নেত্রীকে কুপ্রস্তাব, যা বললেন এনসিপির তুষার

দলের এক নেত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন তিনি। কোনো অপরাধ করেননি বলে দাবি করেছেন সারোয়ার তুষার।

মঙ্গলবার নিজের ফেসবুকে এক দীর্ঘ পোস্টে এ দাবি করেন তিনি। এ সময় নিজেকে শুধরে নিতে প্রস্তুত আছেন বলে জানান তুষার।

ফেসবুক পোস্টে সারোয়ার তুষার বলেন, আমি ভুলত্রুটির ঊর্ধে না। মানুষ হিসেবে আমার আরো ডেভেলপ করার স্কোপ আছে। যদি কোনো ভুল করি, অবশ্যই আপনারা আমাকে তা জানাবেন, আমি শুধরে নিতে প্রস্তুত আছি। কিন্তু আমি কোনো অপরাধ করি নাই। এ ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল ও ব্যাশিং আমি ডিজার্ভ করি না। কোনো মানুষই করেন না। এই স্মিয়ার ক্যাম্পেইন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমার দলের কেন্দ্রীয় একজন যুগ্ম আহ্বায়ক নারী সহকর্মীকে যেভাবে অপমান করা হচ্ছে, তার সাথে আমার ছবি জুড়ে দিয়ে, জঘন্য কুৎসিত কথাবার্তা লিখে, ভিডিও বানিয়ে আমার আর তার নামে প্রচার করা হচ্ছে। যারা এই কুৎসিত কাজগুলো করছেন, দয়া করে করবেন না। রাজনৈতিক বিরোধিতা রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে রাখার আহ্বান জানাই।

তিনি বলেন, আমার দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগর পর্যায়ের নারী সহকর্মীরা এর আগেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুৎসা ও হ্যারাজমেন্টের শিকার হয়েছেন। এখন আমার সাথে তাদের জড়িয়ে এই নোংরামিগুলো করবেন না। তারা সম্মানিত ও সম্ভ্রান্ত নারী। রাজনীতির বাইরেও তাদের ব্যক্তিগত জীবন আছে৷ তাদের জীবন বিষিয়ে তুলবেন না। আমার চরিত্রহনন করতে গিয়ে তাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করবেন না। এটা আমার অনুরোধ। তারা কোনো দোষ করেননি।

দুই ব্যক্তির ব্যক্তিগত কথোপকথন বিনা অনুমতিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেওয়া জঘন্য কাজ জানিয়ে এনসিপির এই নেতা বলেন, আমি ভুলের ঊর্ধে না। কিন্তু আমার তিন মাস আগের ব্যক্তিগত কথোপকথন কাঁটছাঁট করে পরিপ্রেক্ষিহীনভাবে অনলাইনে ছেড়ে দিয়ে আমাকে অপদস্থ করার মধ্যে কোনো গৌরব নাই।

পূর্বের ইস্যু সম্পর্কে তিনি বলেন, এর আগেও আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ডিপার্টমেন্টের কালচারাল প্রোগ্রামের অভিনয়ের ছবিকে বিকৃত করে আমার বিরুদ্ধে স্মিয়ার ক্যাম্পেইন চালানো হয়েছে। আমি আমার জবান স্রেফ আমার রাজনৈতিক বিরোধীদের রাজনৈতিক সমালোচনায় খরচ করি। ব্যক্তিগত আক্রমণ, চরিত্রহনন ও কুৎসা রটনা করি না। একিলিস ও হেকটরের যুদ্ধে একিলিস হেকটরকে বধ করেন ঠিকই; কিন্তু একজন বীর যোদ্ধার প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে কুণ্ঠা করেন না।

২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চব্বিশের ৭ জানুয়ারির আগ পর্যন্ত আমি লাগাতারভাবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনে রাজপথে অংশ নিয়েছি। ৫ আগস্টের পর আমি বিএনপির ব্যাপারে বেশ সমালোচনামুখর হয়েছি আমার রাজনৈতিক অবস্থানের জায়গা থেকে৷ সমালোচনা ও ভিন্নমত বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রাণভোমরা।

পরিশেষে, সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়ালের অভিজ্ঞতা বীভৎস। কারণ সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল কিছু শুনতে চায় না; তার কাছে আগে থেকেই সিদ্ধান্ত থাকে। আমার শুভাকাঙ্ক্ষী, বন্ধু ও মিত্ররা আমার ওপর ভরসা করেন। আমার প্রতি তাদের প্রত্যাশাও অনেক। আমার কোনো সাময়িক বিচ্যুতির কারণে তারা বিব্রত হয়ে থাকলে তাদের প্রতি আমি দুঃখপ্রকাশ করছি। আমি জানি আমার জড়ানোর মাত্রা কতটুকু, আর কতটুকু আমি অর্গানাইজড ভার্চুয়াল মবের শিকার। আমার নামে ভুয়া স্ক্রিনশট ও কনভার্সেশন ভাইরাল করা হয়েছে। ওই কনভার্সেশনগুলো আমার না। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দল স্বপ্রণোদিত হয়ে আমার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে, আমি লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দেব।

তিনি আরো বলেন, আমি কাউকে কোনো ধরনের হুমকি-ধামকি দেই নাই। দেয়ার মতো পরিস্থিতিতেই আমি নাই। এ ব্যাপারে আমার নামে ফেসবুকে যা প্রচার করা হচ্ছে তা সর্বৈব মিথ্যা। আমি এমনকি আমার এই পোস্টেও সংশ্লিষ্ট অপরপক্ষের পরিচয় প্রকাশ করছি না। যা যা বলার আছে, তা আমি দলের কাছেই লিখিতভাবে বলব। সোশ্যাল মিডিয়ার সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, আমার দলের কেন্দ্রীয় কোনো নারী বা দলের বাইরের অন্য কোনো নারীকে ঘিরে কুৎসা রটনা করবেন না। ভবিষ্যতে আমি আরও পরিশীলিত হওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখব। আমাকে যারা সমালোচনা ও বিরোধিতা করেন, তাদের প্রতিও আমার আহ্বান থাকবে আপনারা রাজনৈতিক বিরোধিতাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও চরিত্রহননে পর্যবসিত করবেন না। বাংলাদেশপন্থার জয় হোক।

এদিকে, নৈতিক স্খলনের অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ জুন) যুগ্ম সদস্য সচিব সালেহ উদ্দিন সিফাতের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নোটিশ প্রদান করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘নৈতিক স্খলনের অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় উক্ত বিষয়ে আপনার সুনির্দিষ্ট অবস্থান ও ব্যাখ্যা আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব মো. আখতার হোসেন জানতে চেয়েছেন। এমতাবস্থায় উত্থাপিত নৈতিক স্খলনজনিত অভিযোগের কারণে আপনার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার লিখিত ব্যাখ্যা আগামী পাঁচ (০৫) দিনের মধ্যে ‘রাজনৈতিক পর্ষদ’ এবং এই বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি বরাবর প্রেরণ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হলো।’

Tags :

News Desk

Most Discussed

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More on this topic

 People’s Agenda

Quick Links

Copyrights are reserved by NE News © 2025, Jun 17