যুদ্ধাপরাধ করছে আরএসএফ: জাতিসংঘ

সুদানের পশ্চিম দারফুরের গুরুত্বপূর্ণ শহর আল-ফাশির দখলের পর শত শত বেসামরিক নাগরিককে হত্যা ও গুমের অভিযোগ উঠেছে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) বিরুদ্ধে। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই ঘটনাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও সাহায্যকর্মীদের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, আরএসএফ যোদ্ধারা শহর দখলের পর পুরুষদের নারী ও শিশুদের থেকে আলাদা করে নিয়ে যায়, এরপরই শোনা যায় গুলির শব্দ। অনেককে জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছে জাতিসংঘ।

আল-ফাশির ছিল দারফুরে সুদানিজ সেনাবাহিনীর (এসএএফ) সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটি। এর পতনে প্রায় আড়াই বছরের সুদানি গৃহযুদ্ধ নতুন মোড় নিয়েছে।

রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রত্যক্ষদর্শী আলখেয়ার ইসমাইল জানান, আরএসএফ যোদ্ধারা উটে চড়ে কয়েকশ নিরস্ত্র পুরুষকে একটি জলাধারের পাশে নিয়ে গুলি চালায়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এই হত্যাকাণ্ডগুলো স্পষ্টভাবে জাতিগত বিদ্বেষনির্ভর প্রতিশোধমূলক হামলা।

এদিকে, মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) জানিয়েছে, পালানোর সময় প্রায় ৫০০ বেসামরিক ও সেনা সদস্যকে আরএসএফ হত্যা বা আটক করেছে। মুক্তিপণের বিনিময়ে আটকদের ছেড়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। মুক্তিপণের অঙ্ক ৫ থেকে ৩০ মিলিয়ন সুদানিজ পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে।

আরএসএফ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে একে ‘মিডিয়ার বাড়াবাড়ি’ বলে দাবি করেছে। বাহিনীর এক কমান্ডার জানান, বেসামরিক সেজে থাকা সেনাদের জেরা করা হয়েছে, তবে হত্যার অভিযোগ সত্য নয়।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, আল-ফাশির দখলের পর অন্তত ৬০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অনেকে পাশের তাওয়িলা শহরে আশ্রয় নিয়েছে, যেখানে শরণার্থীরা ধর্ষণ ও সহিংসতার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছে।

আল-ফাশিরের পতনের ফলে সুদান এখন কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত—আরএসএফ দারফুর ও পশ্চিমাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে, আর সেনাবাহিনী রাজধানী খার্তুম ও পূর্বাঞ্চলে অবস্থান নিয়েছে। ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে চলমান এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত এবং কমপক্ষে দেড় লাখ মানুষ নিহত হয়েছে।

এদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইতিমধ্যে দারফুরে আরএসএফের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে। জাতিসংঘের এক মুখপাত্র বলেন, আল-ফাশিরে যা ঘটছে, তা জেনিনা ও দারফুরে আগের গণহত্যার পুনরাবৃত্তি।

Tags :

International News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025