ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করবে পাকিস্তান

পাকিস্তান সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার ঘোষণা দিয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাত নিরসনে তাঁর ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের পেছনে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল সৈয়দ অসীম মুনিরের হোয়াইট হাউস সফর এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার বিরল মধ্যাহ্নভোজ বৈঠককে মূল কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আনা কেলি নিশ্চিত করেছেন যে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি পারমাণবিক সংঘাত রোধে ট্রাম্পের কথিত ভূমিকার জন্য পাকিস্তানের সেনাপ্রধান তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার প্রস্তাব দেওয়ার পরেই ট্রাম্প জেনারেল মুনিরকে আতিথেয়তা দেন।

এই বৈঠকটি একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কূটনৈতিক ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কারণ, ২০০১ সালে জেনারেল পারভেজ মোশাররফের পর এই প্রথমবার কোনো বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় একজন পাকিস্তানি সামরিক নেতা হোয়াইট হাউসে একজন ক্ষমতাসীন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। এই ঘটনাই ট্রাম্পের নোবেল মনোনয়নের সঙ্গে সরাসরি যোগসূত্র তৈরি করেছে।

কেন ট্রাম্পকে এই মনোনয়ন?

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ট্রাম্পের “সুদূরপ্রসারী কৌশলগত দূরদর্শিতা এবং অসাধারণ রাষ্ট্রনায়কত্ব” ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির মধ্যে দ্রুত অবনতিশীল পরিস্থিতি শান্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই হস্তক্ষেপ একজন প্রকৃত শান্তিস্থাপক হিসাবে তাঁর ভূমিকার প্রমাণ।”

গত মাসে, ট্রাম্পের আকস্মিক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চার দিনের সংঘাতের অবসান ঘটায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারবার দাবি করেছেন যে তিনি একটি পারমাণবিক যুদ্ধ এড়িয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন বাঁচিয়েছেন, এবং এ জন্য তিনি যথেষ্ট স্বীকৃতি পাননি বলে অভিযোগ করেছেন।

প্রশংসা ও সমালোচনা: মিশ্র প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তানের পার্লামেন্টের সিনেট প্রতিরক্ষা কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান, মুশাহিদ হুসেন, ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। রয়টার্সকে তিনি বলেছেন, “ট্রাম্প পাকিস্তানের জন্য ভালো। যদি এটি ট্রাম্পের অহংকে তুষ্ট করে, তবে তাই হোক। সমস্ত ইউরোপীয় নেতারা তাকে অনেক বেশি তোষামোদ করেছেন।”

তবে, যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মালিহা লোদি এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করে এটিকে “দুর্ভাগ্যজনক” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি X (আগের টুইটার)-এ লিখেছেন, “একজন ব্যক্তি যিনি গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যায় সমর্থন দিয়েছেন এবং ইরানের উপর ইসরায়েলের হামলাকে ‘চমৎকার’ বলেছেন… এটি আমাদের জাতীয় মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করে।”

উল্লেখ্য, ট্রাম্প প্রায়শই বারাক ওবামার সমালোচনা করেছেন, যিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে আট মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই ২০০৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন। ২০১৩ সালে, ট্রাম্প নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির কাছে এই পুরস্কার বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।


ইরান-ইসরায়েল সংযোগ: একটি কূটনৈতিক কৌশল?

পাকিস্তানের কিছু বিশ্লেষক পরামর্শ দিয়েছেন যে এই মনোনয়নের পেছনে একটি বড় কূটনৈতিক উদ্দেশ্য নিহিত। তাদের ধারণা, এই পদক্ষেপ মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ইসরায়েলের সাথে যোগ দিয়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সম্ভাব্য হামলা চালানো থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করতে পারে। উল্লেখযোগ্য যে, পাকিস্তান ইসরায়েলের ইরান আক্রমণের তীব্র নিন্দা করেছে এবং এটিকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি বলে অভিহিত করেছে।

ট্রাম্পের নোবেল আকাঙ্ক্ষা

ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও দীর্ঘদিন ধরে নোবেল শান্তি পুরস্কারের আকাঙ্ক্ষা করেছেন। গত শুক্রবার তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে তিনি পাকিস্তান-ভারত সংঘাত এবং তার প্রথম মেয়াদে ইসরায়েল ও কিছু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত আব্রাহাম অ্যাকর্ডসসহ বিভিন্ন সংঘাত সমাধানের দাবি করেছেন। তবে, তিনি আক্ষেপ করে লিখেছেন, “আমি যাই করি না কেন, আমি নোবেল শান্তি পুরস্কার পাব না।”

Tags :

International News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

 People’s Agenda

Quick Links

Copyrights are reserved by NE News © 2025