অতি ভারি বর্ষণ ও বন্যার শঙ্কা


উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে মঙ্গলবার (২৭ মে)। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদরা বলছে, লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা একেবারেই ক্ষীণ। এটি বড়জোর নিম্নচাপ বা গভীর নিম্নচাপ হতে পারে। তবে এর প্রভাবে আগামীকাল দেশে বৃষ্টি বাড়তে পারে।

আবহাওয়া অফিস বলছে, বৃষ্টি সবচেয়ে বেশি থাকতে পারে আগামী তিনদিন অর্থাৎ, বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত। ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকায় দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিছু জেলায় আকস্মিক ও স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কার কথাও জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

এমন পরিস্থিতিতে দেশের চার বিভাগে ভারী বর্ষণের সতর্কতা ও পাঁচ জেলায় পাহাড়ধসের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, সক্রিয় সঞ্চালনশীল মেঘমালার কারণে আজ সকাল ১০ টা থেকে পরের ৭২ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারি (৮৯ মিলিমিটার বা বেশি) বর্ষণ হতে পারে।

অতি ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধ্বসের আশঙ্কাও রয়েছে।
অন্যদিকে লঘুচাপের প্রভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং কক্সবাজারে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

তবে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে তিনদিন ক্রমেই বাড়তে পারে বৃষ্টিপাতের ব্যাপ্তি। আগামীকাল খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগের বেশিরভাগ জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বৃষ্টির পূর্বাভাস সিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। শুক্র ও শনিবার বৃষ্টি ছড়াতে পারে প্রায় সারা দেশেই। তবে আগামী রবিবার থেকে আবার বৃষ্টি কমতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘লঘুচাপটি সৃষ্টি হয়েছে উপকূলের কাছাকাছি। এর মানে এটি স্থলভাগে ওঠার আগে খুব বেশি শক্তি অর্জন করার সময় পাবে না। আবার দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বেশ কিছু অঞ্চল পর্যন্ত চলে আসায় দেশে বর্ষার প্রভাবও শুরু হয়ে যাচ্ছে। এই দুইয়ে মিলে লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কম, বড়জোর নিম্নচাপ বা গভীর নিম্নচাপ হতে পারে। একটু ধীর গতিতে অগ্রসর হয়ে নিম্নচাপ হিসেবে এটি ২৯ মে রাত বা ৩০ মে সকালে স্থলভাগ অতিক্রম করতে পারে।’

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাব যুক্ত হয়ে আগামী তিনদিন (বৃহস্পতি থেকে শনিবার) বাংলাদেশে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হতে পারে। মূলত খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেটে বৃষ্টি বেশি থাকতে পারে।

ওমর ফারুক বলেন, ‘আগামীকাল দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টি থাকতে পারে। তবে পরদিন বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টি অনেকটাই বাড়তে পারে। কম-বেশি বৃষ্টি হতে পারে প্রায় সারা দেশেই। তবে রংপুরে তুলনামূলক কিছুটা কম থাকতে পারে। আগামী ১ জুন থেকে বৃষ্টি অনেকটাই কমে যেতে পারে। সেই সঙ্গে তাপমাত্রাও বাড়তে পারে।’

পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, ‘৩০ ও ৩১ মে চট্টগ্রাম ও সিলেট এবং রংপুরের কিছু অঞ্চলে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে এসব অঞ্চলে নন্দ-নদীর পানি বাড়তে পারে। ফলে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ফেনী জেলা, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা ও হবিগঞ্জ এবং উত্তরাঞ্চলের তিস্তা অববাহিকায় আকস্মিক ও স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।’

Tags :

News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

 People’s Agenda

Quick Links

Copyrights are reserved by NE News © 2025, Jun 16