ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে ফ্রান্স

আগামী সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফ্রান্স। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এই ঘোষণা দেবেন বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার সামাজিক মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে মাখোঁ এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি লেখেন, “মধ্যপ্রাচ্যে ন্যায্য ও টেকসই শান্তির পক্ষে ফ্রান্সের ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতি বজায় রেখে, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ফ্রান্স ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে।”

এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া ইউরোপের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশগুলোর একটি হতে যাচ্ছে ফ্রান্স। এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড এবং স্পেন একই ধরনের ঘোষণা দেয়।

জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৪২টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং জার্মানির মতো পশ্চিমা প্রভাবশালী দেশগুলো এখনও এই স্বীকৃতি দেয়নি।

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং সেখানে ত্রাণ অবরোধ নিয়ে ইউরোপে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের মধ্যেই এই ঘোষণা এলো। ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং মানবিক সহায়তায় ব্যাপক বাধার কারণে সেখানে চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

এই ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের ডেপুটি হুসেইন আল-শেইখ বলেছেন, “এই অবস্থান আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি ফ্রান্সের প্রতিশ্রুতি এবং ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অধিকারকে সমর্থন করার প্রতিফলন।”

হামাসও মাখোঁর এই ঘোষণাকে ‘ইতিবাচক পদক্ষেপ’ হিসেবে স্বাগত জানিয়ে অন্য দেশগুলোকেও একই পথ অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, “আমরা এটি আমাদের নিপীড়িত ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সুবিচারের পথে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখি।”

এদিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি “ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ও একটি দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পথে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে, যা ফিলিস্তিনিদের এবং ইসরায়েলিদের জন্যই শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।”

তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর মাখোঁর ঘোষণাকে ‘সন্ত্রাসকে পুরস্কৃত করার শামিল’ বলে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, “এই পরিস্থিতিতে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হবে ইসরায়েল ধ্বংসের জন্য একটি উৎক্ষেপণস্থল।”

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এই সিদ্ধান্তকে ‘লজ্জাজনক’ এবং ‘সন্ত্রাসের কাছে আত্মসমর্পণ’ বলে মন্তব্য করেছেন।

১৯৮৮ সালে প্রয়াত ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত একতরফাভাবে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করার পর আলজেরিয়া প্রথম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এরপর থেকে তালিকাটি দীর্ঘ হতে থাকে, বিশেষ করে ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এই প্রক্রিয়া আরও গতি পেয়েছে।

তবে ইসরায়েল বর্তমানে পূর্ব জেরুজালেমসহ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করে রাখায় এবং পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ অব্যাহত রাখায় একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাধা রয়ে গেছে।

Tags :

International News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025