পাথরকাণ্ডে ডিসিকে ওএসডি, ইউএনওকে বদলি

পাথর লুট নিয়ে দেশজুড়ে চলা সমালোচনার মুখে সিলেটের জেলা প্রশাসককে (ডিসি) বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তার স্থলে পদায়ন করা হয়েছে আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারোয়ার আলমকে। এ ছাড়া বদলি করা হয়েছে কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে।

শের মাহবুব মুরাদ গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর সিলেটের জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন। তার সময়েই সিলেটের জাফলং, ভোলাগঞ্জ ও সাদাপাথরসহ বিভিন্ন কোয়ারি থেকে ব্যাপক পাথর ও বালু লুটের ঘটনা ঘটে।

এর মধ্যে সম্প্রতি সাদাপাথরে নজিরবিহীন লুটপাট নিয়ে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এরপর থেকেই প্রশাসনের উদাসীনতা ও ব্যর্থতার বিষয়টি আলোচনায় আসে।

গতকাল রবিবার সরকারের বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পাথর লুটে স্থানীয় প্রশাসনের দায় রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পরিবেশ উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের পরদিনই সিলেটের জেলা প্রশাসককে বদলি করা হলো।

এদিকে, কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহারকে বদলি করা হয়েছে। পাথর লুটপাটের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন এই ইউএনও। লুট ঠেকাতে ব্যর্থতা ও উদাসীনতার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজাউন নবীর সই করা এক প্রজ্ঞাপনে আজিজুন্নাহারকে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় বদলি করা হয়েছে। অপরদিকে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ইউএনও মো. শফিকুল ইসলামকে কোম্পানীগঞ্জে পদায়ন করা হয়েছে।

আজিজুন্নাহার চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও হিসাবে যোগদান করেন। এরপর সাদাপাথর ও ভোলাগঞ্জে ব্যাপক লুটপাট হয়। এ নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। সমালোচনার মুখে গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটিতে ইউএনও আজিজুন্নাহারকে সদস্য রাখা হয়। যার বিরুদ্ধে লুটপাট ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে, তাকে কমিটিতে রাখায় এই কমিটি নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।

এদিকে, সম্প্রতি ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। যাতে দেখা যায়, আনসার সদস্যদের নিয়ে সাদা পাথরে অবস্থান করছেন ইউএনও আজিজুন্নাহার। আর তার সামনেই নৌকায় করে পাথর লুট করে যাওয়া হচ্ছে। এই লুটপাটে আজিজুন্নাহারকে কোনো বাধা দিতে দেখা যায়নি।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকেই ভয়াবহ লুটপাটের শিকার হয়েছে সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর এবং এর পাশের ১০ একরের রেলওয়ে বাঙ্কার। স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় শুরুর দিকে রাতে লুট হলেও সম্প্রতি দিনে-রাতে সব সময়ই হয়েছে পাথর লুট। ফলে একেবারে পাথরশূন্য হয়ে পড়েছে সাদাপাথর পর্যটন এলাকা। আর খানাখন্দে পরিণত হয় রেলওয়ে বাঙ্কার।

স্থানীয়দের মতে, এই দুই স্থান থেকে কমপক্ষে দেড় কোটি ঘনফুট পাথর লুট হয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য ২০০ কোটি টাকার বেশি। দেশজুড়ে আলোচনার মধ্যেই র‌্যাব, পুলিশ ও যৌথ বাহিনী সাঁড়াশি অভিযানে নামে। গত পাঁচ দিনে জাফলং ও সাদা পাথর থেকে লুট হওয়া প্রায় সাড়ে চার লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে।

Tags :

Staff Reporter

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025