অবিচার, ব্যর্থতা আর প্রতিশোধের গল্প ‘মালিক’

এক অভিনেতার রূপান্তরের গল্প ‘মালিক’। এক সামাজিক-রাজনৈতিক পটভূমিতে গড়ে ওঠা একটি চরিত্রের গভীর অভ্যুত্থান। ‘কপালে যদি না লেখা থাকে, আমি নিজেই লিখে নেব’– রাজকুমারের কণ্ঠে উচ্চারিত এই সংলাপ যেন হয়ে ওঠে সিনেমাটির সারকথা। সিনেমায় তাঁকে শুধুই অস্ত্রধারী গ্যাংস্টার হিসেবে দেখানো হয়নি। তাঁর চোখের দৃষ্টিতে, শরীরী ভাষায়, সংলাপে ফুটে ওঠে এক চাপা ক্ষোভ, অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা এক মানুষের আত্মপক্ষ সমর্থনের কাহিনি।

চরিত্রটি নিয়ে রাজকুমার রাও জানিয়েছেন, এটি তাঁকে মানসিক ও শারীরিকভাবে ভেঙে আবার গড়ে তুলেছে। প্রতিটি অ্যাকশন দৃশ্য তিনি নিজে করেছেন, প্রস্তুতি নিয়েছেন মাসের পর মাস।

‘মালিক’ ছবিতে প্রথমবার জুটি বেঁধেছেন রাজকুমার রাও ও মানুষি চিল্লার। পুলকিত পরিচালিত এ অ্যাকশনধর্মী ছবিতে তারা হাজির হয়েছেন একেবারে নতুন রূপে। সাবেক বিশ্বসুন্দরী মানুষি এতদিন গ্ল্যামারাস চরিত্রেই বেশি পরিচিত ছিলেন। তবে এ ছবিতে তিনি হাজির হয়েছেন সম্পূর্ণ গ্ল্যামারহীন, এক বাস্তব ও মানবিক স্ত্রীর ভূমিকায়।

রাজকুমারের স্ত্রী ‘শালিনী’ চরিত্র প্রসঙ্গে মানুষি বলেন, ‘এ চরিত্রের কথা যখন পরিচালক ও লেখক প্রথম কল্পনা করেন, তখন আমি তাদের ভাবনায়ও ছিলাম না। এর আগে কেউ আমাকে এমন চরিত্রে দেখেননি। তবে সৌভাগ্যবশত আমি এ চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছি। নিজের ওপর বিশ্বাস আছে, হয়তো পেরেছি।’ মানুষি প্রসঙ্গে রাজকুমার রাও বলেন, ‘মানুষির মুখে রয়েছে এক অপার ভারতীয় সৌন্দর্য। এমন চরিত্রে ওর আরও কাজ করা উচিত। মানুষি শুধু চরিত্রকে ধারণ করেননি, বরং তাঁর সরলতা, ভাষা ও চাহনির মাধ্যমে দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন।’

সিনেমায় অভিনয় করেছেন টলিউডের প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে দেখা যাবে পুলিশ অফিসারের ভূমিকায়। ছবিতে রাজকুমার ও প্রসেনজিৎ মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়াবেন, যা সিনেমার গতি ও উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলবে।

শুটিং সেটের অভিজ্ঞতা নিয়ে রাজকুমার বলেন, “আমাদের ‘বং কানেকশন’ তো সবারই জানা। পত্র লেখা আমাদের সেই যোগসূত্র। তবে এ ছবিতে আমাদের চরিত্রগুলো এমন, যেখানে একসঙ্গে বসে খাওয়ার সুযোগই ছিল না (হেসে)। বুম্বাদার সঙ্গে কাজ করা সব সময়ই দারুণ অভিজ্ঞতা। তাঁর অভিনয় দক্ষতা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ, তিনি খুব ভালো মানুষ। কোনো শিল্পীর সঙ্গে কাজের ক্ষেত্রে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ ছবিতে তাঁকে একদম আলাদা রূপে দেখা যাবে। তাঁর অভিনয়ে একটি বিশেষ দিক আছে, যা দর্শকদের চমকে দেবে।”

সিনেমার প্রচারে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি তখন মুম্বাইতে একটি অন্য ছবির শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলাম। তখন এ ছবির জন্য ফোন আসে। এরপর পুলকিতের সঙ্গে দেখা করি। তাঁর গল্প বলার ধরন, কাজের প্রতি ভালোবাসা দেখে বুঝেছিলাম। এ ছেলেটি একদিন নিজেকে প্রমাণ করবেই। ৩০ মিনিট আলাপচারিতার পর বলি, আমি কাজটা করছি।’

রাজকুমার রাও প্রসঙ্গে প্রসেনজিৎ বলেন, ‘ও ভীষণ ভালো একজন অভিনেতা। ও বরাবর আমাদের ওর অভিনয়ের মাধ্যমে গর্বিত করেছে। এবারও নিজের চরিত্রে ও মন দিয়ে অভিনয় করেছে।’ নিজের চরিত্র নিয়ে তিনি বলেন, ‘বাইশে শ্রাবণ আর দশম অবতার-এর মতো পুলিশের চরিত্র আমি অনেক করেছি। তবে এ চরিত্রটায় একদম আলাদা একটা চমক আছে।’

সিনেমাটির পটভূমি আশির দশকের আলাহাবাদ। যেখানে ধর্ম, রাজনীতি এবং অপরাধ এক নতুন সমাজের ভিত্তি তৈরি করছিল। সে সময়েই মালিকের মতো এক চরিত্রের জন্ম। যিনি প্রথমে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ান; পরে সময়ের চাপে নিজেই হয়ে ওঠেন নিয়ন্ত্রক, বিচারক এবং শাসক।

‘মালিক’ একটি প্রশ্ন তোলে– নায়ক কে? আর খলনায়কই বা কে? সবশেষে দর্শক বুঝতে পারেন, এটি কেবল একজন অপরাধীর গল্প নয়। বরং এটি সময়, অবিচার, ব্যর্থতা ও প্রতিশোধের গল্প।

রাজকুমার রাওয়ের অনবদ্য অভিনয়, মানুষি ও প্রসেনজিতের সপ্রাণ উপস্থিতি এবং পুলকিতের দক্ষ পরিচালনায় ‘মালিক’ হয়ে উঠেছে এক পূর্ণাঙ্গ, আবেগঘন এবং থ্রিলিং চলচ্চিত্র অভিজ্ঞতা। আগামীকাল সিনেমাটি মুক্তি পেলে পর্দায় ধরা পড়বে শুধু রক্ত, বন্দুক আর সংঘর্ষ নয়, ধরা পড়বে এক মানুষের অন্তরাত্মা, এক অভিনেতার নতুন জন্ম।

Tags :

Entertainment Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

    People’s Agenda

Copyrights are reserved by NE News © 2025