, এটা ভারতের সাশ্রয়ী মূল্যের জ্বালানি চাহিদা পূরণে বড় অবদান রাখবে। আমরা ছোট মডুলার রিঅ্যাক্টর, ভাসমান পারমাণবিক কেন্দ্র এবং চিকিৎসা ও কৃষিতে অ-শক্তি পারমাণবিক প্রযুক্তি সন্নিবেশ করেছি।‘
পুতিন আরও বলেছিলেন, রাশিয়া সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র দেশ যারা আজ ছোট পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সক্ষম।

তাদের দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পর বৈঠকে নেতারা বিবৃতি পাঠ করে জানান যে ভারত ও রাশিয়া ২০৩০ সাল পর্যন্ত একটি অর্থনৈতিক কর্মসূচিতে একমত হয়েছে। কোনও মেগা প্রতিরক্ষা চুক্তি ঘোষণা করা হয়নি, তবে জাহাজ নির্মাণ, বেসামরিক পারমাণবিক শক্তিতে বিনিয়োগ এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের ক্ষেত্রে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
চীনা মিডিয়া হাইলাইট করেছে যে পুতিনের ভারত সফর দিল্লি এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে উত্তেজনার ভেতরেই চলছে। ট্রাম্প বারবার ভারতকে রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এই চাপ সত্ত্বেও ভারতের গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি সরবরাহের প্রয়োজনীয়তায় ‘রাশিয়ার সাথে জ্বালানি সহযোগিতা ছিন্ন করছে না।‘
গ্লোবাল টাইমস সংবাদপত্র চীনের পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের লি হাইডংকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, রাশিয়া এবং ভারতের বিরুদ্ধে ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা এবং চাপ’ সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। তার মানে চীন মেনে নিয়েছে ভারতের ওপর আমেরিকার খবরদারিকে পুতিন থোড়াই কেয়ার করে।
রাশিয়া ভারতের পররাষ্ট্র নীতিতে ধারাবাহিকভাবে ‘কৌশলগত সুরক্ষা জাল’ হিসেবে কাজ করে আসছে। তবে আন্তর্জাতিক দৃশ্যপটে বড় ধরনের পরিবর্তনের কারণে ভারত ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক কতটা প্রসারিত করতে ইচ্ছুক তা অনিশ্চিত।
যদিও পুতিন-মোদী যুদ্ধবিমান বা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য কোনও মেগা চুক্তি ঘোষণা করেননি, তার পরও মনে করা হচ্ছে ভারত এক্ষেত্রে ‘চাণক্য নীতি’ অবলম্বন করেছে, অর্থাৎ কোনোধরণের চুক্তি স্বাক্ষরের আগে মিডিয়াকে না জানানো। মনে রাখা দরকার পুতিনের ২০০ জন সফরসঙ্গীদের মধ্যে রাশিয়ার সরকারি সমরাস্ত্র প্রতিষ্ঠানের সিইও ছিলেন, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের কর্ণধার ছিলেন এবং এস-৫৭ যুদ্ধবিমান নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সিইও ছিলেন। আর ছিলেন ৭ জন গুরুত্বপূর্ণ ক্যাবিনেট মন্ত্রী আন্দ্রেই বেলোসভ: প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, আন্তন সিলুয়ানভ: অর্থমন্ত্রী, ওকসানা লুট: কৃষিমন্ত্রী, আন্দ্রে নিকিতিন: পরিবহন মন্ত্রী, ম্যাক্সিম রেশেতনিকভ: অর্থনৈতিক উন্নয়ন মন্ত্রী, মিখাইল মুরাশকো: স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং ভ্লাদিমির কলোকোলৎসেভ: অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রী। এদের মধ্যে বিশেষ করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রে বেলোসভ ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছেন। যে বৈঠকে উপমহাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও উঠেছিল।
তারা প্রাথমিক সৌজন্য বিনিময় শেষেই যার যার মত ছড়িয়ে পড়েন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সে কারণে মনে করা হচ্ছে কোনও এক ফাইন মর্নিংয়ে হয়ত কোনও একটি মিডিয়ায় প্রকাশ হবে-ভারত রাশিয়া থেকে অমুক অমুক নতুন প্রজন্মের সমরাস্ত্র কেনার ডিল করে ফেলেছে।
এ ছাড়া আরও অনেক ঘোষণা ছিল, যার সবকটিই বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে ছিল যেমন, জাহাজ নির্মাণ, ভারতীয় নাবিকদের প্রশিক্ষণ মেরু অঞ্চলের জলে নতুন জাহাজ চলাচলের বিনিয়োগ, বেসামরিক পারমাণবিক শক্তি এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থে বিনিয়োগ।
পুতিন বলেছেন, তিনি বর্তমান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৬০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রাখার এবং আগামী বছরগুলোতে তা ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী, কারণ বর্তমান বাণিজ্যের পরিমাণ ভারতের ছাড়যুক্ত অপরিশোধিত তেল কেনার উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে।
এর বাইরে মোদী দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার রূপরেখা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তারা রাশিয়ায় দুটি নতুন ভারতীয় কনস্যুলেট খুলেছে এবং দুটি নতুন পর্যটন ভিসা প্রকল্প ঘোষণা করেছে। রাশিয়া টুডে বা RT টিভি চ্যানেল ভারতে একটি শাখা চালু করবে, যা ভারতীয়দের ‘বস্তুনিষ্ঠ তথ্য’ সম্প্রচারের মাধ্যমে রাশিয়া সম্পর্কে আরও জানতে সাহায্য করবে।

পুতিন বলেছেন, তিনি এবং মোদী বিদেশ নীতিতে সহযোগিতা করছেন – ব্রিকস দেশগুলোর জোটের মাধ্যমে – একটি ন্যায়সঙ্গত এবং ‘বহু-মেরু’ বিশ্বব্যবস্থাকে উন্নীত করার জন্য। এরই মধ্যে ‘রাশিয়া টুডে’ (RT) নিউজ নেটওয়ার্কের ইন্ডিয়া ব্যুরো আজ চালু হওয়ার ফলে ভারতীয়দের দেশে কী ঘটছে সে সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য সম্প্রচার করে রাশিয়া সম্পর্কে আরও জানতে সাহায্য করবে।
পুতিন তার বক্তব্য শেষ করেন এই বলে যে ‘রাশিয়ান প্রতিনিধিদল আলোচনার ফলাফলে সন্তুষ্ট, এবং এমন চুক্তিতে পৌঁছেছে যা রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে অংশীদারিত্বকে গভীর করবে।‘
দুই নেতার আলাপে আলাদা করে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ ওঠেনি, তবে ‘ভারত এবং রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে একে অপরকে সমর্থন করেছে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে’ বলে পুতিন আরও বলেন – ‘২০২৪ সালে মস্কোর ক্রোকাস সিটি হলে হামলাসহ বিভিন্ন হামলার কথা স্মরণ করা যায়, যে কারণে আমরা উভয় দেশই আঞ্চলিক ও বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এক হয়ে লড়তে অঙ্গিকারাবদ্ধ।
ভারতীয় রাষ্ট্রীয় জ্বালানি পরিশোধক সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন (IOC.NS), এবং ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (BPCL.NS), নতুন ট্যাব খুলবে, ক্রমবর্ধমান ছাড়ের কারণে জানুয়ারিতে রাশিয়ান তেল অ-অনুমোদিত সরবরাহকারীদের কাছ থেকে লোড করার জন্য আদেশ দিয়েছে। অর্থাৎ ভারত সুকৌশলে আমেরিকার রক্তচক্ষুকে ‘অনার’ দেখিয়েও তার তেল বাণিজ্য যথারীতি চালু রাখল।
উভয় দেশ যৌথ গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে স্বনির্ভরতার জন্য নয়াদিল্লির প্রচেষ্টার পাশাপাশি উন্নত প্রতিরক্ষা প্ল্যাটফর্ম উৎপাদনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তাদের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক পুনর্গঠনেও সম্মত হয়েছে। এর মধ্যে রাশিয়ান অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য খুচরা যন্ত্রাংশ, উপাদান, সমাবেশ এবং অন্যান্য পণ্যের ভারতে যৌথ উৎপাদন অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
ভারত বলেছে যে ট্রাম্পের শুল্ক অযৌক্তিক এবং অযৌক্তিক, মস্কোর সাথে মার্কিন বাণিজ্য অব্যাহত রাখার কথা উল্লেখ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনও বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মূল্যের রাশিয়ান জ্বালানি এবং পণ্য আমদানি করে, যার মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম তৈরি করা।
তেলের ক্ষেত্রে রাশিয়া যা হারায়, প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের ক্ষেত্রে আবার রাশিয়া তা লাভ করে। চীন এবং পাকিস্তানের সাথে তার সীমান্ত রক্ষা করার জন্য ভারত সামরিক সরঞ্জামের জন্য কয়েক বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। রাশিয়া ভারতের অস্ত্রের বৃহত্তম সরবরাহকারী; ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ব্যবহৃত বেশিরভাগ বিমান-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যুদ্ধবিমান, রাইফেল এবং ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার তৈরি।
ভারত শীর্ষ সম্মেলন চলাকালিন আরও কয়েকটি S-400 বিমান-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইউনিট কেনার ঘোষণা দিতে পারে। মে মাসে পাকিস্তানের সাথে ভারতের চার দিনের সংঘর্ষে S-400 এবং দূরপাল্লার ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। যদিও ভারত রাশিয়ার পাশাপাশি ফ্রান্স, সুইডেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল থেকে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র কিনে তার অস্ত্রের উৎস বৈচিত্র্যময় করে তুলছে, তবুও রাশিয়ান-উৎপাদিত সরঞ্জামগুলো তাদের বর্তমান মজুদের ৬০ শতাংশেরও বেশি।
আগেই বলা হয়েছে; পুতিনের এই সফরকে দুরবীন দিয়ে দেখছে আমেরিকা ও চীন। এর বাইরে আরও যাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ সেই দেশ তিনটি হচ্ছে তুরস্ক, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। এ বছরের গোড়ার দিকে প্যাহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পরে ভারত পাকিস্তানে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করলে তুরস্ক পাকিস্তানকে Bayraktar TB2, Bayraktar Kızılelma ও ANKA ড্রোন সরবরাহ করে না শুধু, সঙ্গে সেগুলো অপারেট করার জন্য সৈন্যও পাঠিয়েছিল। যাদের বেশ কয়েকজন নূরখান এয়ারবেস ধ্বংস হওয়ার সময় নিহত হয়েছে বলে মনে করা হয়, এবং তারপর থেকে ভারত তুরস্কের সঙ্গে সকল প্রকার ভ্রমণচুক্তি বাতিল করে।
আবার ভারত এটাও মনে করে যে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তুরস্ক প্রকাশ্যে বাংলাদেশকে এমন সব অস্ত্রশস্ত্র দিয়েছে যা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের কেনার কোনও কারণ নেই। পাশাপাশি পাকিস্তান তুরস্কে নির্মিত বিভিন্ন সমরাস্ত্র বাংলাদেশে সরবরাহ করেছে। তাই এই দুটি দেশ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে রাশিয়া-ভারত সামরিক চুক্তির ফলে ভারত নতুন করে কী কী সমরাস্ত্র দিয়ে তার যুদ্ধসম্ভার সাজাচ্ছে।
তুরস্ক এমন একটা দেশ যাকে রাশিয়া-ভারত কেউই বিশ্বাস করে না কারণ, খোদ তুরস্ক রাশিয়া থেকে সমরাস্ত্র কেনে, আবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ইউক্রেনকে Bayraktar TB2, Bayraktar Kızılelma ও ANKA ড্রোন সরবরাহ করে! ‘খলিফা’ এরদোগান আমেরিকা, রাশিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স, ইসরায়েল সবার সঙ্গেই অস্ত্র কেনা-বেঁচা করে, যার মূল উদ্দেশ্য মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে নিজেকে ইসলামের নয়া ‘খলিফা’ হিসাবে স্টাবলিস করা। সে কারণে তাদের যেমন ইসরায়েলের সঙ্গে শত্রুতা করতেও বাধে না, তেমনি ইসরায়েলকে শত্রু বলে ইরানের সঙ্গে বন্ধুত্বের ভান করতেও বাধে না। আর এই কাজে তাদের অন্যতম স্যাঙাত পাকিস্তান।

পুতিন কি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন?
পুতিনের ৪৮ ঘন্টার সফরসূচিতে যেসকল কর্মসূচি ছিল তাতে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের বিষয় ছিল না। ভারতীয় কিছু কিছু মিডিয়ায় এ সংক্রান্ত যে খবর প্রকাশ হয়েছে তা নির্ভেজাল গুজব। তবে পুতিন-মোদীর আলোচনায় অন্যভাবে উপমহাদেশের বিষয়টি উঠে এসেছে। পুতিন ভারতকে এই মর্মে আশ্বস্ত করেছে যে ভারত উপমহাদেশের ক্রমবর্ধমান জঙ্গি বিকাশে আক্রান্ত হলে রাশিয়া সর্বশক্তি নিয়ে ভারতের পাশে থাকবে এবং উভয় দেশ একসঙ্গে এই অঞ্চলের বিপজ্জনক জঙ্গিত্ববাদের বিকাশ দমনে কাজ করবে।
এর বাইরে রাশিয়া যেমন ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের কুদানকুলামে ভারতের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে, তেমনি বাংলাদেশের রূপপুরে রাশিয়ার সহায়তায় নির্মিত পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ চালু রাখবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ যদি প্রকল্পটি বন্ধ করে দিতে চায় তাহলে চুক্তি মোতাবেক বাংলাদেশকে বড় অংকের জরিমানা গুনতে হবে।
যখন ভারত রাশিয়া এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে উন্নীত করে এস-৫০০ এ যেতে চাচ্ছে, যখন ভারতেই রাশিয়ার সুপারসনিক এস-৫৭ যুদ্ধ বিমানের যন্ত্রাংশ নির্মান, অ্যাসেম্বলিং হতে চলেছে, যখন রাশিয়া-ভারত যৌথ উদ্যোগে নির্মিত ‘ব্রহ্মোস’ সুপারসনিক মিসাইল বিশ্ব র্যাংকিংয়ে ৫টির মধ্যে স্থান করে নিয়েছে, তখন পাকিস্তানের মত পারমানবিক শক্তিধর দেশেরও কপালে চিকণ ঘাম দেখা দিচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশের জঙ্গিদের ‘তুরস্ক ড্রোন’ ফ্যান্টাসি শেষ পর্যন্ত ফ্যান্টাসিই থেকে যাবে। চার ঘন্টায় কলকাতা দখল করে নিতে চাওয়া কিংবা ‘এখনই সেভেন সিস্টার্স’ ভেঙে বাংলাদেশের সঙ্গে জুড়ে নিতে চাওয়ার খায়েশ প্রদানকারী নিধিরাম সর্দারদের একটু ভাবনা-চিন্তা করার দরকার আছে বৈকি। অন্তত ভারতের ‘চিকেনস নেক’ সংলগ্ন সামরিক ডেপ্লয়মেন্ট দেখেও ভাবা উচিৎ তাদের নিজেদেরও দুটো ‘চিকেনস নেক’ রয়েছে এবং তা যে কোনও সময় ‘কাট অফ’ হয়ে যেতে পারে।




