বাংলাদেশের দেয়া লক্ষ্যটা খুব বড় ছিল না, মাত্র ১৩৪! কিন্তু রান তাড়ায় নেমে দলীয় ১৫ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে পাকিস্তান। তখন মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের জয়টা স্রেফ সময়ের ব্যাপার। অথচ চমক দেখিয়ে ম্যাচ প্রায় বের করে ফেলেছিলেন পাকিস্তানের ফাহিম আশরাফ। কিন্তু ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষকে সেই সুযোগ দেয়নি বাংলাদেশ। পাকিস্তানের নায়ক বনে যাওয়া ফাহিমকে থামিয়ে ম্যাচ জিতে নিয়েছে টাইগাররা।
সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে ৮ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ একটি ম্যাচ হাতে রেখেই ২-০ ব্যবধানে জিতল লিটন দাসের দল। আর তাতেই গড়া হলো ইতিহাস। পাকিস্তানের বিপক্ষে এই ফরম্যাটে এটাই প্রথমবার সিরিজ জয় বাংলাদেশের।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ম্যাচটিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে স্কোরবোর্ডে ৮ উইকেটে ১৩৩ রান তুলে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ স্কোরটা জাকের আলি অনিকের, চাপের মুখে ৪৮ বলে ৫৫ রানের ইনিংস খেলেছেন এই ব্যাটার।
রান তাড়ায় নেমে রীতিমতো মুখ থুবড়ে পড়ে পাকিস্তানের ব্যাটাররা। দলীয় ৯ রানেই হারিয়ে ফেলে জোড়া উইকেট। যার একটি রান আউটে, অন্যটি যায় শরিফুল ইসলামের ঝুলিতে। পরের ছয় রানের মধ্যে পাকিস্তান হারায় আরও তিনটি উইকেট। যার মধ্যে ওপেনার ফখর জামান পরিনত হন শরিফুলের শিকারে। হাসান নেওয়াজ ও মোহাম্মদ নেওয়াজকে তুলে নেন তানজিম সাকিব। মাত্র ১৫ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে লজ্জার রেকর্ড গড়ে ফেলে পাকিস্তান।
টি-টোয়েন্টিতে এর আগে কখনই এত কম রানে পাঁচ উইকেট হারায়নি পাকিস্তান। একই ভাবে বাংলাদেশও মাত্র ১৫ রানের মধ্যে প্রতিপক্ষের ৫ উইকেট তুলে নিতে পারেনি।
এত দ্রুত উইকেট হারানো পাকিস্তানের ষষ্ঠ উইকেট তুলে নেন শেখ মেহেদি। উইকেটে থিতু হওয়ার চেষ্টায় থাকা আগা সালমানকে লং অনে ক্যাচ বানিয়ে মাঠছাড়া করেন মেহেদি।
একের পর এক উইকেট হারানোর মিছিলে জয়ের কাছে যেতে পারেনি পাকিস্তান। মাঝে খুশদিল শাহ ও আব্বাস আফ্রিদিদের নিয়ে চেষ্টা করেন ফাহিম আশরাফ। কিন্তু তার চেষ্টা জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে তিনটি উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম। সাকিবের শিকারছিল দুটি। শেখ মেহেদিও নেন দুই উইকেট।
এর আগে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় পাকিস্তান। ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই ব্যর্থতার গল্প বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে। তামিমের বদলে একাদশে ঢোকা মোহাম্মদ নাঈম শুরুতেই দেন উইকেট উপহার। দ্বিতীয় ওভারেই ফাহিম আশরাফের বল খেলতে গিয়ে কিপার মোহাম্মদ হারিসের হাতে ক্যাচ দেন নাঈম (৩)।
পরের ধাক্কাটা দেন লিটন দাস। পঞ্চম ওভারে সালমান মির্জাকে মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে নেওয়াজের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন তিনি। ৯ বলে ৮ রান করে থামে অধিনায়কের ইনিংস।
একই ওভারে সালমানের পরের শিকার তাওহিদ হৃদয়। নতুন উইকেটে আসা হৃদয়কে রানের খাতা খোলার আগেই রান আউট করেন সালমান। ২৫ রানে তিন উইকেট হারানোর পর আরও হতাশা বাড়ান পারভেজ হোসেন ইমন। আগের ম্যাচের হাফসেঞ্চুরিয়ান আজ উইকেটে থিতু হওয়ার সুযোগ পেয়েও টিকতে পারলেন না। ১৪ বলে ১৩ রান করে শেষ হয় তার ইনিংস।
২৮ রানে চার উইকেট হারিয়ে মোটামুটি দিশেহারা বাংলাদেশের হয়ে হাল ধরেন শেখ মেহেদি ও জাকের আলি অনিক। উইকেট হারানোর ধাক্কা সামাল দিয়ে দুজন মিলে গড়েন ৫৩ রানের জুটি।
এই জুটিতে আবারও আলো দেখে বাংলাদেশ। উইকেটে থিতু হয়ে দুজনেই রানের গতি বাড়ান। তবে শেরেবাংলার মন্থর উইকেটে টি-টোয়েন্টি সুলভ খেলতে না পারলেও তাদের জুটিতে শুরুর ধাক্কা সামাল দেয় বাংলাদেশ। স্কোরবোর্ডেও আসে রান। কিন্তু এই জুটিও থিতু হয়ে লম্বা হয়নি।
দলীয় ৮১ রানে মেহেদির বিদায়ে ভাঙে জুটি। নেওয়াজের বলে লং অফে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন মেহেদি। ২৫ বলে ৩৩ রান করে শেষ হয় তার লড়াই। এরপর উইকেটে এসে ফিরে যান শামীম হোসেন। ১ রানেই তাকে বোল্ড করেন দানিয়েল। একের পর এক উইকেটের হারানোর মিছিলে শেষ পর্যন্ত জাকেরের ফিফটিতে লড়াইয়ের পুঁজি পায় বাংলাদেশ।
পাকিস্তানের হয়ে বল হাতে ১৭ রান দিয়ে দুটি উইকেট নেন সালমান মির্জা। সমান দুটি শিকার দানিয়েলের। আব্বাস আফ্রিদি, ফাহিম ও নেওয়াজ নেন সমান একটি করে উইকেট।