অক্টোবরে ৫৩২ দুর্ঘটনায় নিহত ৫২৮

অক্টোবর মাসে সারাদেশে সড়ক, রেল ও নৌপথে মোট ৫৩২টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫২৮ জন ও এক হাজার আহত হয়েছেন ৩১০ জন। গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শুধুমাত্র সড়কপথে ৪৬৯টি দুর্ঘটনায় নিহত ৪৬৯ জন ও আহত এক হাজার ২৮০ জন । রেলপথে ৫২টি দুর্ঘটনায় নিহত ৪৭ জন ও আহত ৩০ জন। অন্যদিকে নৌপথে ১১টি দুর্ঘটনায় নিহত ১২ জন এবং একজন নিখোঁজ রয়েছেন। দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

অক্টোবর মাসে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে— ১২৬টি দুর্ঘটনায় ১৩০ জন নিহত ও ৩৪৩ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহ বিভাগে— ২০টি দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত ও ৩৭ জন আহত হয়েছেন।

যানবাহনভিত্তিক পরিসংখ্যান

অক্টোবর মাসে ১৭০টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৭৬ ও আহত ১৩৭। দুর্ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ৫০, চালক ১৩৯, পথচারী ১১৯, পরিবহন শ্রমিক ২৭, শিক্ষার্থী ৩৮, শিক্ষক ১৪, নারী ৯৭, শিশু ৪০, আইনজীবী ১, সাংবাদিক ২, প্রকৌশলী ৩ এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মী ছিলেন ১৮ জন।

নিহতদের মধ্যে রয়েছেন— ৪ জন পুলিশ সদস্য, ১ জন র‍্যাব সদস্য, ১ জন বিজিবি সদস্য, ১ জন আইনজীবী, ৩ জন প্রকৌশলী, ১৩৩ জন চালক, ৯৯ জন পথচারী, ৫৮ জন নারী, ৩৫ জন শিশু, ৩৫ জন শিক্ষার্থী, ১৪ জন পরিবহন শ্রমিক, ১৩ জন শিক্ষক ও ১৪ জন রাজনৈতিক নেতাকর্মী।

দুর্ঘটনায় জড়িত যানবাহন

মোট ৭৭২টি দুর্ঘটনাগ্রস্ত যানবাহনের মধ্যে ২৫ দশমিক ৯০ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান, ১৬ দশমিক ০৬ শতাংশ বাস, ১২ দশমিক ৮০ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৮ দশমিক ৪১ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস এবং ৪ দশমিক ২৭ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা।

দুর্ঘটনার ধরন অনুযায়ী দেখা যায়— ৪৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ গাড়ি চাপা, ২৫ দশমিক ১৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৯ দশমিক ৬১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়া, ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ বিবিধ কারণে এবং ০ দশমিক ৬৩ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষে ঘটেছে। অন্যদিকে স্থানভেদে দুর্ঘটনার হার— জাতীয় মহাসড়কে ৪২ দশমিক ৪৩ শতাংশ, আঞ্চলিক মহাসড়কে ২৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ, ফিডার রোডে ২৭ দশমিক ২৯ শতাংশ, ঢাকা মহানগরে ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ, চট্টগ্রাম মহানগরে ১ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং রেলক্রসিংয়ে ০ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

দুর্ঘটনার কারণ

যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, অক্টোবর মাসে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে ছোট-বড় গর্ত সৃষ্টি, মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত চলাচল, মহাসড়কে রোড সাইন ও আলোকসজ্জার অভাব, মিডিয়ান বা রোড ডিভাইডার না থাকা, সড়কে অন্ধবাঁক সৃষ্টি, নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের যান্ত্রিক ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য, উল্টোপথে গাড়ি চালানো, সড়কে চাঁদাবাজি, অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রীবহন এবং বিশ্রামহীনভাবে গাড়ি চালানো।

সুপারিশ

দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক-মহাসড়ক দ্রুত মেরামত করতে হবে এবং রাতে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ ও যানবাহনের ডিজিটাল ফিটনেস ব্যবস্থা চালু করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে ফুটপাত ও সার্ভিস লেনের ব্যবস্থা, সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা এবং চালকদের নির্ধারিত বেতন ও কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে মহাসড়কে পথচারী পারাপার, রোড সাইন ও রোড মার্কিং স্থাপন, সড়ক পরিবহন আইনকে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বাস্তবায়ন, মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও নিয়মিত রোড সেফটি অডিট করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন স্ক্র্যাপ করা, প্রশিক্ষণরত চালকদের ওপর আরোপিত ভ্যাট ও আয়কর মওকুফ করা এবং মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশার আমদানি ও নিবন্ধন নিয়ন্ত্রণের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

Tags :

News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025