ঢাকার কারওয়ান বাজারে অবস্থিত দৈনিক প্রথম আলো এবং দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে দুর্বৃত্তরা এই হামলা চালায়। এ ঘটনায় পত্রিকা দুটির প্রকাশনা বন্ধ রয়েছে। আজ পত্রিকা বাজারে দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
শুরুতে প্রথম আলো অফিসে অগ্নিসংযোগের পরে ডেইলি স্টারে হামলা চালানো হয়। পরে রাতে ঘটনাস্থলে যায় সেনাবাহিনী। তারা বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বিজিবি (বডার গার্ড বাংলাদেশ) সদস্যদের দেখা যায়। এরপর হামলাকারীরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ও ছায়ানট ভবনে গিয়ে ভাঙচুর করে।
রাত পৌনে ৩টার দিকে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীর হামলার প্রতিবাদ জানাতে ডেইলি স্টার ভবনের সামনে যান। এ সময় দুর্বৃত্তদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। পরে সেনাবাহিনী তাঁকে সরিয়ে নেয়।
জানা গেছে, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর একদল লোক শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে কারওয়ান বাজারের দিকে অগ্রসর হয়। মিছিলটি প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে পৌঁছে ঘেরাও ও বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। একপর্যায়ে তারা লাঠিসোটা নিয়ে প্রথম আলো কার্যালয়ে ভাঙচুর শুরু করে। হামলায় কার্যালয়ের বেশির ভাগ জানালার কাচ ভেঙে ফেলা হয়। রাত ১২টার দিকে বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে টেবিল-চেয়ার ও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র বাইরে রাস্তায় বের করে নিয়ে আসে এবং সেগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
প্রথম আলোর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, প্রথমা প্রকাশনা, প্রথমা ডটকম, বিজ্ঞাপন, হিসাব শাখা, চরকিসহ বিভিন্ন বিভাগ পুরোপুরি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের সময় দুর্বৃত্তরা ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘নারায়ে তাকবির’ ‘আল্লাহু আকবর’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
পরে তারা ডেইলি স্টার ভবনের দিকে যায়। সেখানে হামলা ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দেয়। ভবনটির নিচের তিনটি তলায় যখন আগুন জ্বলছিল, তখন প্রাণ বাঁচাতে সংবাদকর্মীরা ছাদে গিয়ে আশ্রয় নেন। ভবনের চারতলায় পত্রিকাটির নিউজ রুমে বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মী আটকে পড়েন এবং আগুনের ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের সদস্য এম এ শাজাহান রাতে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় ডেইলি স্টার ভবনে আগুন নেভানোর চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন স্থান থেকে ফোনকল পাচ্ছি। ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি টিম কাজ করছে। আগুন দেওয়ার খবর পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিস রওনা হলেও পথে বাধার সম্মুখীন হয়। ফলে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করতে দেরি হয়। ডেইলি স্টার ভবনে আটকে পড়া সংবাদকর্মীদের মধ্যে রাত আড়াইটা পর্যন্ত ১০ জনকে ক্রেন ব্যবহার করে উদ্ধার করা হয়েছে। আরও অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক ভবনটির ছাদে আটকা রয়েছেন।
ডেইলি স্টার ভবনে আটকে পড়া ডেইলি স্টারের সাংবাদিক জাইমা ইসলাম রাত ১টার দিকে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমি আর শ্বাস নিতে পারছি না। চারদিকে খুব বেশি ধোঁয়া। আমি ভেতরে আটকে আছি। তোমরা আমাকে মেরে ফেলছ।’
ছায়ানট ভবনে হামলা
বৃহস্পতিবার রাত ১টা ৪০ মিনিটের দিকে শতাধিক ছাত্র-জনতা ছায়ানট ভবনে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। তারা ভবনের দরজা, জানালা ও অন্যান্য সরঞ্জাম ভাঙচুর করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। অফিসে ঢুকে কম্পিউটার, ল্যাপটপ ভাঙচুর ও লুটপাট করে নিয়ে গেছে। বাইরে আগুন দিয়েছে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ আসে।




