অনিরাপদ সড়ক : জুনে প্রাণ গেছে ৭১১ জনের

জুন মাসে দেশে সড়ক, রেল ও নৌপথে ৭৪৩টি দুর্ঘটনায় ৭৮০ জন নিহত ও ১ হাজার ৯১৬ জন আহত হয়েছেন। এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে। যা দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে তৈরি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য তুলে ধরে সংগঠনটি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জুন মাসে ৬৭১টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৭১১ জন এবং আহত হয়েছেন ১ হাজার ৯০২ জন। রেলপথে ৫৪টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫৬ জন, আহত হয়েছেন ১৪ জন। নৌপথে ১৮টি দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ১৩ জনের।

এই মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে ১৬০ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭২ জন নিহত ও ৫৮৮ জন আহত হয়েছে, সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে সিলেট বিভাগে ২৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৬ জন নিহত ও ৪৫ জন আহত হয়েছে।

এ মাসে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার ৯৭৪টি যানবাহনের মধ্যে ২৬.৩৮ শতাংশই ছিল মোটরসাইকেল, ২২.৪৮ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ১৬.৯৪ শতাংশ বাস, এবং ১২.৭৩ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। দুর্ঘটনার ধরনে দেখা গেছে, ৪১.২৮ শতাংশ দুর্ঘটনা হয়েছে গাড়ি চাপায়, ২৯.৬৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষে এবং ২১.৩১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ফলে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ১১ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১১৯ জন চালক, ১১০ জন পথচারী, ৪৮ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬০ জন শিক্ষার্থী, ৮ জন শিক্ষক, ১০৫ জন নারী, ৬০ জন শিশু, ২ জন চিকিৎসক, ২ জন প্রকৌশলী, এবং ১২ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী রয়েছেন।

সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৪১.২৮ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২৯.৬৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২১.৩১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৬.৭০ শতাংশ বিবিধ কারনে, চাকায় ওড়না পেছিয়ে ০.২৯ শতাংশ, এবং ০.৭৪ ট্রেন-যানবাহনের সংঘর্ষে ঘটে।

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই মাসে সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৩৯.৬৪ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৩১.১৪ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৩.৫৪ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারাদেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪.০২ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ০.৮৯ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ০.৭৪ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে বলে জানায় সংগঠনটি।

দুর্ঘটনার পেছনে চিহ্নিত প্রধান কারণ:

ঈদের ছুটি কম থাকায় একযোগে অনেক মানুষের রাস্তায় নামা।

মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশার অনিয়ন্ত্রিত চলাচল।

সড়কে রোড সাইন, রোড মার্কিং, ডিভাইডার ও আলোর অভাব।

বেপরোয়া ও বিশ্রামহীনভাবে গাড়ি চালানো, অদক্ষ চালক ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনের আধিক্য।

রাস্তার গর্ত, ভাঙা সড়ক এবং নির্মাণ ত্রুটি।

মহাসড়কে পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী পরিবহন ও চাঁদাবাজির দৌরাত্ম্য।

দুর্ঘটনা রোধে সংগঠনটির ১২ দফা সুপারিশ:

মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশার নিবন্ধন ও আমদানি নিয়ন্ত্রণ।

মহাসড়কে পর্যাপ্ত আলোকসজ্জা স্থাপন।

ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফিটনেস ও দক্ষ চালক গঠনের উদ্যোগ।

ফুটপাত ও সার্ভিস লেনের ব্যবস্থা।

চালকের জন্য নির্দিষ্ট বেতন ও কর্মঘণ্টা নিশ্চিতকরণ।

পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা, রোড সাইন ও মার্কিং স্থাপন।

সড়ক পরিবহন আইন আধুনিকায়ন ও প্রয়োগ।

সারাদেশে মানসম্পন্ন বাস নেটওয়ার্ক গঠন।

নিয়মিত রোড সেফটি অডিট ও উন্নতমানের সড়ক নির্মাণ।

ফিটনেসবিহীন ও পুরনো যান স্ক্র্যাপ করার উদ্যোগ।

প্রশিক্ষণরত চালকদের জন্য ভ্যাট ও আয়কর অব্যাহতি।

Tags :

Staff Reporter

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025