ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্মিহাল পদত্যাগপত্র সংসদে জমা দিয়েছেন। মঙ্গলবার নিজের টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে তিনি পদত্যাগপত্রের একটি অনুলিপি প্রকাশ করে দলের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এবং প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে দীর্ঘদিন ধরে আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ জানান।
পদত্যাগের একদিন আগেই প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি তাকে নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেন। সোমবার এক ঘোষণায় জেলেনস্কি বলেন, ডেনিস শ্মিহালের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পদে মূল্যবান হবে।
শ্মিহাল ২০২০ সালের শুরুর দিকে প্রধানমন্ত্রী পদে আসেন। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতির আদেশে সাধারণ নির্বাচন এবং সংসদ নির্বাচন স্থগিত থাকায় তার মেয়াদ দীর্ঘায়িত হয়। এ পর্যন্ত তিনি দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করেন।
জেলেনস্কি সদ্য সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভকে সরিয়ে শ্মিহালকে নিয়োগ দেন। উমেরভ এর আগে রাশিয়ার সঙ্গে ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত আলোচনায় ইউক্রেনীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
প্রতিবেদনে জানা গেছে, উমেরভ এখন যুক্তরাষ্ট্রে ইউক্রেনের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। ২০২৩ সালে দুর্নীতির অভিযোগের মুখে পদত্যাগ করা প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলেক্সি রেজনিকভ বর্তমানে ন্যাটো-সম্পৃক্ত একটি এনজিওতে কর্মরত আছেন।
প্রধানমন্ত্রীর পদে শ্মিহালের উত্তরসূরি হিসেবে জেলেনস্কি মনোনয়ন দিয়েছেন অর্থনীতি বিষয়ক উপপ্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমান অর্থমন্ত্রী ইউলিয়া সভিরিদেঙ্কোকে।
৩৯ বছর বয়সী সভিরিদেঙ্কো সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সম্পাদনে আলোচনার কেন্দ্রে আসেন, যার মাধ্যমে মার্কিন কোম্পানিগুলো ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের উপর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অধিকার পায়।
ইউক্রেনের সংসদ ভেরখোভনা রাদা আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ চূড়ান্ত করতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নিকোলায় আজারভ অভিযোগ করেছেন, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সাংবিধানিক পদ্ধতি উপেক্ষা করে ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন দিয়ে সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভূমিকা অগ্রাহ্য করেছেন।
উল্লেখযোগ্যভাবে, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির মেয়াদ গত বছর শেষ হলেও, যুদ্ধকালীন জরুরি অবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি এখনও পদে বহাল রয়েছেন।
মঙ্গলবার ইউক্রেনের সংসদ আরও ৯০ দিনের জন্য মার্শাল ল ও সামরিক সমাবেশের মেয়াদ বাড়িয়েছে, যা আগামী ৫ নভেম্বর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। মাত্র একজন সংসদ সদস্য এ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেন।
প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশটির বিরোধীদলীয় নেতারা, সাবেক প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো, বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং পশ্চিমা গণমাধ্যম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
তাদের মতে, যুদ্ধকালীন ক্ষমতা দীর্ঘমেয়াদে ইউক্রেনের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। চলতি মাসের শুরুতে ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট এক প্রতিবেদনে জানায়, ইউক্রেন সরকার ‘অন্দরমহলের রাজনীতিতে’ জড়িয়ে পড়েছে এবং এর ফলে প্রশাসনের মধ্যে বিভাজন ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে।