বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদকে গডফাদার আখ্যা দিয়ে বক্তব্য দেওয়ার পর কক্সবাজার ও চকরিয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীরা। গাড়িবহর আটকে রাখার পাশাপাশি ভাঙচুর করা হয়েছে তাদের মঞ্চ।
শনিবার বিকেলে প্রথমে চকরিয়া পৌর শহরের জনতা শপিং সেন্টার চত্বরে এনসিপির পথসভার মঞ্চ ভাঙচুর করা হয়। পরে ভাঙচুর করা হয় কক্সবাজারের সমাবেশের মঞ্চ।
দেশব্যাপী ‘জুলাই পদযাত্রা’ শুরুর পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো হামলার মুখে পড়ল এনসিপি। আগের হামলাটি হয় গোপালগঞ্জে, গত বুধবার।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরউদ্দীন পাটওয়ারী শনিবার দুপুরে কক্সবাজারের সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের দিকে ইঙ্গিত করে তাকে গডফাডার, দখলবাজ ও চাঁদাবাজ আখ্যা দেন। এরপরই প্রথমে চকরিয়ায় পথসভার মঞ্চ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
কক্সবাজার শহরের পাবলিক লাইব্রেরি চত্বরে শহীদ দৌলত ময়দানে এক পথসভায় সালাহউদ্দিনের নাম না নিয়ে পাটওয়ারী বলেন, প্রিয় কক্সবাজারবাসী, আগে নারায়ণগঞ্জে গডফাদার শামীম ওসমান ছিল, এখন শুনছি কক্সবাজারে শিলং থেকে ‘নব্য গডফাদার’ এসেছে। জায়গা জমি দখল করছে, চাঁদাবাজি করছে।
তিনি আরও বলেন, এই ব্যক্তি সংস্কারবিরোধী। পিআর বোঝে না। রাজপথে তাদেরকে ঠেকিয়ে দেব ইশাআল্লাহ।
কক্সবাজার জেলার তৎকালীন বৃহত্তর চকরিয়া উপজেলার পেকুয়া ইউনিয়নের সিকদার পাড়া গ্রামের সন্তান সালাহউদ্দীন আহমেদ। ফলে তাকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে। এরপরই হঠাৎ চকরিয়ায় ভাঙচুর করা হয় এনসিপির পথসভার মঞ্চ। কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখা হয় গাড়িবহর।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলেন, আজ দুপুরে কক্সবাজার শহরে এক সমাবেশে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদকে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দেন। এটি বিএনপির নেতা-কর্মীদের হৃদয়ে আঘাত করেছে।
পাটওয়ারীর ওই বক্তব্যের পর চকরিয়াসহ কক্সবাজার জেলায় বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে নেমে প্রতিবাদ করেন। বিকেল ৪টা থেকে চকরিয়ায় মহাসড়কে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মিছিল শুরু হয়। তারা সালাহউদ্দিনের পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়রা জানান, চকরিয়ায় দুপুর থেকে এনসিপির পক্ষে মঞ্চ তৈরি করে মাইকিং করা হচ্ছিল। হঠাৎ বিকেল পৌনে ৪টার দিকে কিছু লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে মঞ্চে হামলা করেন। এনসিপির মাইকিং করা লোকজনকে তাড়িয়ে দেন।
এদিকে সমাবেশ শেষ হতেই কক্সবাজার থেকে বান্দরবান যাওয়ার পথে চকরিয়া এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা এনসিপির গাড়িবহর রুখে দেন। গাড়িবহর আটকে রেখে কিছু সময় উত্তেজনা সৃষ্টি হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এসময় প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে ছিল জাতীয় নাগরিক পার্টির জুলাই পদযাত্রার গাড়ি বহর।
চকরিয়ায় মঞ্চ ভাঙচুরের খবরের মধ্যেই কক্সবাজারেও এনসিপির মঞ্চ ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপির) যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায় বলেন, এই ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। আমরা পুরনো রাজনীতির বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশ থেকে স্বৈরাচারকে বিদায় জানিয়েছে। বিএনপি ও তার নেতাকর্মীরা যে হামলা করেছে, তা পুরনো রাজনীতি।
কক্সবাজার জেলা সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) অভিজিৎ দাস বলেন, চাকরিয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টির পথসভার মঞ্চ ভাঙচুরের ঘটনায় কেউ আহত হননি। এই ঘটনায় পুলিশ এখনও কাউকে আটক করতে পারেনি।