পাহাড়িদের স্বাধীন নাগরিকের মর্যাদা দাও

পার্বত্য চট্টগ্রাম কি বাংলাদেশের বাইরে? সেখানে খালি চাকমা-মারমাই থাকবে? আমাদের কোনো অধিকার নেই?

কেউ কোনোদিন বলেছে সেখানে চাকমা-মারমারা ছাড়া আর কেউ থাকতে পারবে না?

তাহলে সেখানে আমাদেরকে সেটেলার বলা হয় কেন? স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা যেকোনো জায়গায় বাস করতে পারি। খালি পাহাড়ে গেলেই কেন সমস্যা হয়?

পাহাড়ে গিয়ে জমি কিনে তারপর বাস করো, কে মানা করছে? ধরো তোমার বাড়ি ফরিদপুর বা টাঙ্গাইল। তো তোমাদের গ্রামে সরকার চাকমা-মারমাদের ঢুকিয়ে দিল। তাদের ঘরবাড়ি বানিয়ে দিল। সরকারিভাবে তাদের গুচ্ছ গ্রাম করে দিল। তোমাদের জমি তোমরা এভাবে তাদের দিতে দেবে? কিন্তু কোনো চাকমা যদি নিজের টাকায় সেখানে জমি কিনে বাস করে, তাহলে তোমাদের কি কোনো আপত্তি আছে? পাহাড়ে বাংলাদেশের কয়েকটা বহুজাতিক কোম্পানি জমি কিনে হলুদ, রাবার, চাষ করে। কেউ কি তাদের বাধা দিয়েছে?

তাই নাকি! আমি তো জানতাম সেখানে আমরা জমি কিনতে পারবো না!

সমতলের প্রায় সবাই এটাই জানে। আসলে তাদের এসবই বিকৃত করে জানানো হয়েছে।

তাহলে সেটেলার কারা?

জিয়াউর রহমান নদী ভাঙন মানুষ, ভূমিহীন মুসলমানদের পরিকল্পিতভাবে এই তিন পার্বত্য জেলায় এনে বসতি করে দেয়। ১৯৭৯ সালে শুরু হয় এই কার্যক্রম। এর উদ্দেশ্য ছিল পাহাড়ে মুসলমান আধিপত্য বিস্তার করা। চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, ম্রো, লুসাই, পাংখোয়া, তঞ্চঙ্গ্যা… এই জাতিদের সাংস্কৃতিক ও জাতিগত আধিপত্যকে সংখ্যালঘু করে দিয়ে মুসলমান আধিপত্য প্রতিষ্ঠাই ছিল উদ্দেশ্য। ট্রাকে ভরে ভরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এইসব সেটেলারদের এনে পাহাড়িদের জমিতে তাদের জন্য ঘর তুলে দেয়া হয়। সরকার প্রতি পরিবারকে ২ থেকে ৫ একর জমি, টিনের ঘর, এক বছরের জন্য রেশনের ব্যবস্থা করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ছিল আদিবাসীরা সংখ্যাগুরু। সরকার এত বেশি সেটেলার এনে এখানে আবাসন করে দেয় ও তাদের অধিক জন্মহারে দ্রুত পাহাড়ে আদিবাসীরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়ে যায়। তারা তাদের জমি হারায়। মুসলিম আধিপত্য এখানে সাংস্কৃতিক পরিবেশের মারাত্মক অবনতি ঘটায়। পরিস্থিতি কতখানি খারাপ হয় সেটি বুঝা যায় যখন পাহাড়িরা শান্তিবাহিনী গঠন করতে বাধ্য হয়।

তাহলে পাহাড়িরা বাঙালি মাত্রই তাদের বিরোধিতা করে না?

আগে থেকে যারা সেখানে বাস করে, যাদের নিজেদের কেনা জমি, তাদের নিয়ে তো কোনো প্রশ্ন নেই। পাহাড়ে সেটেলার হচ্ছে অবৈধ বসতি। সমস্যা হচ্ছে স্থানীয় বাঙালি (মুসলমান) তারাও এই সেটেলারদের সমর্থন করে। আসলে এখানে তো মুসলিম আধিপত্য বাস্তবায়নই উদ্দেশ্য। বাংলাদেশে এই পাহাড়ই ছিল অমুসলিম অবাঙালি সংখ্যাগুরু এলাকা। সেটিকে যেভাবেই হোক মুসলমান বানাতেই হবে।

শুনেছি সেখানে বাঙালি হিন্দু ও বড়ুয়া বাঙালি বৌদ্ধরাও সেটেলারদের হয়ে পাহাড়িদের সঙ্গে লাগে?

পাহাড় যদি কোনোদিন চাকমা, মানমা, ত্রিপুরা, ম্রো, লুসাই, পাংখোয়া, তঞ্চঙ্গ্যা… শূন্য হয়ে যায় তখন এই হিন্দু বাঙালি আর বৌদ্ধ বাঙালিদের পরিণতি হবে সমতলের হিন্দু-বৌদ্ধদের মতো। আসলে এমন চোদনা সম্প্রদায় পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই! দেশভাগের সময় যোগেন মন্ডল হিন্দুদের সহিত থাকার চাইতে মুসলমান ভাইদের সহি থাকাই অধিক মর্যাদার বলে তার সম্প্রদায়ের লোকজনকে পাকিস্তানে রাখলো। শেষে তিনি এদের একা ফেলে কলকাতা পালান মুসলমানদের হাতে মারা পড়ার ভয়ে। মুসলিম লীগের তাড়া খেয়ে দেশভাগের সময় যারা পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসামে উদ্বাস্তু হলো, এদের ইতিহাসে মুসলিম লীগ শব্দটি পর্যন্ত নেই! ঋত্বিক ঘটকের সিনেমায় কোথাও মুসলিম লীগের নির্মমতার ইতিহাস নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদী নিপীড়ন সাহিত্যে-সিনেমায় উঠে এলো, কিন্তু পূর্ববঙ্গের হিন্দুরা কোথাও স্থান পেল না। এদের শিক্ষা কোনোদিন হবে না। এই পাহাড়ে এরা ঠিক যোগেন মন্ডলের মত ক্যারেক্টার প্লে করলে তাদের পরিণিত যোগেন মন্ডলের মতোই হবে।

পাহাড়ের সমাধান তাহলে কী?

পাহাড়ে অবৈধ সেটেলার বসতি বন্ধ করতে হবে। সেনা ক্যাম্প উঠিয়ে দিতে হবে। পাহাড়ে আদিবাসীদের ভাষা, সংস্কৃতি, শিক্ষায় প্রাধান্য দিতে হবে। ঋতুপর্ণা চাকমা বাংলাদেশের ফুটবল দলের খেলোয়াড় না? তার অন্যান্য বাঙালি টিমমেটদের জেলায় এভাবে সেনা ক্যাম্প আছে? সেখানে তাদের জেরা করা হয়? সন্দেহ করা হয়? ঋতুপর্ণা কি বাংলাদেশের পতাকার ছাপওয়ালা জার্সি গায়ে খেলে না? তাকে স্বাধীন নাগরিক মর্যাদা দাও। এটাই সমাধান। যদি না দাও, তাহলে ভবিষ্যতের যেকোনো কিছুর জন্য দায় তোমাদের!

Tags :

Susupto Pathok

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025