ভেস্তে গেল পাকিস্তান-আফগানিস্তান শান্তি আলোচনা

চারদিন ধরে চলা শান্তি আলোচনা শেষে স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে পারেনি দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। শান্তি চুক্তিতে পৌঁছাতে তুরস্ক ও কাতারের মধ্যস্থতায় ইস্তাম্বুলে ধারাবাহিক আলোচনা শেষে কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি দুই দেশ।

আলোচনা সফল না হওয়ার জন্য আফগানিস্তানকে দোষারোপ করেছে পাকিস্তান। অন্যদিকে আফগানিস্তানও দুষছে পাকিস্তানের প্রতিনিধি টিমকে। এ অবস্থায় দেশ দুটির মধ্যে চলমান উত্তেজনার বরফ সহসা গলার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না বিশ্লেষকরা।

যদিও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলছেন, দুই দেশকে পূর্ণাঙ্গ সংঘাত থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য ‘শেষ চেষ্টা’ অব্যাহত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে দোহায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকরের পরও তা আলোর মুখ না দেখায় দেশ দুটির মধ্যে নতুন করে শত্রুতার আশঙ্কা আরও প্রবল হয়ে উঠছে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

পাকিস্তানি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোমবার প্রায় ১৮ ঘণ্টা ধরে আলোচনা হয়েছে। তারা ইসলামাবাদের মূল দাবি- কাবুলের তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আফগান প্রতিনিধি দলের অবস্থান পরিবর্তন করার অভিযোগ এনেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আল জাজিরাকে একজন কর্মকর্তা বলেছেন, আফগান দলের জন্য ‘কাবুল থেকে পাওয়া নির্দেশনা’ আলোচনাকে জটিল করে তুলছে।

তবে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পেছনে পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলের ‘সমন্বয়ের অভাবকে’ দায়ী করেছে আফগানিস্তান। দেশটির গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, পাকিস্তানি পক্ষ ‘স্পষ্ট যুক্তি উপস্থাপন করছে না’। তারা ‘আলোচনার টেবিল ছেড়ে চলে যাচ্ছে।’

আলোচনায় আফগান দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক বিষয়ক উপমন্ত্রী হাজি নাজিব, যদিও পাকিস্তান তাদের প্রতিনিধিদের নাম প্রকাশ্যে প্রকাশ করেনি।

এদিকে আলোচনায় যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর পাকিস্তানি জনগণের সুরক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার। আজ বুধবার সামাজিক মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে বলেন, ‌‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে আফগানিস্তানের দিক থেকে কোনো আশ্বাস পাওয়া যায়নি। তারা মূল বিষয় থেকে সরে গেছে। দোষারোপ ও ছলচাতুরী করেছে। এভাবে আলোচনায় কোনো কার্যকর সমাধান পৌছানো যায়নি।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান শান্তির মনোভাব নিয়েই আফগানিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিল। তিনি কাবুলকে ‘পাকিস্তানবিরোধী সন্ত্রাসীদের প্রতি অবারিত সমর্থন’ দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করে বলেন, আমরা সন্ত্রাসবাদের হুমকি থেকে আমাদের জনগণকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সম্ভাব্য ব্যবস্থা নেওয়া অব্যাহত রাখব।

৯ অক্টোবর কাবুলে বিস্ফোরণের ঘটনায় তালেবান কর্তৃপক্ষ পাকিস্তানকে দায়ী করে। এরপরই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক সীমান্ত সংঘাত শুরু হয়। তালেবানের দাবি, কাবুলে পাকিস্তান বিমান হামলা চালায়। এর জবাবে সীমান্তে গুলি ছোঁড়া হয়। আর পাকিস্তানের দাবি, তালেবান বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি চালিয়েছে। ফলে সেনারাও পাল্টা জবাব দিতে বাধ্য হয়।

প্রাথমিকভাবে ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর, ১৯ অক্টোবর দোহায় আলোচনার মাধ্যমে দ্বিতীয় দফায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। পরে শান্তিচুক্তিতে পৌঁছাতে ইস্তাম্বুলে আলোচনার আয়োজন করা হয়।

পাকিস্তান ও আফগান তালেবান এক সময় যৌথ নিরাপত্তা স্বার্থের কারণে মিত্র ছিল। ২০২১ সালে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফিরে তালেবান। এরপর থেকে দেশটির বিরুদ্ধে ইসলামাবাদের অভিযোগ, সশস্ত্র সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান বা টিটিপিকে আশ্রয় দিচ্ছে তারা। এ প্রেক্ষাপটে গত সপ্তাহে দুই দেশের মধ্যে সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে কয়েকশ লোক নিহত হন। এ নিয়ে দোহায় শান্তি আলোচনার পর উভয় দেশই যুদ্ধ বন্ধ করে ‘স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতার’ দিকে কাজ করতে সম্মত হয়।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে আলজাজিরা জানায়, কাতারের রাজধানী দোহায় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে এক দফা আলোচনার পর ‘উভয় পক্ষই তাৎক্ষণিকভাবে অস্ত্রবিরতি এবং দুই দেশের মধ্যে স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা সুসংহত করার জন্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সম্মত হয়। দুই পক্ষই আগামী দিনে অস্ত্রবিরতির স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে এবং নির্ভরযোগ্য ও টেকসই পদ্ধতিতে এর বাস্তবায়ন যাচাইয়ের জন্য পরবর্তী বৈঠকেও সম্মত হয়েছে। ফলে উভয় দেশে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা অর্জনে অবদান রাখা সম্ভব হবে।

পাকিস্তানভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে দুই দেশের সংঘাতে অন্তত দুই হাজার ৪১৪ জন নিহত হয়েছে। গত বছর সীমান্ত সংঘাতে উভয় পক্ষের দুই হাজার ৫৪৬ জন নিহত হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে সীমান্তে হামলা বেড়েছে। তা ছাড়া পাকিস্তান আফগান শরণার্থীদের বিতাড়িত করার পর থেকে টিটিপি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। কয়েক দশকের সংঘাত থেকে পালিয়ে অন্তত ৩০ লাখ আফগান শরণার্থী এখন পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছে।

Tags :

International News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025