‘রুম না পেয়ে’ যুবদল নেতার হোটেল ভাঙচুর, নারীদের মারধর

ঢাকার মহাখালীর একটি হোটেলে ভিআইপি রুম ভাড়া না পেয়ে বারে ভাঙচুর ও দুই নারীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে যুবদল নেতা মনির হোসেনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পর ঢাকা মহানগর উত্তর বনানী থানার যুবদলের আহ্বায়ক পদ হারিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) প্রাথমিক সদস্যপদসহ দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করেছে সংগঠন। জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ ও দলের নীতি, আদর্শ ও সংহতি পরিপন্থী নানা অনাচারের কারণে মনির হোসেনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন ইতিমধ্যে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বহিষ্কৃত নেতাদের কোনো ধরনের অপকর্মের দায়-দায়িত্ব দল নেবে না। যুবদলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের তাঁদের সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা প্রদান এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উক্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা গেছে, শাড়ি পরা এক নারী হোটেলটির সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নিচে নামছেন। এ সময় বিপরীত দিক থেকে এক ব্যক্তি ওই নারীর পথ রোধ করে শরীরে আঘাত করছেন। তাঁর হামলায় ওই নারী মেঝেতে পড়ে যান।

ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ওই নারী যখন নিচে নামছিলেন তখন সিঁড়িতে তাঁর পেছনে আরেক নারীও দৌড়ে নামার চেষ্টা করছিলেন। তাঁকে পেছন থেকে ধাওয়া করছিলেন কয়েকজন। একজন তাঁকে ধরে নিচে ফেলে দেন। এরপর হামলাকারীরা সবাই মিলে মেঝেতে পড়ে যাওয়া দুই নারীকে আক্রমণ করেন। ভিডিওতে তখন ৮ থেকে ১০ জনকে দেখা যায়।

ভিডিওতে দেখা গেছে, যখন ওই দুই নারীর ওপর আক্রমণ করা হচ্ছিল তখন তাঁরা চিৎকার করছিলেন। দীর্ঘক্ষণ চিৎকারের সময় শুরুতে যাঁরা আক্রমণ করছিলেন তাঁদের কেউ কেউ ভিডিওটির সীমানার বাইরে চলে যান। আবার নতুন করে কয়েকজনকে সেখানে ঢুকতে দেখা যায়। এ সময় হোটেলটিতে ভাঙচুরের শব্দও পাওয়া যায়।

এর আগে নিজের ফেসবুক পেজে মনির হোসেনের অপকর্মের ভিডিও ফুটেজসহ একটি পোস্ট দেন সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের। সেখানে জুলকারনাইন সায়ের লেখেন, ‘গত ৩০ জুন ২০২৫, রাত ৮টা ৫ মিনিটের দিকে বনানী থানা যুবদলের আহ্বায়ক মনির খান মহাখালীর জাকারিয়া হোটেল-রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বারে এসে একটি ভিআইপি রুম ভাড়া নিতে চান। এ সময় সব ভিআইপি কক্ষে অতিথি থাকায় মনির খানকে রুম দেওয়া সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে মনির, জাকারিয়া হোটেলের বারে বসে খাবার ও মদ্যপান করেন এবং খাবারের শেষে স্থানীয় নেতা পরিচয় দিয়ে বিলে ডিসকাউন্ট দাবি করেন, হোটেল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ডিসকাউন্ট দিয়ে বিল দেয়। বিল পরিশোধের পর, তাঁকে ভিআইপি রুম না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে জাকারিয়া হোটেল এবং বারের স্টাফদের দেখে নেওয়ার হুমকি ধামকি দিয়ে চলে যায়। এই ঘটনার ধারাবাহিকতায়, গত ১ জুলাই রাত সাড়ে ৮টার দিকে, লিটন চৌধুরী নাহিদ যিনি মনির খানের ঘনিষ্ট বলে জানা যায়, তিনি জাকারিয়া হোটেল এবং বারে আগমন করেন এবং পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক, একটি গ্লাস হাতে নিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে ভেঙে ফেলেন এবং বারের স্টাফদের বলেন যে, ‘মনির ভাই তোদের হোটেলে আসছিল, তোরা মনির ভাইকে ভিআইপি কেবিন না দিয়ে অসম্মান করেছিস, আমরা মনির ভাইয়ের লোক, তোরা মনির ভাইকে চিনে রাখবি’, এই বলে পুরো বার ও রেস্টুরেন্টটিতে ভাঙচুর করে (যা ভিডিওতে দেখবেন) কর্মচারীদের এলোপাতাড়ি মারপিট করে তাদের হাতে, পায়ে, বুকে, পিঠে সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। পরবর্তীতে জাকারিয়া হোটেল এবং বারের স্টাফদের এই মর্মে হুমকি দেওয়া হয় যে, যদি এই বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করাহয়, তাহলে তারা তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেবে এবং স্টাফদের আরও মারধর করবে।’

তিনি আরও লেখেন, ‘এই ঘটনার সত্যতা জানতে আমি মনির খানকে ফোন করি এবং এ বিষয়ে জানতে চাই। তিনি বলেন, ৩০ জুন তিনি জাকারিয়া হোটেলে অ্যান্ড বারে গিয়েছিলেন এবং তাঁকে রুম না দেওয়া মনক্ষুণ্ন হন এবং স্টাফদের গালমন্দ করে সেখান থেকে বের হয়ে যান। তিনি আমাকে জানান, তিনি এই ঘটনায় বেশ অনুতপ্ত বোধ করছেন। মনির খান দাবি করেন, ১ জুলাই এর ঘটনার বিষয়ে তিনি অবগত নন, কে বা কারা এমন করেছে সেটা তাঁর জানা নেই।’

Tags :

News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025