পাকিস্তানে ৪৮ ঘণ্টায় নিহত তিন শতাধিক

উত্তর পাকিস্তানে টানা ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্টি হয়েছে আকস্মিক বন্যা। এতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩২১ জনে দাঁড়িয়েছে।

শনিবার কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ৪৮ ঘণ্টায় অন্তত ৩২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ১৫ জন নারী ও ১৩ জন শিশু রয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ২৩ জন।

জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ৯ জন এবং উত্তরাঞ্চলীয় গিলগিত-বালতিস্তানে পাঁচজন নিহত হয়েছেন।

এ ছাড়া খারাপ আবহাওয়ার কারণে শুক্রবার একটি সরকারি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে দুই পাইলটসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানায়, শুধু খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে ৩০৭ জন মারা গেছেন। তাদের অধিকাংশই আকস্মিক বন্যা ও বাড়িঘর ধসে প্রাণ হারিয়েছেন বলে এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

প্রায় দুই হাজার উদ্ধারকর্মী ৯টি জেলায় উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন বলে প্রাদেশিক উদ্ধার সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে। কিন্তু এখনো বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

উদ্ধার সংস্থার মুখপাত্র বিলাল আহমেদ ফয়েজি বলেন, ‘ত্রাণ সরবরাহ অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠেছে। ভারি বৃষ্টিপাত, বিভিন্ন স্থানে ভূমিধস ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার কারণে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ভারী যন্ত্রপাতি ও অ্যাম্বুল্যান্স পরিবহন করা যাচ্ছে না। অধিকাংশ জায়গায় সড়ক বন্ধ থাকায় উদ্ধারকর্মীরা হেঁটে দুর্গম এলাকায় পৌঁছচ্ছেন।’

তিনি আরো জানান, ‘জীবিতদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টার করলেও অনেকেই যেতে চাইছেন না। তাদের স্বজনরা এখনো ধ্বংসস্তূপে আটকে রয়েছেন।’

খাইবার পাখতুনখোয়া প্রাদেশিক সরকার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ছয়টি পাহাড়ি জেলা বুনের, বাজউর, সোয়াত, শাংলা, মানসেহরা ও বাত্তাগ্রামকে দুর্যোগাক্রান্ত এলাকা ঘোষণা করেছে।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানে আরো ভারি বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে। এ ছাড়া জনগণকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

জাতীয় দুর্যোগ সংস্থার প্রতিনিধি সৈয়দ মুহাম্মদ তায়্যব শাহ বলেন, ‘এ বছরের বর্ষা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় আগে শুরু হয়েছে এবং দেরিতে শেষ হবে।’ তিনি আরো জানান, ‘আগামী ১৫ দিনে বর্ষার তীব্রতা আরো বেড়ে যাবে।’

বুনের জেলার বাসিন্দা আজিজুল্লাহ এএফপিকে বলেন, ‘আমি হঠাৎ পাহাড় ধসে পড়ার মতো শব্দ শুনলাম। বাইরে গিয়ে দেখি পুরো এলাকা কাঁপছে। মনে হচ্ছিল পৃথিবীর শেষ দিন এসে গেছে। পানি এত জোরে প্রবাহিত হচ্ছিল যে মাটি কেঁপে উঠছিল। তখন মনে হচ্ছিল মৃত্যুই সামনে দাঁড়িয়ে আছে।’

বুনের জেলার আরেক বাসিন্দা ও স্কুলশিক্ষক সাইফুল্লাহ খান বলেন, ‘পুরো এলাকা ভয়াবহ খারাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছে। আমরা এখনো নিশ্চিত নই, এই ছোট গ্রামে কে বেঁচে আছে আর কে মারা গেছে। আমি আমার পড়ানো শিশুদের মৃতদেহ উদ্ধার করছি। মনে হয়, প্রকৃতি যেন এই শিশুদের ওপর এক অসহনীয় পরীক্ষা চাপিয়ে দিয়েছে।’

মৌসুমি বৃষ্টি দক্ষিণ এশিয়ার কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তবে একই সঙ্গে এটি বিপর্যয়ও বয়ে আনে। জুন থেকে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ শেষ হয় এই মৌসুম। এ সময়ে ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যা প্রায় নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চলতি বর্ষায় জুন থেকে পাকিস্তানজুড়ে এখন পর্যন্ত ৬০০ জনেরও বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। জুলাই মাসে পাঞ্জাব প্রদেশে গত বছরের তুলনায় ৭৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই প্রদেশেই সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

Tags :

News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025